মোহাম্মদ এ. আরাফাত: ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর দুটো রিপোর্ট আমার নজরে এসেছে। ডেইলি স্টার বাংলা বলছে, ‘ভোটের অধিকার নেই, স্বাধীনতা নেই, মানুষ ঠিকমতো খেতে পায় না’, এটি একজন দিনমজুর নাকি বলেছেন। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘৩ দিন আগে পাঙ্গাস মাছের একটি পিস এবং দেড় প্লেট ভাত খেয়েছিলাম ৬০ টাকা দিয়ে এবং ৬ মাস হয়েছে মাংসের দিকে তাকাই না। অন্য দিকে প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব’।
একটি বাচ্চার ছবি দিয়ে এই রিপোর্টটি করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম আলোর আরেকটি রিপোর্টেই দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে সমস্ত সেক্টরেই কয়েকগুণ এগিয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তারা পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান দেখিয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে, জিডিপির আকার, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, গড় আয়ু, ডলারের দাম, সাক্ষরতার হারÑ সবকিছুতেই বাংলাদেশ অনেক অনেক এগিয়ে পাকিস্তান অপেক্ষা। পাকিস্তান বাংলাদেশ অপেক্ষা ৮ গুণে বড় হলেও তারা আমাদের মতো এগিয়ে যেতে পারেনি। কারণতাদের রাজনৈতিক এবং পলিসিগত দিক দিয়ে পরিকল্পনার অভাব। যার কারণে তারা পিছিয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আরও বেশি এগিয়ে যেতো যদি বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভাবধারার রাজনীতির ধারকবাহক বিএনপি-জামায়াত না থাকতো।
বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো বলেই বাংলাদেশ এতোদূর এগিয়ে আসতে পেরেছে। বাংলাদেশ আজ সুস্পষ্টভাবে পাকিস্তান অপেক্ষা এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নেই বলে চিৎকার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি ফাঁদ। আমেরিকায়ও প্রতিটি শহরে দেখা যায়, কিছু সংখ্যক হোমলেস মানুষ রয়েছে। তো এই রাস্তায় থাকা একজনকে দিয়ে যদি উদাহরণ দেওয়া হয়, ‘এটিই আমেরিকা’, তাহলেই তো তা সঠিক হবে না বা এটি সত্য কথা নয়।
আজকে গোটা বিশ্বের অবস্থা টালমাটাল। গোটা দুনিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই সামান্য ১৪ বছর আগেই এদেশের মানুষের লবন-ভাত জুটতো না দিন শেষে। তারা আজ মাছ, মাংস নিয়ে কথা বলছে। হ্যাঁ বর্তমান বাস্তবতায় আমরা খারাপ সময় পার করছি, তা তো আমরা শুধু একা নই। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বে এই অর্থনৈতিক মন্দ চলমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় দেশটা আজ এতোদূর এগিয়ে না আসলে তো আমাদের অবস্থা পাকিস্তানের থেকেও খারাপ হতো।
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে এমন খাপার অবস্থাতেই থাকতো, তখন আপনারা কী বলতেন? জাকির হোসেন নামের যে শিশুকে নিয়ে এই নিউজ করেছে প্রথম আলো, এই শিশু তো ক্লাস ওয়ানে পড়ে। এই শিশু এতোকিছু বোঝে না এটা সকলে বোঝার কথা। এগুলো যে গণমাধ্যমে স্বাধীনতার নামে চক্রান্ত তা পরিষ্কার। ১৯৭২ সালেও এমনটা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেছিলো, কিছু গণমাধ্যম এমন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলো। এদেশে কিছু মানুষ কষ্টে আছে এবং এগুলো সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রাণবন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন, নিম্নশ্রেণির মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বস্তিবাসীদের ফ্লাট উপহার দিয়েছেন।
আজকের দিনে একজন কৃষক দিনমজুর একদিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে ১২ কেজি চাল কিনতে পারেন। আজ থেকে ১২/১৩ বছর আগে এটি পারতো? এগুলো তো আপনারা বলছেন না। আপনারা একটি শিশুকে ধরে এনে বিভিন্ন অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। এগুলো থেকে সাংবাদিকদের বিরত থাকা উচিত এবং আমাদের সকলে মিলে এগুলো প্রতিবাদ করা উচিত। আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে এবং এটি গোটা পৃথিবিতে হচ্ছে। বাজার সিন্ডিকেট যারা করছে এদের প্রতিহত করতে হবে এবং আপনারা জানেন, এখানে বিএনপি জামাদের চক্রান্ত রয়েছে।
পরিচিতি: রাজনীতিবিদ, গবেষক ও চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। প্রফেসর আরফাতের ফেসবুক পেজ থেকে অনুলিখন করেছেন, খসরুল আলম
আপনার মতামত লিখুন :