মাসুদ রানা: বাঙালী স্মরণাতীত কাল থেকে শ্রদ্ধেয়কে ‘শ্রদ্ধা’, ‘আন্তরিক শ্রদ্ধা’, ‘অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা’ ইত্যাদি জানিয়ে এসেছে। শ্রদ্ধা একটি বিশেষ্য (নাউন), আর এর আগে স্থাপিত ‘আন্তরিক’ ও ‘অকুণ্ঠ’ হচ্ছে বিশেষণ (এ্যাডজেক্টিভ)। এ্যাডজেক্টিভ বা বিশেষণের কাজ হচ্ছে নাউন বা বিশেষ্য কিংবা সর্বনাম বা প্রোনাউনকে বর্ণনা (ডেস্ক্রাইব) করা। তো, আমরা যখন ‘আন্তরিক শ্রদ্ধা’ বলি, তাতে আমরা বুঝাই শ্রদ্ধাটি অন্তর থেকে দেখানো বা খাঁটি। আর, যখন ‘অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা’ বলা হয়, তাতে বুঝানো হয় শ্রদ্ধাটি কুণ্ঠিত হয়ে দেখানো হচ্ছে না সাবলীলভাবেই দেখানো হচ্ছে। ইদানিং কেউ কাউকে শ্রদ্ধা দেখাতে ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ দেখান। এই ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ কথাটির মানে কী? আমি জানি, পশ্চিম বাংলার প্রতুল মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানে ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ ফ্রেইজটি ব্যবহার করেছেন। আর এ-গানটি পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশে মাহমুদুজ্জামান বাবুর কণ্ঠে জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে প্রায় সকলের ‘শ্রদ্ধা’ রাতারাতি ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ হতে শুরু করলো।
‘বিনম্র’ শব্দটির মানে কী? ‘নম্র’ হচ্ছে নরম। আর, ‘নম্র’র আগে যুক্ত উপসর্গ ‘বি’ মানে? অভিধান-মতে, বি-র অর্থ অভাব, বৈপরিত্য, বিকার, আধিক্য। এখানে, বি-তে অভাব নয়, বরং আধিক্যই বুঝতে হবে। সুতরাং, বিনম্র মানে হচ্ছে অধিক নরম।
অর্থাৎ, বিনম্র শ্রদ্ধা হচ্ছে অতি নরম প্রকারের শ্রদ্ধা। ভালো কথা! শ্রদ্ধা দেখাতে যদি ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ তথা অতি নরম শ্রদ্ধা দেখাতে হয়,তাতে কোনো অসুবিধা নেই, যদি ‘অনম্র’ শ্রদ্ধা বলে কিছু থেকে থাকে। কিন্তু শ্রদ্ধা শব্দটির মধ্যেই যেখানে ঔদ্ধত্যের বিপরীতে নম্রতা রয়েছে, সেখানে নম্র কিংবা তারও অধিক বিনম্র শ্রদ্ধা দেখানো প্রয়োজন আছে কি? ‘শ্রদ্ধা’র সাথে মাত্রাগত ও অর্থগত পার্থক্য নির্দেশ করা ছাড়া ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’র দৃশ্যমান প্রাদুর্ভাব আমার কাছে নির্বোধ হুজুগ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। আমার সকল জাতভাই ও জাতবোনের প্রতি অনুরোধ, আপনারা বিশেষণ ব্যবহারে সচেতন হোন! অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিশেষণ দিয়ে শব্দকে দুর্বোধ্য করে তুলবেন না! আর, অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশেষণহীন ‘শ্রদ্ধা’কে অব্যবহারযোগ্য করে তুলবেন না! লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড