শিরোনাম
◈ আইসিসি উ‌ত্তে‌জিত, পা‌কিস্তান ক্রিকেট দল কড়া শাস্তির মুখে পড়তে পা‌রে ◈ নি'ষিদ্ধ দলের লোককে বাসা ভাড়া না দিতে পুলিশের মাইকিং! (ভিডিও) ◈ নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরানোর নির্দেশ তালেবানের, যৌন হয়রানি নিয়েও পড়ানো নিষেধ ◈ ঢাকাসহ বি‌ভিন্ন জেলায় আওয়ামী লী‌গের কর্মকা‌ণ্ডে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?  ◈ টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার! ◈ খেলাফত মজ‌লি‌সের মামুনুল হক হঠাৎ আফগানিস্তান সফরে কেন? ◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা 

প্রকাশিত : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০১:৫৩ রাত
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৩, ০১:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বাধীনতা : বহিবারে দাও শকতি

অজয় দাশগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত: রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’। এর মানে কী আসলে? সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হতে পারেÑ এ আর এমন কী! একটা পতাকাই তো। সে তো একজন শিশুও বহন করতে পারে। কিন্তু এর গুরুত্ব রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতবর্ষেও টের পেয়েছিলেন। পতাকা একটি প্রতীক। প্রতীক মানচিত্রও। আসল কাহিনি থাকে বুকের ভেতর। আমাদের স্বাধীনতার কাহিনি অনেক জোরালো আর বেদনার। আমি জানি না কেন এবং কী কারণে আমরা জাতিা হিসেবে বিভেদকামী। তবে এই বয়সে এসে এটুকু বুঝি,  আমাদের বিভেদের কারণ রাজনীতি আর নেতৃত্ব। এই কথাগুলো এখন স্পষ্ট করে বলাও বিপজ্জনক। বাংলাদেশে ৫২ বছরে পদার্পণ করবে। এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হয়েছিল বাংলাদেশে, করোনার কারণে। সে যাই হোক, ৫০ পেরিয়ে যাওয়া একটি দেশ ও জাতির জন্য এটুকু জানা জরুরি যে, তার ঐক্যহীনতার শিকড় কোথায়।

মজার ব্যাপার এই বাংলাদেশ এবং তার মুক্তিযুদ্ধ আগাগোড়াই রাজনীতির সুবর্ণ ফসল। রাজনীতিই তখন আমাদের পথ দেখাতো। আজ মানুষ যাদের ভয় পায় বা যাদের কথা বিশ্বাস করে না তারাই ছিলেন তখন মুক্তিদাতা। মানে রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলছি। যারা তখন রাজনীতি করতেন তারা মেপে কথা বলতেন। কাজ করতেন অধিক। তখন যে যে দল করুক না কেন, পোশাক, আচার-আচরণ আর কথা ছিল পরিমিত। তাদের আদর্শবোধ ছিল প্রখর। এখন আওয়ামী লীগের সুসময়। এমনই সুসময় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলাও যায় না। যাক বা না যাক এই আওয়ামী লীগই কিন্তু দেশ স্বাধীনের মূল স্তম্ভ। তাদের নেতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতো বছর জেল খেটেছিলেন আর কী কী ত্যাগ করেছিলেন তার প্রমাণ ইতিহাস। 

সবশেষে সপরিবারের প্রাণ দেওয়া বঙ্গবন্ধ পরবর্তী সময়ে চার জাতীয় নেতার জীবন জানলেই আমাদের স্বাধীনতা জানা হয়ে যায়। আমি একবারও তাদের কথা অস্বীকার করি না, যারা বেতারে ঘোষণা পাঠ করেছিল বা নানা ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই যখন ইতিহাসের দখল নেওয়ার জন্য ঘোষক হয়ে উঠতে চাইলো বা তাকে প্রধান করার জন্য অন্যেরা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। যখন সেনা শাসক এরশাদ গদীতে তখন তিনি দেখলেন এবং বুঝে নিলেন যে এটা তো মজার খেলা। ইচ্ছে হলেই খেলা যায়, তখন আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খেলতে শুরু করলেন। এর ফাঁকে নানা তত্ত্ব আর উদ্ভট যতো কাণ্ড হাজির। জান দেওয়া মানুষদের খাটো করার জন্য তিরিশ লাখ না তিন লাখ কতজন মুকতিযোদ্ধা কতজন আসলে যুদ্ধ করেছিলেন এসব তর্ক ও ভিত্তি লাভ করে ফেললো। অথচ কথা ছিল যদি একজনও প্রাণ দিয়ে থাকেন, একজন মা-বোন ইজ্জত দিয়ে থাকেন, সেটাই আমাদের জন্য বেদনার। আমাদের জন্য শোকের।

আমরা তা মানলাম না। আজকে আরেক সমস্যা। দুনিয়ার সব দেশ এখন এগোচ্ছে। আমরাও এগোচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি যখন ধাবমান তখন বাকস্বাধীনতা ও ইতিহাস বিষয়ে কথা বলা বন্ধ হবার পথে। এটা স্বাধীন কোনো জাতির জন্য ভালো হতে পারে না। অন্যদিকে বিরোধিতার চেহারাও ভয়াবহ। আমি আজকাল কোনো বিরোধিতা দেখি না, যা দেখি তার নাম অপপ্রচার আর কুৎসা। এটাও আমাদের সমাজ বিকৃতির ফসল। খেয়াল করবেন, কোনো শুভ বিষয় বা ভালো কিছু আজকলা মানুষকে টানে না। সামাজিক মিডিয়া চালু হবার পর সবকিছু চলে গেছে অপপ্রচারের দখলে। যারা এখন মাথার ওপর আছেন তাদের দেখলে করুণা হয়। করুণা এই কারণে একটা সময় আমাদের সমাজ যখন অবরুদ্ধ মানুষ কথা বলতে ভয় পেতো বা সামাজিক জগত অন্ধকারে থাকতো তারা পথ দেখাতেন। এখন এরাই অন্ধ।

৫০ বছরের বাংলাদেশ আসলে কোন পথে যাবে বা কোনটি তার পথ? এই জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক। তার চেয়েও জরুরি আমাদের অন্ধকারত্ব আর পরাধীনতার চিহ্ন গুলো মুছে দেওয়া। যেকোনো সাধারণ মানুষ জানেন ধর্মের নামে পোশাক খাবার আচরণ সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িকতা জেঁকে বসেছে। মানুষের চিন্তার জগত আচ্ছন্ন করে রেখেছেন ওয়াজকারীরা। রাজনীতিবিদদের ভূমিকাও শুভ নয়। তাদের উদ্দেশ্য ঝগড়াঝাটি। টিভি চ্যানেল মিডিয়াজুড়ে খালি নেগেটিভিটির প্রচার। একবারও কেউ ভাবে নাÑ এসবের কী প্রভাব পড়ে তরুণ-তরুণীদের মনে। কী ভাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম? আজ স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে এদেশের সেরা ক্রিকেটার আমাদের গর্ব সাকিব আল হাসানের কাণ্ড দেখে আমরা লজ্জিত না হয়ে পারি না। আমাদের আইকন নামে পরিচিত লেখক ক্রিকেটার সেলিব্রেটিদের দেখে তারুণ্য কী শিখবে? যে স্বাধীনতার মানে হচ্ছে দেদারসে টাকা কামানো। কোনো লিমিট ছাড়া টাকার পেছনে ঘোরা? আর যৌনতা বা তেমন রগরগে বিষয়ে সময় কাটানো? তাদের দোষ দিয়ে কী লাভ? নেতা  পর্যায়ের লোকজন ভিডিও ভাইরালে অডিও টেপে যে সব কথা বলেছেন তা শুনলে মনে হয় নৈতিকতার স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচার আমাদের জীবনে একাকার হয়ে গেছে। এতো লোভ-লালসা কিংবা এতটা উগ্রতা স্বাথীন বাংলাদেশের শুরু থকে কয়েক দশক কেউ ভাবতেও পারেনি।

লোভের হাত পা যতো বড় হয়েছে ততো আমাদের স্বাধীনতার গর্ব সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ভারতের সাহায্য সহযোগিতা পাশে দাঁড়ানো, আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হতো? না স্বাধীনতা পেতাম আমরা? অথচ কৌশলে একটা প্রজন্মের মাথা বিগড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের এখন দৃঢ় বিশ্বাস একবার বন্ধু হলেও কেউ না কি চিরকাল বন্ধু থাকে না। হয়তো। কিন্তু রাশিয়ার বেলায় কি বলবো? যে রাশিয়া বা তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকলে আমেরিকা, চীন, পাকিস্তান মিলে ভারতের বারোটা বাজিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের টুঁটি চিপে শেষ করে দিতো তার বেলায় আমরা কি আসলেই কৃতজ্ঞ? একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলা উচিত এসব ঠুনকো কৃতজ্ঞতায় তাদের কিছু যায় আসে না। এই দেশগুলো আমাদের দেশের চাইতে এগিয়ে। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব শিথিল হলে আমরাই পড়বো আমেরিকা, চীনের খপ্পরে। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রলঙ্কাসহ অনেক দেশের দিকে তাকালেই আমরা বুঝবোÑ তাদের সঙ্গে দোস্তি করার ফল কী বা ভবিষ্যতে কী হতে পারে?

আমি মনে করি, আমাদের এই স্বাধীনতা দিবসে এসব বিষয় মাথায় রাখা দরকার। অভ্যন্তরীণ ঝগড়া ফ্যাসাদ আর অনৈক্য দূরীভূত করার বিষয় এখন জরুরি। ৫০ বছর পর ও যদি সবকিছু আইন করে কানুন বানিয়ে মানাতে হয় তাহলে সরকার পরিবর্তনের পর আবারও অন্ধকার গ্রাসী ইতিহাসের দুঃস্বপ্ন থেকেই যাবে। কে নিশ্চিত করবে নতুন কোনো জোট এসে আবার জাতির জনক সহ ইতিহাসের গায়ে আঁচড় কাটবে না? এবার তা হলে কী পরিমাণ ভয়াবহভাবে তা হতে পারে সেটাই বরং দুর্ভাবনার বিষয় ।

শেষ কথাটা এই, আমাদের স্বাধীনতার জন্য শুধু দেশের মানুষজন লড়াই করেননি। জর্জ হ্যারিসন রবিশংকর থেকে অস্ট্রেলিয়ান মুক্তিযোদ্ধা ওডারল্যান্ডের মতো মানুষেরা লড়েছিলেন। লড়েছিলেন ফ্রান্সের এক তরুণ বিমান হাইজ্যাককারী। নিজের জীবনবাজি রেখে এরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছিলেন। যে সব বাঙালি জান হাতে যুদ্ধ করেছিলেন যাঁরা বীরাঙ্গনা হয়েছিলেন তাঁদের ত্যাগ আর বীরত্ব শুধু ইতিহাসে থাকলে আমরা টবে রাখা গাছের মতো শুকিয়ে মরবো। আমাদের স্বাধীনতা ও ধুঁকবে। আজ বাংলাদেশের ঝলমলে উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটি ফের মনে রাখতে হবে। দেশ মানে ভূখণ্ড আমাদের। পতাকা আমাদের। সঙ্গীতও আমাদের হয়েছে। এখন তা বহন করার শক্তি দরকার। মানুষই পারে তা করতে তা করে দেখাতে। ইতিহাস বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ আর আত্মবিশ্বাস থাকলে দেশ ও প্রবাসের বাংলাদেশিরাই পারে স্বাধীনতাকে আরও অর্থবহও চমৎকার করে তুলতে। এই পারাটাই হোক ৫২ বছর পর আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা। সিডনি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়