শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৩, ০৬:৪১ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২৩, ০৬:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডায়াবেটিস: কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর

ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুব

ডা. এস এম ইয়ার ই মাহাবুব: 

[২] ডায়াবেটিস কী? 
উত্তর : ডায়াবেটিসÑ যা ডায়াবেটিস মেলিটাস (ডিএম) নামেও পরিচিত, একটি হরমোন জাতীয় রোগ। এই রোগে রক্তের শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন না করলে, অথবা শরীরের কোষগুলো সঠিকভাবে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। যদি সঠিকভাবে  চিকিৎসা না করা হয়, তবে ডায়াবেটিস রোগী তার হার্ট, কিডনি ও ব্রেইনের রোগসহ  অনেক স্বাস্থ্যগত  জটিলতায় ভুগতে পারে। 

[৩] ডায়াবেটিস কী কারণে হয়?
উত্তর : ডায়াবেটিস একটি হরমোনের রোগ। এই রোগে শরীরের গ্লুকোজকে বিপাক করার ক্ষমতা কমে যায়। যখন শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোন এর ঘাটতি দেখা দেয় বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহ ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামক একটি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে আরেকটি হরমোন নিঃসৃত হয় যা গ্লুকাগন নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে এই হরমোনের আধিক্য দেখা যায়। 

[৪] প্রি-ডায়াবেটিস কী?
উত্তর : প্রি-ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিস হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার মতো যথেষ্ট নয়। প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, একইসঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাÑ যেমন হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগের আশঙ্কাও বেশি থাকে। প্রি-ডায়াবেটিসকে একটি সতর্কতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের মতো জীবনধারা পরিবর্তন ডায়াবেটিসের সূত্রপাতকে বিলম্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া, ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকা, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা। প্রি-ডায়াবেটিসের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে রোগীরা  তৃষ্ণা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ক্লান্তি অনুভব করে থাকে।

[৫] টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য কী? 
উত্তর : টাইপ ১ ডায়াবেটিস অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন-উৎপাদনকারী বিটা কোষের ক্ষতির ফলে হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরে  ইনসুলিনের অভাব হয়। এটা দুই রকমের হতে পারে, যথা অটো-ইমিউন ও ইডিওপ্যাথিক। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের বেশির ভাগই অটো-ইমিউন প্রকৃতির। টাইপ-২ ডায়াবেটিস শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে গেলে হয়ে থাকে। সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রাও কমে যেতে পারে। ইনসুলিনের প্রতি শরীরের টিস্যুগুলির ত্রুটিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া ইনসুলিন রিসেপ্টরের ত্রুটি থেকে হতে পারে। শতকরা ৯৫ শতাংশ ডায়াবেটিসই  হলো  ডায়াবেটিস টাইপ-২। 

[৬] ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি-লিভারের মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে? 
হ্যাঁ, ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) নামেও পরিচিত। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এতে লিভারে বা যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। এনএএফএলডি যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে পরে লিভারে প্রদাহ, ক্ষত এবং এমনকি সিরোসিসও হতে পারে। 

ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি লিভারের মধ্যে সঠিক যোগসূত্র সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি। তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ফলে রক্তপ্রবাহে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা ফ্যাটি লিভার তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। আবার ফ্যাটি লিভার নিজেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে পারে।  যখন লিভার চর্বি দিয়ে ওভারলোড হয়ে যায়, তখন এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যা রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে আরও বর্ধিত করে।

[৭] কেন ডায়াবেটিস বিপজ্জনক রোগ?
উত্তর : ডায়াবেটিস একটি বিপজ্জনক রোগ। কারণ সঠিক চিকিৎসা করা না হলে এটি বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।  রক্তে অধিক শর্করার কারণে রক্তনালী এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব, স্নায়ুর ক্ষতি এবং হাতে পায়ে আলসার হয়ে অঙ্গচ্ছেদের কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস শরীরে জীবানু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। উপরন্তু ডায়াবেটিস মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে হতাশা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ও জটিলতা প্রতিরোধ করার উদ্দেশে  তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।

[৮] ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কী? কীভাবে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
এই রোগের চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করার জন্য একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা এ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নেওয়া, যাতে রোগী নিয়মিত তার রক্তে শর্করার নিরীক্ষণ, ওষুধ বা ইনসুলিন থেরাপি এবং জীবনধারা পরিবর্তন যেমন ডায়েট এবং ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। 

ডায়াবেটিস সম্পর্কে যতোটা সম্ভব জানতে হবে এবং এটি শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া, একটি ডায়াবেটিস সেন্টার বা হাসপাতালে নথিবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি আবশ্যক। সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ধূমপান ত্যাগ করার মতো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।  সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগী পরিপূর্ণ ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়।

লেখক: ইন্টারভেনশনাল ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজিস্ট, সিসিডি (বারডেম), সহযোগী অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়