শিরোনাম
◈ বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর দ্বিতীয় দিনেও ডলারের দাম স্থিতিশীল ◈ গত নয় মাসে গণমাধ্যম ভোগ করছে অভূতপূর্ব স্বাধীনতা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব (ভিডিও) ◈ কাশ্মীর ইস্যু নি‌য়ে আ‌লোচনায় বস‌তে  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ◈ বাংলাদেশের ১০ জন কাবা‌ডি খেলোয়াড় চায় ভারত ◈ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলো দক্ষিণ সিটি (ভিডিও) ◈ কাস্টমসের কলম বিরতিতে বেনাপোল বন্দরে অচলাবস্থা ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলছে, আসছে কয়েক লাখ নতুন নিয়োগের সুযোগ ◈ সাড়ে তিন বছর পর আদালতের রায়ে বিজয়ী ঘোষণা, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় এলাকাজুড়ে উৎসব জামায়াত নেতার ◈ কাকরাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাল আন্দোলন, ২৫টি বাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী যোগদান ◈ ভাতা তালিকায় যুক্ত হচ্ছে লাখো নতুন সুবিধাভোগী, বাদ পড়বেন অযোগ্যরা

প্রকাশিত : ০৩ মার্চ, ২০২৩, ০২:৩৪ রাত
আপডেট : ০৩ মার্চ, ২০২৩, ০২:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোজা আর ‘সিয়াম’ এক নয়

জিল্লুর রহমান

জিল্লুর রহমান: আল্লাহ কর্তৃক আদম (আ.)-কে নিষিদ্ধ ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশই প্রথম সিয়ামের বিধান। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববতীদের দেওয়া হয়েছিলো, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো’।- সুরা বাক্বারা। প্রচলিত তাফসিরে সিয়ামের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশে পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম ‘সাওম’। তবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্ব থেকে শুরু করে সূর্যস্ত পর্যন্ত সিয়ামের নিয়াতে একাধারে এভাবে বিরত থাকলেই তা ‘সিয়াম’ বলে গণ্য হবে। 

এই পুরো ধারণাটিই কোরআনের মূল বক্তব্যের বিরোধী, কোরআনে ‘সিয়াম’ শব্দটির অর্থ অনেক ব্যাপক, মূল অর্থ বিরত থাকা। যে যে বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে তাই ‘সিয়াম’। নির্দিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, এটাই সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য করুন বলা হয়েছে সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছে, এই বিধান কিন্তু শুধু ত্রিশ দিনের জন্যে নয়, ৩৬৫ দিনের জন্য। ত্রিশ দিন হচ্ছে অনুশীলনের সময়কাল, যা ফরজ। সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য ‘তাকওয়া’ অর্জন করা, বান্দাগণ যখন সর্বদা আল্লাহ তা’য়ালাকে হাজির-নাজির জেনে তাকওয়ার জীবন ধারা অবলম্বন করেন, গোনাহ থেকে সর্বদা সতর্কতার সাথে পরহেজ করে চলেন, এমনকি সন্দেহজনক জায়েজ কাজও পরিহার করেন তখন তারা মুত্তাকীনগণের স্তরে দাখিল হন। 

ধরুন আপনার কানে একটি অশ্লীল গানের সুর ভেসে এলো, আপনি সেই গানের সুরের প্রতি মনোযোগী না হওয়াটাই তাকওয়া, এটাই সচেতনতা, এহেন কাজ থেকে বিরত থাকাই ‘সিয়াম’। এই ‘সিয়াম’ নিশ্চয় প্রতি মুহূর্তের জন্য। আবার ধরুন, আপনার ৪ বিয়ে করা জায়েজ, কিন্তু আপনি স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবেন না, তখন একাধিক বিয়ে থেকে বিরত থাকাই সাওম। চার বিয়ে পর্যন্ত  কিন্তু জায়েজ ছিলো, কিন্তু সাওমের বিধান আপনাকে এখানে মেনে চলতে হবে। সাওমের বিধান মেনে চলার মাধ্যমেই তাকওয়া অর্জন করতে হবে।

তাফসিরের বর্ণনায় এসেছে , আদম (আ.)-এর সৃষ্টির পর তাঁকে ‘নিষিদ্ধ ফল’ বা গাছের কাছে যেতে আল্লাহ বর্জনের বা বিরত থাকার যে আদেশ দিয়েছেন সেটাই মানব ইতিহাসের প্রথম সিয়াম সাধনা। ইতিহাসে আরো পাওয়া যায়, আদম (আ.) সেই সিয়ামের বিধান ভাঙার কাফফারা স্বরূপ ৪০ বছর সিয়াম পালন করেছেন। রোজা আর ‘সিয়াম’ও এক বিষয় নয়, যদিও সিয়ামের সমার্থক শব্দ হিসেবেই রোজার শব্দের ব্যবহার হয়। ‘সিয়াম’ এবং রোজা অর্থগতভাবে এ দু’টি শব্দের রূপ এক মনে হলেও কার্যত বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোরআনে সিয়াম শব্দ: ৯ বার ৭টি আয়াতে, সাওম এসেছে ২ বার। আর কোরআনে রামাদান শব্দটি একবার এসেছে সুরা বাক্বারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে, সেটা মাস হিসেবে বলা হয়েছে।

‘সিয়াম’ এর প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা রোজা শব্দের ব্যবহার করি, যা মূলত ফার্সি ভাষা, রোজা শব্দের অর্থ আর সিয়ামের অর্থ এক নয়। সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া, তাকওয়া মানে একধরনের সচেতনতা, তাকওয়ার অর্থ ভয় অনুবাদ করা হয় যা সঠিক নয়, কোরআনে ‘খওফ’ শব্দটিকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয় অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

‘তাকওয়া’ অর্জন কেন গুরুত্বপূর্ণ? আমরা পাঁচ ওয়াক্ত-নামাজ পড়ি, আবার বাসায় এসে পরিবারের সাথে, কাজের লোকের সাথে, এমনকি নিজের সন্তানের সাথে খারাপ আচরণ করি, এমটি হয় তাকওয়া না থাকার কারণেই। তাকওয়া না থাকলে মানুষ ঘুষ খেয়ে হজ্ব করে এবং হজ্ব করে থেকে এসে আবার ঘুষ খায়। তাকওয়া নেই এমন দাড়িওয়ালা পণ্যে ভেজাল দেয়, কমদামী মাল বেশি দামে চালিয়ে দেয়। অফিসে লুকিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করে, নামাজ পড়তে বের হয়ে আর সহজে কাজে ফেরত আসে না ইত্যাদি। ‘তাকওয়া’ হচ্ছে প্রতিমুহূর্তের সতর্কতা, সচেতনতা।

এই সচেতনতা ও সতর্কতা এই জন্যে যে, একজন শক্তিমান এসব কিছুই দেখছেন এবং এর জন্যে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। সিয়ামের মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া, এটি অর্জন না হলে ‘সিয়াম’ উপবাসে রূপান্তরিত হবে। মহান আল্লাহ ‘সিয়াম’ পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দিন।
 লেখক: সাংবাদিক। ইমেইল: ুরষষঁৎংযড়সড়ু@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়