শিরোনাম
◈ নির্বাচনকালীন যে কোনো সহিংসতা কঠোরভাবে দমন করা হবে: আইজিপি  ◈ গাজার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়ল ◈ গাজীপুরে ককটেল ফাটিয়ে ২টি কাভার্ডভ্যানে আগুন ◈ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার মারা গেছেন ◈ দেশজুড়ে বিএনপির ১২ ঘণ্টার হরতাল শুরু ◈ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক চাপ আছে: ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ◈ পিটিআই চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন ইমরান খান ◈ নির্বাচনে বাধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা নিরব কেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের ◈ ২৮০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল বিএনপি ◈ জনগণ স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মুক্ত হস্তে চুরি-পাচার!

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে যে ব্যাবসায়িক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করে সেই কোম্পানির নাম এস আলম গ্রুপ। নিয়ন্ত্রক হয়ে নিয়ন্ত্রকের সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে। নিয়ম অনুসারে ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা তুলতে পারত। গ্রুপটি, ব্যাংকের বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনায় তার প্রভাব ব্যবহার করে এই বিপুল অংকের ঋণ নিয়েছে। এই এস আলম গ্রুপ সরকারের কৃপায় এই ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়েছে। এখানেই শেষ না। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ধারণা, এই গ্রুপ নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি তুলে নিয়েছে। এইসব টাকা কিন্তু গ্রাহক অর্থাৎ সাধারণ মানুষের টাকা। শুনলাম এই টাকা দিয়ে সে নাকি সিঙ্গাপুরে ৫ তারকা হোটেল কিনেছে। অর্থাৎ ঋণের পুরো টাকা বিনিয়োগের নামে দেশের বাইরে পাচার করে ফেলেছে। বাংলাদেশিরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারার আইনও নতুন। এই আইন ব্যবহার করে সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকোও বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। এইসব টাকা কি আর ফেরত আসবে? দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে বেকার। নিজ দেশে বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে বিনিয়োগের পারমিশন দেওয়া কি অর্থ পাচারের উদ্যেশ্যেই করা হয়নি? 

ইসলামী ব্যাংকে এই লংকাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছে তার একটু ধারণা পাওয়া যায় প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে। ‘ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক (তৎকালীন) গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক রাখার পক্ষে ছিলেন না। এরপর ২০২০ সালের মার্চে ওই পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বিবেচনায় পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিলো, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এ কথাও বলছেন এখন, অনিয়মের সুযোগ করে দিতেই ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাগুজে কোম্পানির নামে যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আদলেই। ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মের ঘটনা সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করছেন ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটি থেকে কী পরিমাণ অর্থ এখন পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। - প্রথম আলো।  এই লেখাটি পড়লেই বোঝা যায় এস আলম গ্রুপ যে ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিতে পারল তার পেছনে একটি মাফিয়া চক্র কাজ করেছে। নিশ্চই এমন কারো অঙ্গুলি নির্দেশ ছিল যা কারো পক্ষে অবজ্ঞা করা অসম্ভব ছিল। নচেৎ এহেন লংকা কান্ড ঘটা অসম্ভব। 

প্রত্যেক সরকারের কিছু প্রিয় গ্রুপ বা কোম্পানি থাকে যারা সরকারের কৃপা পেয়ে রাতারাতি চুরি ডাকাতি করে বিশাল বিত্ত বৈবভার মালিক বনে যায়। এস আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ তেমনি গ্রুপের উদাহরণ। এর আগের বিএনপি সরকারেও এমন কিছু গ্রুপ বা মানুষ ছিল। এইসব গ্রুপ বা ব্যক্তি আদানি গ্রুপের বাংলাদেশি ভার্সন। এরা সরকারকে ব্যবহার করে দেশকে লুটেপুটে খায়। যদি এস আলম গ্রুপ ৩০ হাজার কোটি টাকা না নিতো, যদি পি কে হাওলাদার যদি ৯ হাজার কোটি টাকা না মারতো, যদি আব্দুল হাই বেসিক ব্যাংকের টাকা না চুরি করত, যদি হলমার্ক টাকা না লোপাট করত দেশের আজকে এতো বড় সংকট থাকত না। দেশের আজকের সংকট যতটা না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তার চেয়ে বেশি বড় কারণ মুক্ত হস্তে চুরি পাচার।

লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়