মঞ্জুরে খোদা টরিক: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস দু’টি। করোনাকালেও প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়েছে। রপ্তানিমুখী খাতও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ধারাবাহিকতা রেখেছে। তাহলে এই সংকটের কারণ কী? বাংলাদেশে হঠাৎ করেই আমদানি ব্যয় ৫৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই আমদানি-রপ্তানির আড়ালে পাচার হয় হাজার কোটি টাকা। বিএফআইইউ কর্মকর্তা বলছেন, ‘২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে কোনো কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে।’ তার মানে, এই বাড়তি অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই পাচারের কারণেই ডলারের বড় অংশ দেশে আসছে না। আমলা-ব্যবসায়ী-রাজনীতিকরা দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অবৈধ অর্থও বিদেশে পাচার করেছে। তারা সুইস ব্যাংক বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সে অর্থ জমা রাখছে। সেখানে সম্পদ সৃষ্টি ও ব্যবস্যা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছে। জিএফআই বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৮.২৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে।
আর সরকার আইএমএফ এর কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ করছে। প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হয় তার প্রায় দ্বিগুন। ৯০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। ৩২ বছরে খেলাপি বেড়েছে ২৯ গুণ। যদিও আইএমএফ বলছে, ‘বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমান আরো বেশি, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।’ অর্থনীতিবিদরা বলেন, ঠিক মতো হিসেবে করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশে কী পরিমাণ কালোটাকা আছে তার কোনো হিসাব নেই। টিআইবিরর প্রতিবেদন বলছে, তার পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশ হবে।
কী বিপুল দুর্নীতির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটা কারণ, তবে সব দায় তাদের কাধে চাপানো ঠিক নয়। শ্রীলঙ্কার সংকট শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধর পূর্ব থেকে, মার্চ-এপ্রিলে। আর ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। আইএমএফ দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ করতে শর্ত দিয়েছে। কিন্তু এই জন্য তাদের কেনো শর্ত দিতে হবে? এটা তো সরকারেরই করার কথা। অর্থপাচার হয়ে কোথায় যায়Ñ নিশ্চয়ই আইএফএম জানে, এক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ কী?
সাধারণ মানুষ দুর্নীতি ও দেশের সম্পদ লুট করেনি। বরং দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও পাচারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে এই সংকট মোকাবেলা করুন। ঋণ নিয়ে জনগণকে বিপদে ফেলার নৈতিক অধিকার আপনাদের নেই। লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনার মতামত লিখুন :