দীপক চৌধুরী: এদেশে শক্তিশালী বিরোধী দলের অবস্থান নেই। খুবই দূর্বল। তারা সুসংগঠিত নয়। শুধু ‘চাপাবাজি’ দিয়ে রাজনীতি হয় না। গত কয়েকবছরে এ সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক হাজার বক্তৃতা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আজো বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। বিদায় ঘন্টা বাজিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো ‘রেজাল্ট’ নেই। মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে দলটি কী চায়? কারা ওই দলের সঙ্গে রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী সঙ্গে নিয়ে কি দল চালানো যায়? বিএনপির চরিত্র, কথাবার্তা ও ভাষণ কোথাও স্বাভাবিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আমাদের কাছে অস্ত্র নেই, আছে হাত ও কণ্ঠস্বর। গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ) চাষাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আসলে রাজনীতি করতে হলে হাতে অস্ত্র লাগে তা জানতাম না। অবশ্য অস্ত্রের রাজনীতি বিএনপি ভালো বুঝে বলেই হয়ত তার এ কথা।
১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র কীভাবে হয়? অথচ তারা সেই ‘গণতন্ত্র’ চায়। বিএনপি নামের দলটি যতই নাটক তৈরি করুক কাজ হবে না। কারণ মানুষকে তাদের কথাগুলো ‘খাওয়াতে’ হবে। যতই পায়তারা করুক না কেন বিএনপির বোঝা উচিৎ পছন্দমত নির্বাচন কমিশনের অধীনে এদেশে কোন নির্বাচন হবে না। এদেশের মানুষ মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে। নিরপেক্ষ বলতে কিছু নেই। ভীষণ হাস্যকর কথার ছড়াছড়ি নির্বাচনের আলোচনায়। মির্জা ফখরুলের ভাষায় ‘দাবি আদায়ে সকল দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে। যে কোন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সংগঠন যে কেউ এই সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে আমরা তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবো। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্ধারণ হবে। আমরা বারবার যুগপৎ আন্দোলনের কথাই বলছি। আমাদের রাস্তা খোলা।’ কখনো তারেক রহমান বন্দনা, কখনো খালেদা জিয়া বন্দনা ছন্দ করে। আর কখনো জামায়াত বন্দনা জনগণের অপছন্দ। “এই সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে” বলে যে দাবি তোলা হয় এটা অলোরমুখ কোনোদিনই দেখবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে আসা অসম্ভব। সংসদে বিল তুলতে হবে। সেই বিল পাস করতে হবে। যা কখনো সম্ভব নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল কি না এটা বিএনপির লোকেরা ভুলে গেছেন। এর ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। সেই সুযোগ বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির নেই। আর আওয়ামী লীগ তো চায়ই না এই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি। তাহলে? সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয়, হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওয়াজ আর শুনতে চায় না মানুষ। সুদীর্ঘকাল থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে আসা দলটি ইদানিং পুলিশের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত গরম। পুলিশকে বিভিন্ন কারণে দায়ী করছে তাদের নেতারা। কিন্তু তারা কেনো বুঝতেই চাইছেন না যে, পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে কি পুলিশ বসে থাকবে? পুলিশকে কখনও আক্রমণ করা না হলে পুলিশ আগ বাড়িয়ে কিছু করে না। অন্তত এ আমলে। আগ বাড়িয়ে ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করবে নাকি পুলিশ?
বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, রাজধানীর পুরানাপল্টনে যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতারা বক্তৃতা করছিলেন সেখানে বিএনপি-ছাত্রদলের হুড়োহুড়ি-মারামারিতে মঞ্চ ভেঙ্গে গেছে। যারা সঠিকভাবে নিজেদের সমাবেশ করতে পারে না, মারামারি করে এবং সমাবেশ করতে গিয়ে মঞ্চটা ভেঙ্গে ফেলে তারা কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে? মির্জা আব্বাসসহ বিএনপি’র যেসব নেতা বোরকা পরে জামিন নেয়ার জন্য হাইকোর্টে যান, তারা দেশ চালাবেন কীভাবে?
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :