মাসুদ রানা: সিলেটে একটি জনপ্রিয় ভুল ধারণা হচ্ছে ‘নাগরি ভাষা’। এবিষয়ে আমি বেশ আগে সবিস্তার লিখেছি। আজ এক বন্ধু নাগরিকে তার মাতৃভাষা দাবী করে পৌস্ট দিয়েছেন লক্ষ করে আমি পুনরায় লিখছিঃ ‘নাগরি’ বলতে কোনো ভাষা পৃথিবীতে কখনও ছিলো না এবং এখনও নেই। নাগরি একটি স্ক্রিপ্ট বা লিপির নাম, যা দিয়ে প্রথম প্রাকৃত ও পরে সংস্কৃত ভাষা লিখা হয়েছে। সিলেটে বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে এই লিপির চর্চা ছিলো এবং এই চর্চার কারণে ও ফলে নাগরি লিপির একটি সিলেটী সংস্করণ হয়েছিলো। সেই লিপিতে তারা বাংলার সিলেটি রূপ লিখতেন। মধ্যযুগে বাংলাভাষার অনেক সাহিত্য আরবি লিপিতে লিখা হয়েছে। সইফুল মুল্লুুক বদিউজ্জামাল আরবি লিপিতে লিখা। বাংলাভাষার প্রথম অভিধান বাংলালিপিতে লিখা নয়। এটি লিখা হয়েছে আঠারো শতকে রৌম্যান লিপিতে এবং প্রকাশিত হয়েছে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে।
তুর্কী ভাষায় শতো শতো বছর ধরে লিখা হয়েছে আরবি লিপিতে। বিশ শতকের বিশের দশকে তুর্কী রিপাবলিক হওয়ার পর সেই আরবি লিপি পরিত্যাগ করে এখনও পর্যন্ত রৌম্যান লিপিতে লিখা হচ্ছে। ইরানের ফার্সি ভাষা আরবি-সহ বিভিন্ন লিপিতে লিখা হয়েছে, কিন্তু ফারসি ভাষা আরবি হয়ে যায়নি। বর্তমানে, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অসমীয়া-সহ অনেক ভাষার লিপি বাংলা। কিন্তু তাই বলে সেগুলো বাংলাভাষা নয়। একইভাবে, বাংলা ভাষায় তা সিলেটেই হোক কিংবা লিসবনেই হোক, আর তা নাগরিতেই হোক কিংবা রৌমান লিপিতেই হোক, তা বাংলাই থেকে যায়। রূপক দিয়ে বলিঃ পায়ে আমি স্যাণ্ডেল পরি, খড়ম পরি, জুতো পরি কিংবা বুটই পরি, আমার পা কিন্তু পা-ই থেকে যাচ্ছে। ভাষা ও লিপির মধ্যে পার্থক্য আছে, যেমন পার্থক্য আছে পা ও পাদুকার মধ্যে। এই মৌলিক বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড।