শিরোনাম
◈ সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই ◈ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য চীনের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে যে নতুন নির্দেশনা ◈ জনগণ রায় দিলে ৫ বছরেই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব: জামায়াত আমীর ◈ সহকারী শিক্ষকদের জন্য নতুন নির্দেশনা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে যেসব তথ্য ◈ রাতে ঢাকাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর ◈ ডাকসুর পর জাকসুতেও শিবিরের জয়জয়কার ◈ এআই মানবীকে মন্ত্রী বানিয়ে দিল বিশ্বের প্রথম দেশ আলবেনিয়া! ◈ জাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি কে এই আবদুর রশিদ জিতু ◈ কলকাতায় সাইনবোর্ডে বাংলায় নাম লেখা বাধ্যতামূলক, না মানলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি মেয়রের ◈ জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্রের জিতু, জিএস শিবিরের মাজহার

প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৪ রাত
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তারেক রহমানের মেসেজ—“জনগণ ম্যাটারস” ডাকসু-জাকসুর শিক্ষা এখানেই!

মানবজমিন থেকে নেয়া: বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নির্বাচন সবসময়ই এক অদ্ভুত নাটক। এখানে জনগণের ভোটাধিকারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় ক্ষমতার সমীকরণ, প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করার কৌশল আর অদৃশ্য শক্তির খেলা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার দলকে সতর্ক করে বলেছেন—“জনগণই আসল ফ্যাক্টর।” সেই অর্থে সাম্প্রতিক ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের ভোটের প্রতিফলন নয়, বরং জাতীয় নির্বাচনের এক প্রকার পূর্বাভাসও। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির পুরনো কৌশলকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মিশিয়ে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে।

ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচনে ছাত্রদল কার্যত কোনো অবস্থানই নিতে পারেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ভোট দেয়নি, এমনকি অনিয়ম বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিযোগও ছাত্রদলের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে পারেনি। সাংগঠনিক দুর্বলতা, আদর্শগত বিভ্রান্তি আর নেতৃত্বের সংকট ছাত্রদলকে শিক্ষাঙ্গনে চাপের মধ্যে ফেলেছে।

জামায়াত-শিবির সবসময়ই কৌশলের রাজনীতি করেছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালেও তারা চুপচাপ নিজেদের এজেন্ডা চালিয়েছে। একসময় ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছিল, এখন আবার কথাবার্তা উঠছে—ছাত্রদলের ভেতরেও শিবির এজেন্ট সক্রিয়। এই infiltrate কৌশল নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকে আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়র ছাত্র। দেখেছি নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে পত্রিকার কাছে ভয়ঙ্কর খবর ফাঁস করিয়ে ছাত্রলীগকে ভীত করেছিল। যারা ত্রিশ বছর আগে এমন অভিনব মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে পারে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে কী করতে সক্ষম—তা সহজেই অনুমেয়।

আজকের রাজনীতির বড় অংশই লড়াই হচ্ছে ন্যারেটিভের। বিদেশে অবস্থান করে  কয়েকজন ইউটিউবার ও অ্যাক্টিভিস্ট ডাকসু নির্বাচনের আগে যে প্রচারণা চালান তা থেকে ফায়দা তুলেছে ছাত্রশিবির। তাদের সম্মিলিত অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। বিপরীতে ছাত্রদলের পক্ষে মাঠে নামা অ্যাক্টিভিস্টের ফলোয়ার ছিল মাত্র দশ লাখ। সংখ্যার এই ফারাক প্রমাণ করে, ডিজিটাল প্রচারণায় জামায়াত-শিবির কতটা এগিয়ে এবং বিএনপি কতটা পিছিয়ে। এমনকি ডাকসু নির্বাচন শেষে ছাত্রদলের পক্ষের প্রবাসী অ্যাক্টিভিস্ট দাবি করেন, নিজামী সাহেবের ছেলে তাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং শিবির কর্মীদের সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এটি জামায়াত-শিবিরের সংগঠিত দেশে-বিদেশে যোগাযোগেরই বহিঃপ্রকাশ।

পাশাপাশি দেশে-বিদেশে শিবিরপন্থী শত শত পেজ ও প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে রেখেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে তাদের প্রভাব ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে।

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ে ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর উদ্বেগ প্রকাশ করেন—বাংলাদেশে ইসলামোফ্যাসিস্ট প্রবণতা বাড়ছে। তবে এর পাল্টা জবাব এসেছে সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই। প্রতিরোধ পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেন, “বাংলাদেশকে শেখানোর আগে আপনার দেশ থেকে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করুন।” এই জবাব শুধু প্রতিবেশী রাজনীতির উত্তাপ নয়, বরং বাংলাদেশের তরুণদের আত্মবিশ্বাস ও প্রতিবাদী সুরের প্রতীক।

তারেক রহমান যতই জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দিন না কেন, বাস্তবে মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন তেমন একটা দেখা যায় না।  সবচেয়ে বড় প্রমাণ ডাকসু-জাকসু। মোটা দাগে প্রশ্ন থেকেই যায়, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক বা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা কী ডাকসু - জাকসুতে তারেক রহমানের মেসেজ মাথায় রেখে প্যানেল দিয়েছেন? নাকি নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের প্যানেলে অগ্রাধিকার দিয়েছেন! জনগণ আস্থা না রাখলে কোনো নির্বাচনী সাফল্য সম্ভব নয়। বিএনপির জন্য এখন একমাত্র করণীয়—জনগণের সঙ্গে নতুন করে আস্থা গড়ে তোলা।

জামায়াত-শিবিরের উত্থান শুধু বিএনপির সংকট নয়, দেশের গণতন্ত্রের জন্যও ভয়ের সংকেত। নব্বইয়ের দশকে যারা অস্ত্র আর ক্যাম্পাস দখলদারিত্ব দিয়ে ভয় দেখাত, তারা আজ ন্যারেটিভ ও ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে জায়গা করে নিচ্ছে।

ডাকসু-জাকসুর নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির গল্প নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির এক ঝলক। ছাত্রদলের ভরাডুবি স্পষ্ট করেছে—বিএনপিকে  জনগণের আরও আস্থা ফিরে পেতে হবে। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির প্রমাণ করেছে—অদৃশ্য শক্তি আসলে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, আর তার প্রভাব আগামী রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।।

শেষ পর্যন্ত মনে পড়ছে ইতালিয়ান রাষ্ট্রচিন্তক নিকোলো মাকিয়াভেলির সেই বিখ্যাত সতর্কবাণী—
“যে শত্রুকে অবমূল্যায়ন করা হয়, সে-ই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক জটিল সন্ধিক্ষণে। জামায়াত-শিবির কৌশলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে মাঠে ও অনলাইনে। বিএনপি-ছাত্রদলের ভরাডুবি, আর তার ফাঁক গলে ইসলামপন্থী শক্তির উত্থান।

তারেক রহমানের মেসেজ—“জনগণ ম্যাটারস”—এই মুহূর্তে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, জনগণের আস্থা ছাড়া কোনো রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারে না। ডাকসু-জাকসুর শিক্ষা এখানেই।

 

নিয়াজ মাহমুদ, লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

email:  niazjournalist@gmail.com

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়