খালিদ খলিল: একটির নাম ছিলো ‘স্যাম্পসন’। মাত্র সাত মাইল দূরে ছিলো সেই জাহাজ। ওরা দেখতে পেয়েছিলো টাইটানিকের বিপদ সংকেত, কিন্তু বেআইনি সীল মাছ ধরছিলো তারা। পাছে ধরা পড়ে যায় তাই তারা উল্টোদিকে জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে বহুদূরে চলে যায়। এই জাহাজটার কথা ভাবুন। দেখবেন আমাদের অনেকের সাথে মিল আছে এর। আমরা যাঁরা শুধু নিজেদের কথাই ভাবি। অন্যের জীবন কী এলো, কী গেলো তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই আমাদের। তাঁরাই ছিলেন ওই জাহাজটিতে।
দ্বিতীয় জাহাজটির নাম ‘ক্যালিফোর্নিয়ান’। মাত্র চোদ্দ মাইল দূরে ছিলো টাইটানিকের থেকে সেই সময়। ওই জাহাজের চারপাশে জমাট বরফ ছিলো। ক্যাপ্টেন দেখেছিলেন টাইটানিকের বাঁচতে চাওয়ার আকুতি। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকুল ছিলো না এবং ঘন অন্ধকার ছিলো চারপাশ তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘুমোতে যাবেন। সকালে দেখবেন কিছু করা যায় কিনা। জাহাজটির অন্য সব ক্রিউএরা নিজেদের মনকে প্রবোধ দিয়েছিল এই বলে যে ব্যাপারটা এত গুরুতর নয়। এই জাহাজটাও আমাদের অনেকের মনের কথা বলে। আমাদের মধ্যে যারা মনে করেন একটা ঘটনার পর, যে ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। পরিস্থিতি অনুকূল হলে ঝাঁপিয়ে পড়বো।
শেষ জাহাজটির নাম ছিল ‘কারপাথিয়ান্স’। এই জাহাজটি আসলে যাচ্ছিলো উল্টোদিকে। ছিলো প্রায় আটান্ন মাইল দুরে যখন ওরা রেডিওতে শুনতে পায় টাইটানিকের যাত্রীদের আর্তচিৎকার। জাহাজের ক্যাপ্টেন হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন ডেকের ওপর। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি সঠিক পথ দেখান তাঁদের। তারপর পূর্ণশক্তিতে বরফ ভেঙে এগিয়ে চলেন টাইটানিকের দিকে। ঠিক এই জাহাজটির এই সিদ্ধান্তের জন্যই টাইটানিকের সাতশো পাঁচজন যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান।