শিরোনাম
◈ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরা‌য়েল‌কে বহিষ্কারের দাবি জানা‌লেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ◈ কূটনৈতিক সংকট ছাপিয়ে বাণিজ্যে ভারত–বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে ◈ বিএনপিকে চাপে রাখতে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন ◈ এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি ◈ এ‌শিয়া কাপ, রা‌তে আফগানিস্তা‌নের মু‌খোমু‌খি বাংলাদেশ ◈ ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম: হিজাব–নন-হিজাব, সবার পোশাক ও পরিচয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে ◈ সঙ্কটে এশিয়া কাপ! দা‌বি না মান‌লে, প‌রের ম‌্যাচ আরব আ‌মিরা‌তের বিরু‌দ্ধে খেল‌বে না পাকিস্তান ◈ হ্যান্ডশেক বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সৌরভ গাঙ্গু‌লি ◈ নেতানিয়াহুর পাশে আমেরিকা, লক্ষ্য হামাস ধ্বংস: রুবিও ◈ বিনা পাসপোর্টে ভারতে যাওয়া ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ০১:২৩ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ০১:২৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্বায়ন আর বিশ্বায়ন নেই!

আজিজুর রহমান আসাদ

আজিজুর রহমান আসাদ: আজকে যে ন্যাটোকে আমরা দেখি, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিউক্লিয়ার দাঁতওয়ালা এআই অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী হিসেবে, এই বাহিনীর মালিক, মার্কিন-ইউরো সাম্রজ্যবাদী শক্তির বেড়ে ওঠার একটি ইতিহাস আছে। ১৭২৭ সালে জন্ম নেয় ‘কমিটি অফ ৩০০’ বা ‘দ্য অলিম্পিয়ান্স’। যারা এই অনানুষ্ঠানিক ‘কমিটি অফ ৩০০’ নিয়ে লিখেছেন, তাঁদের মতে এই কমিটি বৃটিশ উপনিবেশিক অভিজাতদের একটি সংগঠন, সভ্য ছিল রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, সংবাদমাধ্যম, ব্যবসায়ী (যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিক) এবং সামরিক কর্মকর্তা। এখানে ইউরোপীয় এলিটদের নিয়ে গোটা দুনিয়াকে কীভাবে শাসন শোষণ করা যায়, সেই পরামর্শ হতো। ‘কমিটি অফ ৩০০’ নিয়ে বিতর্ক আছে। একদল মনে করে, এটি একটি ‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’, এরকম কিছুর অস্তিত্ব ছিলো না। ফর্মাল কোনো কমিটি না-ই থাকতে পারে, কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসক ও তাঁদের নানা দেশের আত্মীয় বন্ধুদের নিয়ে যে আড্ডা বা পার্টি, একসঙ্গে আলাপ সালাপ হতো, সেটা কমনসেন্স দিয়েও বোঝা যায়। 

১৯২১ সালে গড়ে ওঠে ‘কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশন্স’ বা সিএফআর। স্বাধীন এনজিও বা থিংক ট্যাঙ্ক, রকফেলারের সভাপতিত্বে। এরা মূলত নির্ধারণ করে মার্কিন ফরেন পলিসি। এই ফরেন পলিসি মানে কীভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্ব-শাসন পরিচলনা করবে, দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে। ১৯৫৪ সালে গড়ে তোলা হয় বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) বিল্ডারবার্গ সভা। ১২০ থেকে ১৫০ জন রাজনীতিবিদ, একাডেমিক (পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবী), ব্যবসায়ী, আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের সভা। আলাপের বিষয় কীভাবে দুনিয়ায় উন্নতি ও গণতন্ত্র রপ্তানি করা যায়। মানে সাম্রজ্যবাদের নীতি কৌশল নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬৮ সালে ক্লাব অফ রোম গড়ে তোলা হয়। এখানেও একটি নাম কমন, রকফেলার। এদের অনেক ভালো কাজ আছে, বিশেষ করে পরিবেশ নিয়ে সাবধান বাণী দেওয়া। এদের এই ভালো কাজের প্রতি বিশ্বাস থেকে গর্বাচেভ সাহেব এই ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন, এবং মনে করেছিলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য হলেও সাম্রাজ্যবাদ আগামীতে আর যুদ্ধ করবেনা, যদি  কোল্ড ওয়ার শেষ করা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত করে হলেও। রাশানরা পড়ুয়া এবং সরল বিশ্বাসী, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদকে যে বিশ্বাস করতে নেই, এই উপলব্দি চীনাদের মতো রাশানদের ছিলো না। 

১৯৭৩ সালে গড়ে তোলা  হয় বিখ্যাত ট্রাইল্যাটারাল কমিশন। এই সংগঠনে জমায়েত হয় মার্কিন, পশ্চিম ইউরোপ ও জাপান। এখানেও ওই ব্যাংকার রকফেলারের নাম। আজকের যে বিশ্বায়ন, এই ক্ষেত্রে ট্রাইল্যাটারাল কমিশনের অবদান কীভাবে অস্বীকার করা যায়। সম্ভবত সবচেয়ে এফেক্টিভ সাম্রাজ্যবাদী সংগঠন। এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন, যাদের টাকা আছে, বুদ্ধি আছে এবং দুনিয়াকে অস্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্র উপহার দেওয়ার অদম্য ইচ্ছে আছে। ১৯৮৩ সালে তৈরি হয় ন্যাশনাল এন্ডউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি বা এনইডি। এরা প্রকাশ্যেই সারা দুনিয়েয় গণতন্ত্র রপ্তানির বৈশ্বিক এনজিও। পূর্ব ইউরোপে এদের গণতন্ত্র রপ্তানির চেষ্টার ফল আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ। ন্যাটোর সম্প্রসারণ হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী সরকার হটানো, রেজিম চেঞ্জ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন তথা ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশনের পন্থায়। যেমন ২০১৪ সালে ঊক্রাইনে মাইডেন রেভোলিউশন ঘটানো এবং জোকার জেলেন্সকি কে ক্ষমতায় বসানো হয়। এরপর জী-৩০, জী-সেভেন, কতকিছুই আছে, সবাই জানেন।  
আপাতত একটি গল্প বলে শেষ করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মাত্র শেষ হয়েছে। বার্লিনে আমেরিকান, বৃটিশ, ফরাসি ও রাশান সৈন্যদের অবস্থান এবং জার্মানি কীভাবে পুনর্গঠন হবে সেই আলোচনা চলছে। হঠাৎ করে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে মার্কিন, ফরাসি ও বৃটিশরা সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিম জার্মানিতে ডয়েস মার্ক চালু করবে। গোটা জার্মানিতে তখন রাইসেস মার্ক চলছে। একদিকে রাশানদের বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া রাশানদের কাছে ছিল অপমানজনক ও হতাশার, অন্যদিকে বিপদ হচ্ছে পুরো পূর্বজার্মানির অর্থনীতি পশ্চিমে থাকা রাইসে মার্ক দিয়ে ধসিয়ে দেয়ার ভয়। রাশিয়া তরিঘড়ি করে রেল, নৌ ও রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এবার সুযোগ আসে গাজায় যেমন আমেরিকান বিমান থেকে খাবার বস্তা ফেলা হয়, তেমনি পশ্চিম বার্লিনে রুটি ও চকলেট ফেলা হয়। সেই কৃতজ্ঞতা জার্মানরা কীভাবে ভুলবে? ফলে আজ নিজের নাক কেটে হলেও পুতিনের যাত্রা ভঙ্গে সামিল হয়।  

সেই সূচনা, প্রথমবার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক গড়ার রাশানদের চেষ্টা ভেস্তে যায়। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে, গর্বাচভ সাহেব। কিন্তু না, সেটাও ব্যর্থ হয়। ওয়ারশ জোট বিলুপ্ত হলেও। ন্যাটো বাড়তে থাকে, বাড়তেই থাকে। বাড়তে বাড়তে একেবারে রাশিয়ার দেয়ালে গিয়ে পৌঁছে। চীনাদের মতো কৌশলী না হওয়ায় এবং সামরিক অপশন একমাত্র উপায় ভেবে, পুতিন সাহেব, ন্যাটোর তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদে পা দেয়। ডনবাস অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার বদলে সরাসরি সৈন্য পাঠায়, যা ছিল ন্যাটোর ফাঁদ, বিশ্বকে দেখানোর যে দ্যাখো ইহা একটি উস্কানি ছাড়া আগ্রাসন। কারইবা এত সময় আছে, রাশিয়া ও ন্যাটোর দ্বন্দ্বের মূলে কী আছে তা খোঁজা! 

রাশান পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন আলাপ করতে, সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদ থেকে বেরুনোর উপায় খুঁজতে। রাশানরা ভাগ্যবান যে চীন সহায়তা করছে। চীনের আছে ৪ হাজার বছরের যুদ্ধের তত্ত্ব, আর্ট অফ ওয়ার এবং ৪ হাজার বছর আগে ন্যাটোর কৌশলবিদ্যার শিকারি পূর্বপুরুষেরা গুহায় বাস করতো। চীন একটি কাজ করেছে। বিশ্বায়ন আর বিশ্বায়ন নেই। আজকে ২০২৪ সালে আছে, একটি মার্কিন বলয়ের গ্লোবাল নর্থ এবং অন্যটি চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত মিলে গ্লোবাল সাউথ। ব্রিক্সের মাধ্যমে ডলার ডাম্প করে, ১৯৪৮ সালের ইউরো-মার্কিন ষড়যন্ত্র, ডয়েসমার্ক নীতির, প্রতিউত্তর দিয়েছে। বুদ্ধিটা চীনের (সাম্রাজ্যবাদ একটি বহুমুখী ড্রাগনের মতো। এদের সম্পর্কে আমার সাম্যের স্বপ্ন রাজনৈতিক থ্রিলারে কিছুটা বর্ণনা আছে। বই বিক্রির আয়ে আমার সংসার চলে না, ফলে বইয়ের উল্লেখ কোনো বিজ্ঞাপন নয়। তবে বামপন্থী কর্মীরা পড়লে উপকৃত হবেন। যারা সাহিত্য অনুরাগী, আপনারাও আনন্দ পাবেন)। লেখক: গবেষক

 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়