শিরোনাম
◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া? বিএনপি–জামায়াতের মধ্যে আলোচনা উদ্যোগ ◈ আজ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ◈ ভয়ানক অভিযোগ জাহানারার, তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন (ভিডিও) ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির!

প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:২৬ রাত
আপডেট : ০৩ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছাত্র রাজনীতি কি জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষ তৈরি আটকাতে পেরেছে?

ড. কামরুল হাসান মামুন

ড. কামরুল হাসান মামুন: ভারতে বর্তমানে ২৩টি আইআইটি আছে যেগুলো ভারতের উচ্চ শিক্ষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের বুয়েটকে কিছুটা আইআইটির সঙ্গে তুলনা করা যায়। আইআইটিগুলো থেকে পাশ করে পৃথিবীর নানা দেশের বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে যেমন Sundar Pichai যাকে সবাই চিনে, আছে Atish Dabholkar যিনি প্রফেসর আব্দুস সালামের হাতে তৈরি ICTP ইতালির ডিরেক্টর এইরকম আরো অসংখ্য আছে। এদের অনেকেই আমেরিকা বা ইউরোপের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করে একেকজন ভারতের অ্যাম্বাসেডরের মতো ভারতের ইমেজ বিশ্বে উন্নত করছে। আমাদের বুয়েটও কম করছে না। বুয়েট থেকে পাশ করে যারা আমেরিকায় পিএইচডি করতে গিয়েছিলো তাদের অনেকেই আমেরিকার বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ক্যালটেক, ভার্জিনিয়া টেক, টেক্সাস টেকসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিমান প্রফেসর হয়েছে। ভার্জিনিয়া টেকের প্রফেসর বাংলাদেশের অধ্যাপক সাইফুর রহমান IEEE-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন গত টার্মে। বুয়েট এলামনাই অনেকেই IEEE-র ফেলো। বুয়েট গ্রাজুয়েট Sayeef Salahuddin এখন টঈ Berkeley বিখ্যাত অধ্যাপক। প্রফেসর ফজলে হোসেন বিশ্বে ফ্লুইড ডাইনামিক্স এর সেরা ৫ জনের একজন। এই বুয়েট থেকেই ফজলুর রহমান খান আমেরিকায় লেখাপড়া করতে গিয়ে স্থাপত্যের আইনস্টাইন হয়েছিলেন। এইরকম অসংখ্য নাম বলা যাবে। এখন আমরা কী চাই? এতো ভালো ভালো না ভেবে তাকে থামিয়ে দিতে হবে?

বলা হচ্ছে বুয়েটে জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষ তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে এইটাও বইলেন বুয়েট ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্কলারও তৈরি করছে। গতকাল জানলাম ওদের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২০১৯ অক্টোবর থেকে বুয়েটের শিক্ষক হতে শুরু করে এবং ২০ জন শিক্ষক হয়। সেই ২০ জনের মধ্যে ৪ জন এখন এমআইটিতে পিএইচডি করতে যাচ্ছে, ১ জন টঈ বার্কলি, ২ জন যাচ্ছে ক্যালটেকে। বাংলাদেশের আর কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলেনতো যে সেখান থেকে সর্বমোট এতো জন ছাত্র এতো ভালো ভালো জায়গায় লেখাপড়া করতে গেছে? বুয়েট ব্যতীত বাংলাদেশের প্রায় অন্যসব উচ্চশিক্ষার পাবলিক প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি আছে। ছাত্র রাজনীতি কি সেইসব জায়গায় জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষ তৈরি আটকাতে পেরেছে? ছাত্রলীগ ছাত্রদল কীভাবে এসব থামাবে? তারা কি আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করে? এদের দল যখন ক্ষমতায় থাকে এই সংগঠনগুলোর একেকজন ছাত্রনেতা একেকজন মনস্টার হয়ে উঠে। গেস্ট রুম টর্চার, জোর করে মিছিলে নেওয়া, ফাও খাওয়া ইত্যাদির কোনো অপকর্ম কম করে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এইসব জারি রাখার লাইসেন্স দেওয়ার নামই ছাত্র রাজনীতি। জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষ তৈরি থামাতে হলে দরকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রসার। আমাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক হাতের রাজনীতি যারা করে তারা কি এইসবে তোয়াক্কা করে?   

ভারতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স বা ওওঝপ আছে যাকে বলা যায় ভারতের হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ড অথবা কেমব্রিজ তার ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং হলো ২০০ থেকে ২৫০ এর মধ্যে। এটিই ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর কোনো কোনো বিভাগ যেমন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ হার্ভার্ড বা ক্যামব্রিজের চেয়েও ভালো। ২৩টি আইআইটি কিংবা IISc-তে ছাত্র রাজনীতি আছে? ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোতো বলে না এইটা সংবিধান পরিপন্থী। তাদের কেউ কোর্টেও যাচ্ছে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণ মিলে আগলে রেখেছে। সেখানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক বা আদর্শভিত্তিক কোনো প্রকার রাজনীতি নেই। কেউ সেইসব প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি খোলার জন্য চাপও দিচ্ছে না। আবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যাদবপুর ইউনিভার্সিটি আছে। সেটি আমাদের বুয়েটের মতো একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি। সেখানে রাজনীতি আছে বলে আইআইটিগুলোর ধারে কাছে নেই। বরং রাজনীতি আছে বলে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের মতোই। 

আমাদের ক্ষমতাসীন দল কেন ছাত্র রাজনীতি চায়? তারা ছাত্রদের দিয়ে কেমন রাজনীতি করায়? এইগুলো বুঝতে হবে। এরা রাজনীতি চায় কারণ কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় না করে বিনা পুঁজিতে লাখ লাখ কর্মী পায় যারা তাদের গদি ঠিক রাখতে জীবন দিবে। কতোটা স্বার্থপর আমাদের রাজনীতিবিদরা কল্পনা করা যায়? কেবল এদের নিজের হীন স্বার্থে ছাত্র রাজনীতির প্রসার চায়। একই কারণে এরা জেলায় জেলায় পারলে থানায় থানায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চায়। যতো বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ততোবেশি ছাত্র তাদের দল করবে। অন্যদের রাজনীতি থামিয়ে দিবে। মারামারি আর দখলদারিত্ব করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখবে। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মেরেমুরে থামিয়ে দিবে। এমন স্বার্থপর রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে আছে? গতবছর সরকার বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ কমিয়ে জিডিপির মাত্র আবার বলি মাত্র ১.৭৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলো। আমি তার পরদিন সংবাদপত্রে পড়েছি যে ওই বাজেট দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল করেছে। এইটা কি কল্পনা করা যায়? আমরা দেখি এবং জানি আমাদের ছাত্ররা আবাসিক হলগুলোতে কতো অমানবিকভাবে থাকে। কোথায় ছাত্রনেতাদের আন্দোলন করা উচিত জিডিপির অন্তত ৫.৫ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে। আর এরা বরাদ্দ কমানোর পরেও আনন্দ মিছিল করে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা লেখাপড়ার জন্য একটা টেবিল পায় না, একটা ঘুমানোর বিছানা পায় না, পুষ্টিকর খাবার পায় না এইসব নিয়ে কোনো দাবি নেই। তাহলে কীসের ছাত্র রাজনীতি? 

একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতি চাচ্ছে না। গতকালকের একটি ওপেন অনলাইন পোল দেখলাম সেখানে ৪০৪২ ভোটের মধ্যে ৯৯ শতাংশই ছাত্র রাজনীতি চায় না। বুয়েটে যদি তাদের সকল ছাত্রের মতামত নেওয়া হয় আমি নিশ্চিত সেখানকার কম করে হলেও ৯০ শতাংশের বেশি ছাত্রছাত্রী বলবে তারা ছাত্র রাজনীতি চায় না। আমি বর্তমান বুয়েটের অনেক ছাত্র শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সবাই বলেছে গত কয়েকটা বছর দারুন কেটেছে। কোনো সন্ত্রাস নেই, কোনো প্রকার ঝামেলা নেই সব কিছু অসাধারণ সুন্দর পরিবেশে চলছে। আমরা কি অন্ধ? আমরা কি খারাপ যে নিজের স্বার্থের কারণে সমষ্টির ভালো হতে দিবো না? বুয়েট আমাদের আইআইটি। বরং আমাদের অন্যান্য যেই সাইন্স টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কুয়েট, রুয়েট, চুয়েটকেও কীভাবে প্রথমে বুয়েট পরে আইআইটির মতো করা যায় সেইদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। 

গতকাল দেখলাম ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে অনেকেই বুয়েটকে গালমন্দ করছেন। বলছেন এরা বিদেশে চলে যায়, দেশের সার্ভিস দেয় না। দেশকে কি সেইভাবে গড়ে তুলেছেন? আমাদের মেধাবীরা উচ্চ শিক্ষা শেষে যদি ফিরে আসে তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারবেন? ভারততো বলে না সুন্দর পিছাই কেন আমেরিকায় চলে গেলো? অতীশ ধাবলকর কেন বিদেশে চলে গেলো? বিদেশে গিয়ে এরা আরও বড় আকারে দেশকে সার্ভ করছে। ইন্টেলের বড় পদে কয়েকজন বাংলাদেশি হওয়ায় এখন ইন্টেলে অনেক বাংলাদেশি চাকুরি পাচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে প্রচুর চাইনিজ পাওয়া যায়। কারণ চাইনিজরা বড় পদে গেলে চাইনিজ নিয়োগ দেয়। বেশি বেশি রেমিটেন্স আসে। দেশের সুনাম বাড়ে। দেশের সুনাম একটি বিশাল জিনিস। এইটা কেবল একটি দেশের স্কলাররাই বাড়াতে পারে। তাই এখনো সময় আছে। বুয়েটকে বাঁচান। ছাত্র বা শিক্ষক রাজনীতি আমাদের কোনো সমস্যার সমাধান না। বরং এই দুই রাজনীতি আমাদের শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে, অনেকের মৃত্যুর কারণ হয়েছে, অনেককে টর্চারের কারণ হয়েছে। এইসবের মাধ্যমে আমরা কতো মেধাবীর মেধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছি কে জানে? তাই থামান প্লিজ। আপনারা যাকে ছাত্র রাজনীতি বলছেন সেটা আসলে ছাত্র রাজনীতি না। বুইড়াদের পিছে থেকে তোষামোদি শেখা। এতে বরং ছাত্রদের মেরুদন্ড ভেঙে যাচ্ছে। অন্যায়ের  প্রতিবাদ করতে ভুলে যাচ্ছে। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়