শিরোনাম
◈ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির পর ভারতের সঙ্গেও 'বড় চুক্তি'র ইঙ্গিত ট্রাম্পের ◈ ‘জুলাই যোদ্ধার’ স্বাস্থ্য কার্ড যুবলীগ কর্মীর হাতে! ফেরত আনল প্রশাসন ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের শেষ ষোলোতে ম‌্যান‌চেস্টার সিটি ◈ রেডবুল‌কে ৩-০ গো‌লে হা‌রি‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় রিয়াল মাদ্রিদ ◈ আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি হলে ইরান এমন শিক্ষা দেবে যা ইতিহাস হয়ে থাকবে ◈ ইরানের উপর হামলা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন,বিবৃতি ব্রিকসের ◈ রেলওয়ের কেনাকাটায় পুকুরচুরি: পরিচ্ছন্নতা উপকরণ কিনতে ২৫০০০ ঢাকার বিল আড়াই লাখ টাকা! (ভিডিও) ◈ গাজায় ৫৪৯ জন সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহত ◈ গাজায় এক তৃতীয়াংশ পরিবার খাবারই পা‌চ্ছে না, অ‌নেক পরিবার এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে ◈ মাকে হাসপাতালে নেওয়ার কারণে দেরি, অবশেষে পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন আনিসা

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০২৪, ০১:২৯ রাত
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৪, ০১:২৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মেয়েদের জন্য বাংলাদেশ নরকে পরিণত হয়েছে! 

ড. কামরুল হাসান মামুন

ড. কামরুল হাসান মামুন: আরজ আলী মাতুব্বর। মৃত্যুর আগে তিনি প্রতিস্থাপনের জন্য তার চোখ দান করেছিলেন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের ছাত্রদের মানবদেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য তিনি তার দেহ দান করে গিয়েছিলেন। এই মানুষটি নিজ চেষ্টায়, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া আমাদেরই পরিবেশে জন্ম নিয়ে, আমাদের সমাজের সমস্যা থেকে জ্বালানি গ্রহণ করে একজন অসাধারণ মানুষ চেয়েছেন বলে তার মৃত্যুর ৩৯ বছর পরেও মানুষ তার কথা স্মরণ করে, তাকে নিয়ে লিখে, তাকে নিয়ে ভাবে। বর্তমান বাংলাদেশে কি একজন আরজ আলী মাতুব্বর তৈরি হওয়া সম্ভব? শধু সে কেন? একজন লালন কিংবা একজন কাজী নজরুল ইসলাম অথবা একজন তসলিমা নাসরিন তৈরি হওয়া কি সম্ভব? এক তসলিমা নাসরিনকেই তো ১৮ কোটি মানুষ ধারণ করতে পারেনি কেবল লেখার জন্য। 

আজকের বাংলাদেশ কি একজন নজরুলকে ধারণ করতে পারতো? এই প্রশ্নের উত্তরগুলোর মাঝেই লুকিয়ে আছে আমরা আসলেই কতটা এগিয়েছি বা পিছিয়েছি। কারও মতের সাথে না মিললেই তাকে দেশ ছাড়া করতে হবে বা পৃথিবী ছাড়া করতে হবে কেন? এইটা সংখাগরিষ্ঠের অপব্যবহার। আমার মতের সাথে অমিল হওয়ার মানুষ কি কেবল বাংলাদেশেই থাকে। তার চেয়ে অযুত, লক্ষ, নিযুত কোটি মানুষ থাকে বাংলাদেশের বাইরে। তাদের কি আমরা কিছু করতে পারি? সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতেই মতের মিলের মানুষ আর মতের অমিলের মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। তার ইচ্ছেতেই যদি সব হবে তবে মতের অমিলদের থাকতে না দেওয়া কি সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া নয়? আসলে আমাদের আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চয়ই হয়েছে। সেই সাথে অন্যান্য কিছু সূচকেও উন্নয়ন ঘটেছে। কিন্তু ারঃধষষু রসঢ়ড়ৎঃধহঃ মানুষ জন্ম ও বেড়ে উঠার পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে। 

এখন মানুষ হিসাবে জন্ম নিয়ে অমানুষ হিসাবে বেড়ে উঠছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করার আগে একটা চিরকুটে লিখে গেছে তার মৃত্যুর জন্য কে দায়ী। একটা মানুষকে কতটা মানসিক নির্যাতন করলে সে মনে করে মরে গিয়ে হলেও ওই নির্যাতনকারীর বিচার হওয়া উচিত। কারণ সে বুঝে গেছে এই সমাজে কারো কাছে বিচার চেয়ে সঠিক বিচার পাবে না। ফাইরুজ অবন্তিকা জানিয়ে গেছে যে তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুললেও কেউ এর বিচার করবে না। সে বিচারের জন্য প্রক্টর অফিসে নালিশ পর্যন্ত করেছে। সেই প্রক্টর অফিসের কী যেন দ্বীন ইসলাম নামের একজন নাকি উল্টো আম্মান সিদ্দিকীর পক্ষ হয়ে মেয়েটিকে বহিষ্কারের হুমকিও দিয়েছে। 

বুঝতে পারছেন যে শুধু কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী নয়। এই সমাজে আমাদের মেয়েরাও নিরাপদে চলতে ফিরতে লেখাপড়া করতে পারে না। মেয়েটির নাম ফাইরুজ অবন্তিকা। কত সুন্দর নাম। কত কষ্ট করে জীবনের এতগুলো বছর পার করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছিল। কিন্তু শেষ করতে পারেনি। এটার বিচার না হলে ফাইরুজের মতো আরো অনেক ফাইরুজকে মেরে ফেলার দায় আমাদের ওপর বর্তাবে। মেয়েদের জন্য বাংলাদেশ নরকে পরিণত হয়েছে। ছেলেদের যদি এইটা বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে সে যেন তার স্ত্রী, কন্যা, বোন বা মাকে জিজ্ঞেস করে। ওয়াজ থেকে শুরু করে সর্বত্র মেয়ে কীভাবে চলবে তার সবক দেয়। অথচ ছেলেদের কিভাবে চলতে হবে সেই সবক দেয় না। ছেলেমেয়ে একজন আরেকজনকে চুমু দিলে মেয়ের চরিত্র গেলো বলে রব পরে যায় কিন্তু ছেলেকে নিয়ে কেউ কথা বলে না। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়