সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা কি আসলেই আত্মহত্যা করেছেন? একাত্তর জার্নালে তার মায়ের কথা শুনে তা মনে হয়নি। মায়ের সাথে সবকিছু শেয়ার করত কন্যা। বলত প্রতিটি মুহূর্তে ক্যাম্পাসে একা পেলে বা সবার সামনেই কী ভয়ংকরভাবে অপমান করত সহপাঠি আম্মান সিদ্দিকী। সেই অপমান জমাতে জমাতে একপর্যায়ে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয় অবন্তিকা। একবছর আগে স্বামী, আর এখন কন্যাকে হারিয়ে দিশেহারা অবন্তিকার মা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাইলট হতে পারতো যে মেয়েটি তাকে ক্যাম্পাসের গুন্ডামি হত্যা করেছে। বিচার চাইতে গিয়েছিলো প্রক্টর অফিসে। সেখানেও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে সহযোগিতা তো করেইনি, উল্টো অকথ্য গালি দিয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আফিস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এক নিপীড়ন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। একাত্তর জার্নালেই জগন্নাথের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের এক ছাত্রী অত্যন্ত ভয়ার্ত কণ্ঠে তার দুরবস্থার কথা বলছিলেন। এ কথাও বলছিলেন কখন কী হয় এই আতঙ্কে তিনি ঘর থেকে বের হন না। তার বিভাগের শিক্ষকরা মিলে তাকে ফেইল করিয়ে ছেড়েছে, জীবনাতঙ্কে রেখেছ। মেয়েটি বলছিলেন, অবন্তিকার মতো সাহসী হলে তিনিও আত্মহত্যা করতেন। কী ভয়ংকর! দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ বছরের যৌননিপীড়নের ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে যুগান্তর পত্রিকা জানিয়েছে, ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তত ৫১টি যৌনহয়রানির অভিযোগ সামনে আসে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত সাতটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন অন্তত সাতটি ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন অধিকাংশ অভিযোগই নিষ্পত্তি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় গঠিত যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বেশির ভাগ সময়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয় না। আবার প্রতিবেদন দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ফোরামগুলোতে উপাচার্যরা তা উপস্থাপন করেন না। যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোয় জড়িতরা বেশ ক্ষমতাধর হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও ছাত্রীরা বিচার পান না। উল্টো পদে পদে বাধা-বিঘ্ন, অসহযোগিতা করা হয়। যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলও বারবার আপত্তিকর, অসৌজন্যমূলক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা জিজ্ঞেস করে পুনরায় হয়রানি করে। এই কমিটিগুলো প্রভাবশালী অভিযুক্তকে ভোটের কারণে, রাজনৈতিক কারণে খ্যাপাতে চায় না। সত্য প্রকাশ না করে নিপীড়ককে রক্ষা করে। সমস্যা মাস্টার মশাইদের মধ্যে, উচ্চ শিক্ষার মাস্টার মশাই তারা। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক। ফেসবুকে ১৭-৩-২৪ প্রকাশিত হয়েছে।