শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে চুক্তির সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ ◈ শ্রীলঙ্কাকে ৬৭ রা‌নে হারা‌লো  জিম্বাবুয়ে  ◈ রায়ের পর হাসিনাকে ফেরত দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে ◈ রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি, চার মাসে এলো এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা ◈ প্রবাসী ভোটারদের সতর্কতা: ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না দিলে পোস্টাল ভোট বাতিল ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বিষয়ে যা জানালেন শিশির মনির ◈ বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অনুমোদন ◈ ১৯ দিনে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ◈ ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ, আগুন ◈ জার্মা‌নি‌কে হা‌রি‌য়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালের পথে ভারত

প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৭:০৩ সকাল
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ০২:৫১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা বিশেষ গুরুত্ব পাবে

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ সচিব সভা

আনিস তপন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকালে রয়েছে নিকার সভা। এরপর বেলা ১টায় অনুষ্ঠিত হবে সচিব সভা। করোনার কারণে তিন বছর পর সশরীরে এই সভা হচ্ছে। এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সব সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা শেষে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা, জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রয়োজন সাপেক্ষে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারের যোগান নিশ্চিতকরণ, পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসা, সরকারি কাজের আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করা, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক পরিকল্পনা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির পর্যালোচনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি বিষয়ক, সুশাসন ও শুদ্ধাচার বিষয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানাবে, তাদের নেয়া পদক্ষেপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৪৮৫ মে. টন, বিদেশ থেকে নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এক লাখ ৩২ হাজার ৭৯৭ মে. টন চাল ও এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৯ মে. টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত সরকারি খাদ্য গুদামে বর্তমানে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সর্বমোট ১৬ লক্ষ ১৪ হাজার মে. টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ৯৪ হাজার মে. টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খাদ্য গুদাম মেরামত, এক হাজার মে. টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৭০টি ও ৫০০ মে. টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১৪টি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ২০০৯ সালে দেশের খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৪ লাখ মে. টন থেকে ২০২১ সালে ২২ লক্ষ ৭২০ হাজারমে. টনে উন্নীত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ মে. টনে উন্নীত করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অতিদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যবান্ধব এবং ওএমএস কর্মসূচি মোট নয় লাক্ষ ৯৩ হাজার ২২৮ মে. টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে। এ কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইতোমধ্যে তিনটি বিধি এবং ১১টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। খাদ্য ও সেবার মান বৃদ্ধিতে হোটেল-রেস্তোরার গ্রেডিং পদ্ধতি চাল, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হটলাইন সেবা ৩৩৩ চালু, ১৬৪টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এক কোটি ৯১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড ও ১৪১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দুই হাজার ৬২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নয় হাজার ৪৭১টি মামলা দায়েরসহ তিন কোটি ৪০ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৮৮ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বিদ্যমান সংকটজনক পরিস্থিতি বিবেচনায় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে কর্মশালার আয়োজন করে। প্রচলিত জাত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবিত অতি উচ্চ ফলনশীল, প্রতিকূলতাসহিষ্ণু এবং হাইব্রিড ফসলের আবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক সময়ে বোরো, আমন ও আউশসহ অন্যান্য ফসলের বপন, রোপন ও সংগ্রহ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাসহ মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও সেচ সরবরাহ অব্যাহত রাখা, ভূট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি ও বহুমূখি ব্যবহার বৃদ্ধি করা, সারাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে সেচসুবিধা প্রদান ও মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ, বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিগন ভিন্নতা বিবেচনায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করাসহ আম, পেয়াঁরা, কুল, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন উদ্যানভিত্তিক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত প্রায় ১৭৬টি প্রতিকূলতা সহনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে।

এছাড়াও প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ, প্রদর্শনীর জন্য ৭০ কোটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিশেষ বিশেষ ফসল চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে সারাদেশের ১০ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবে।  গত অর্থ বছরে ২৫ লক্ষ কৃষকের মাঝে ২০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সকল পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি ইউনিয়নে ১০০টি করে মোট চাল লক্ষ ৮৮ হাজার ৪০০টি পারিবারিক সবজি বাগান কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ৩৮২ হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানাবে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে চলতি অর্থ বছরের (অক্টোবর ২০২২) পর্যন্ত কাবিখা-কাবিটা কর্মসূচির আওতায় প্রথম কিস্তিতে পাঁচশত কোটি টাকা, ছেষট্টি হাজার ছয় শত ছেষট্টি মে. টন চাল ও গম, গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় চার শত তিরাশি কোটি তেত্রিশ লক্ষ টাকা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)’র আওতায় প্রথম পর্যায়ে সারাদেশের ৩৪০টি উপজেলায় আটশত সাত কোটি তিপ্পান্ন লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা, ত্রাণ কার্যক্রম (নগদ) ছয় কোটি ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ কার্য়ক্রমের আওতায় চাল ৩৫ হাজার ৯২৫ মে .টন,  ত্রাণ কার্য (কর্মসূচি) ২২ হাজার ৫৫৯ বাণ্ডিল ঢেউটিন, শুকনা খাবার ৮৮ হাজার ৬৮৪ ব্যাগ/বস্তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড় ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাকাবেলায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ পয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। 

বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সংকট মোকাবেলায় অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে জানাবে, বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। বর্তমানে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট মুল্যস্ফীতির চলমান ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতা প্রশমিত করতে নীতিসুদ হার হিসেবে বিবেচিত রেপো সুদ হার চার দশমিক ৭৫ শতাাংশ (২৯ মে) থেকে তিন ধাপে যথাক্রমে ২৫, ৫০ ও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে পাঁচ শতাাংশ, পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পাঁচ দশমিক ৭৫ শাতাংশে পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিলাস জাতীয় বা অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি মার্জিন শতভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঠাকার বিনিময় হার সহনীয় পর্যায়ে ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করছে। এলক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার ৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে। যেখানে গত পুরো অর্থ বছরে সাত হাজার ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দীয় ব্যাংক।সরবরাহ সংকটের কারণে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, এজন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে করোনাকালে অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য নেয়া স্বল্পসুদ ভিত্তিক পুন:স্কীমগুলো অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমদানি বিকল্প পণ্য বিশেষ করে গম, ভূট্টার উৎপাদন বাড়াতে স্বল্প সুদে পুন:অর্থায়ন স্কীম চালু করা হয়েছে।

রেপো সুবিধার আওতায় তফসিলি ব্যাংকগুলোতে নিয়মিত তারল্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর নেট ওপেন পজিশন হ্রাস করা হয়েছে। আমদানির নিমিত্তে বিদেশি ব্যাংক থেকে তহবিল (বায়র্স ক্রেডিট) পাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলারের পাশাপাশি করপোরেট গ্যারান্টি, পারসোনাল গ্যারান্টিসহ থার্ড পার্টি গ্যারান্টি গ্রহণ করে তহবিল পাওয়া সহজ করা হয়েছে। নন রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (এনএফসিডি)’র সুদহার বৃদ্ধি করে আকর্ষনীয় করা হয়েছে। এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) সীমা ১৫, ৬০ ও ৭০ শতাংশ  থেকে কমিয়ে ধারাবাহিকভাবে সাড়ে সাত, ৩০ ও ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। রপ্তানিকারকদের জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফাণ্ড (ইডিএফ)’র সুদ হার শতকরা তিন ভাগ থেকে বাড়িয়ে চার ভাগ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করে জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের আওতাধীন সব দপ্তর/সংস্থাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া  সব বিদেশ ভ্রমন স্থগিত করা হয়েছে। 

মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্ভাব্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পাশাপাশি চলমান সংকটসহ আলোচ্য সূচির বাইরেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সচিব সভায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং তা বাস্তবায়নেরও তাগিদ থাকবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়