শিরোনাম
◈ ভুয়া জুলাই শহীদ-যোদ্ধাদের নাম তালিকা থেকে বাদ, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ◈ কুয়াকাটা সৈকত থেকে আবারও অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার ◈ আদমদীঘিতে ভাঙা রেললাইনে কম্বল গুঁজে ১৮ ঘন্টা ট্রেন চলাচল ◈ জুলাই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সব ধর্মের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ ব্যক্তি বিবেচনায় এলএনজি কেনা হচ্ছে না, পিটার হাসের কোম্পানি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ◈ বিসিএস পরীক্ষা: কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করল জামায়াত ◈ চশমা ছাড়াই স্পষ্ট দেখা সম্ভব, কার্যকর আই ড্রপ উদ্ভাবন ◈ যেসব বিষয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে নতুন বেতন কাঠামোতে  ◈ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরা‌য়েল‌কে বহিষ্কারের দাবি জানা‌লেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ◈ কূটনৈতিক সংকট ছাপিয়ে বাণিজ্যে ভারত–বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৬ দুপুর
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি

প্রথম আলোর প্রতিবেদন: জনপ্রশাসনে এখন নিয়মিত উপসচিব পদ রয়েছে এক হাজারের মতো। কিন্তু এই পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ১ হাজার ৫৯৬ জন। পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা আগে থেকেই বেশি ছিল। তারপরও গত মাসে ২৬৮ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

পদোন্নতি দেওয়ার পর কর্মকর্তাদের দ্রুত পদায়ন করা যায় না। কারণ, পদায়নের মতো জায়গা কম, খালিও থাকে না। তখন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে আগের পদেই রেখে দেওয়া হয়, তাঁরা আগের কাজই করেন। শুধু বাড়ে বেতন ও ভাতা। পাশাপাশি উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির পর গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদের ঋণসুবিধা পাওয়া যায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ৫২ জন কর্মকর্তাকে আগের পদেই পদায়ন (ইনসিটু) করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ২৮ আগস্ট উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া এ রকম ২৬৮ জন কর্মকর্তার বেশির ভাগের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এভাবে পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেওয়া হতো। অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ একতরফা ও পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকার জন্য আমলাদের খুশি রাখার চেষ্টা করত। এ জন্য গাড়ি ও বাড়ি কিনতে বিনা সুদে ঋণসুবিধা দেওয়া শুরু করে। পদোন্নতি দেওয়াও বাড়ানো হয়। পদোন্নতিতে এই সরকারও একই পথে হাঁটছে। একদিকে আমলারা পদোন্নতির জন্য চাপ দিচ্ছেন, সরকারও নমনীয় হয়ে তা মেনে নিচ্ছে। জনপ্রশাসনে সংস্কারের জন্য গঠিত সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশও সরকার বাস্তবায়ন করেনি। তবে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সদস্য ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতির সংখ্যা ও যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি মূলত পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ঠিক আছে কি না, সেটি দেখে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কর্মকর্তাদের পদায়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কত পদ, কত জনবল

২০২২ সালের ৩ অক্টোবর প্রথম আলোতে ‘পদ নেই, কাজও আগের, তবু তাঁদের পদোন্নতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে পদসংখ্যার বিপরীতে বাড়তি কর্মকর্তা কত, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়। তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য পদোন্নতির পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। যুগ্ম সচিব পদে নতুন করে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানাতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, কর্মকর্তারা অবসরে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই ওপরের পদগুলোতে জনবল কমতে থাকে। আর যুগ্ম সচিব পদটি বেশি প্রয়োজন। প্রকল্পসহ সরকারের কাজও বেড়েছে। এ জন্য যুগ্ম সচিব পদে অন্তত ১০০ জনের মতো বেশি জনবল রাখতে হয়। কারণ, অনেকে শিক্ষাছুটিতে থাকেন, অসুস্থ থাকেন।

অবশ্য তখনো যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে আগের কাজই করাতে হয়েছে। এখনো বিভিন্ন পদে সেটাই চলছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত প্রশাসনে মোট কর্মকর্তা আছেন ৬ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে সিনিয়র সচিব, সচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন ৮৪ জন এবং গ্রেড-১ পদের কর্মকর্তা আছেন ১৫ জন। এই পদে নির্দিষ্ট পদসংখ্যা নেই।

অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ রয়েছে ২১২টি। এর সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে থাকা প্রায় ১২৫টি পদ মিলে মোট পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টি (কিছুটা কমবেশি হতে পারে)। অথচ ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত সচিব ছিলেন ৩৪৩ জন। অন্যদিকে যুগ্ম সচিবের পদ রয়েছে ৫০২টি। কিন্তু কর্মকর্তা আছেন ১ হাজার ২৭ জন। সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন ১ হাজার ৮৭৩ জন এবং সহকারী সচিবের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৩। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত কোনো নির্দিষ্ট পদসংখ্যা নেই।

বারবার পদোন্নতি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এর পর থেকেই জনপ্রশাসনসহ সরকারি চাকরিতে একের পর এক পদোন্নতি দেওয়া হয়। ‘বঞ্চিত’ দাবি করে কর্মকর্তারা বিক্ষোভও করেছেন। ওই সময় আগে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁরা আর্থিক সুবিধা ও মর্যাদা পেয়েছেন। তবে জনপ্রশাসন তাঁদের কোনো কাজে লাগাতে পারেনি। সম্প্রতি অন্যান্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৭৮৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়মিত পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে (আগে অবসরপ্রাপ্তদের বাইরে)। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট উপসচিব পদে ২৬৮ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁদের অধিকাংশ ৩০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০২২ সালে চাকরির ১০ বছর পূর্ণ করে তাঁরা পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন। প্রশাসনে চাকরির বয়স ১০ বছর বা সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৫ বছর পূর্ণ হলে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়।

জনপ্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, উপসচিব পদে পদোন্নতির পর অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই পদোন্নতি হতে পারে।

পদোন্নতি যেভাবে

প্রশাসনে উপসচিব ও তার ওপরের পদে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তা বাছাই করা হয় সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি)। এই বোর্ডের সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি ও পদায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়। এই কমিটিতে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। কমিটির সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এরপর পদোন্নতি-পদায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আগেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আর হুট করে নতুন পদ সৃষ্টি করা যায় না, আবার পদোন্নতিও দিতে হয়। তাই সুপারনিউমারারি পদ (একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদের বাইরে পদোন্নতি) সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

পদ না থাকার পরও পদোন্নতির বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের আগে ইনসিটু পদায়ন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য পদে পদায়ন দেওয়া হয়।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ সৃষ্টি করার উদ্যোগ বিগত সরকারও তেমন একটা নেয়নি। বর্তমান সরকারও এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী নয়।

এ ছাড়া বিগত সরকারের সময়ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হতো, এখন হচ্ছে। বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রেখে অনেককে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সচিব পদের ১০ কর্মকর্তা ওএসডি (প্রশাসনিক) রয়েছেন। একই পদে ১২ জন রয়েছেন চুক্তি ভিত্তিতে। তবে মোট ওএসডি কর্মকর্তা কত, সেই তথ্য দিতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত এক বছরে (৪ আগস্ট পর্যন্ত) সচিব বা সিনিয়র সচিব ৯ জন, গ্রেড-১ পদে ১ জন এবং অতিরিক্ত সচিব ১৯ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত ১৬৪ জন কর্মকর্তা কর্মকাল শেষে স্বাভাবিক অবসরে গেছেন।

মূল সুপারিশের বাস্তবায়ন নেই

বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এগুলোকে ১৩টি সার্ভিসে একীভূত করার সুপারিশ করেছে—প্রশাসনিক, বিচারিক, জননিরাপত্তা, পররাষ্ট্র, হিসাব, নিরীক্ষা, রাজস্ব, প্রকৌশল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি সার্ভিস। ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয় ‘প্রশাসনিক সার্ভিসের’ পদগুলো মাঠ প্রশাসনে সীমাবদ্ধ থাকবে। সুপারিশ অনুযায়ী, প্রশাসন কর্মকর্তাদের শুরুর পদের নাম হবে এখনকার মতো সহকারী কমিশনার। মাঠপর্যায়ে তাঁদের শীর্ষ পদ হবে বিভাগীয় কমিশনার; যাঁদের পদমর্যাদা হবে গ্রেড-১, যা সচিবের সমান। তবে এই সার্ভিসের জন্য একটি শীর্ষ পদ থাকবে, নাম হবে ‘প্রধান কমিশনার’, যিনি বিশেষ গ্রেড পাবেন, যা মুখ্য সচিবের সমান। এর সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য সার্ভিসের জন্যও ভিন্ন নামে পদ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে সচিবালয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদ নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)’ গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এসইএসে আসতে পারবেন। কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে প্রস্তাবিত প্রশাসনিক সার্ভিসের (বর্তমান প্রশাসন ক্যাডার) ৭৫ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার। যদিও এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে শূন্য পদ বিবেচনায় সরকারি কর্ম কমিশনের অধীন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেটি মানা না–মানা সরকারের বিষয়। তিনি বলেন, তাঁদের সুপারিশের আলোকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় স্থায়ী জনপ্রশাসন কমিশন করার বিষয়ে প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। যদি এটি করা হয়, তাহলে আশা করা যায় পর্যায়ক্রমে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হবে।

‘সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে’

পদ না থাকলেও পদোন্নতি ছাড়া বিগত সরকারের আমলে জনপ্রশাসন নিয়ে কয়েকটি বিষয়ে সমালোচনা ছিল—এক. কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া। দুই. গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় বিবেচনায় পদায়ন। তিন. প্রকল্পের গাড়ি সরকারের পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে কর্মকর্তাদের ব্যবহার।

বর্তমান সরকারের আমলে সম্পদের হিসাব নেওয়া হয়েছে। তবে পর্যালোচনা করে দেখা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো পদায়নের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করছে। প্রকল্পের গাড়ি ফেরত নেওয়া হয়নি। পদোন্নতিও আগের মতোই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এ কারণে হয়তো সমঝোতার জন্য পদোন্নতি ও নতুন বেতন কাঠামোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিগত আমলে বঞ্চিত ব্যক্তিরা পদোন্নতি চাইছেন।

বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, এর মাধ্যমে একটি ধারণা তৈরি হচ্ছে যে চাপ দিলেই পদোন্নতি পাওয়া যায়। আদর্শিকভাবে পদোন্নতি হওয়া উচিত মেধার ভিত্তিতে। সরকার চাইলে পর্যালোচনা করে দেখতে পারে পদ বাড়ানো যায় কি না।

প্রথম পাতার আরেক খবরে বলা হয়, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে স্ববিরোধিতা বলে মনে করছে বিএনপি।

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ চারটি রাজনৈতিক দল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় রাস্তায় কর্মসূচি দেওয়া অনেকটা স্ববিরোধিতা। তবে অবশ্যই যেকোনো দলের কর্মসূচি দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। তারা কর্মসূচি দিতে পারে।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের দাবির মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি কখনো ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না। এখন কোনো দল তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে চাইলে দিতে পারে। কিন্তু জনগণের নামে এক দলের আদর্শ বা দাবি অন্যদের ওপর আরোপ করা কতটা সঠিক, সেটা দেখতে হবে।

জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বলেছি, শুধু প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না। আগে আইন ছিল না, এখন আইন হয়েছে। কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত। এখন ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে চাইলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করার অধিকার আছে। তারা যদি রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কর্মসূচি দেয়, তাদের মাঠের রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব বিএনপি মাঠের বক্তৃতার মাধ্যমেই দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়