মনজুর এ আজিজ : ২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সোমবার রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
ইউএনএফপিএ জানায়, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৫৭ লাখে। এর মধ্যে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১১ কোটি ৭১ লাখের বেশি, যা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। তবে বাংলাদেশে বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানায় সংস্থাটি। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ) সুফল অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, ২০২৫ সালে বিশ্বে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২০ কোটি (৮ দশমিক ২ বিলিয়ন)। আর বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ (১৭৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন), যার অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১১ কোটি ৫০ লাখ (১১৫ মিলিয়ন) কর্মক্ষম। এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল অর্জনের একটি সুযোগ। জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী, যা বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৩০ লাখ (প্রায় ৩৩ মিলিয়ন) কিশোর-কিশোরী এবং ১০-২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি (৫০ মিলিয়ন), যা জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জরিপ, একাডেমিক গবেষণা ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রজননপ্রবণতা ও প্রজনন অধিকার সম্পর্কিত একটি গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
কামকং বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানুষ, বিশেষত নারী ও যুবকেরা পদ্ধতিগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা পূরণে অক্ষম। বাংলাদেশের প্রজনন হার (টিএফআর) ২ দশমিক ১, যা মধ্যম স্তরে রয়েছে। তবে দেশের কিছু অঞ্চলে এখনো কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের হার বেশি, যা বাল্যবিবাহ, জন্মনিরোধ ব্যবস্থার সীমিত ব্যবহার এবং যৌনশিক্ষার অভাবে হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ এবং সাধারণ বাজেটের ২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করছে। আমরা আশা করি, এটি জিডিপির ৫ শতাংশ এবং সাধারণ বাজেটের ১৫ শতাংশ হবে। কারণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বে তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রজনন হার ব্যাপকভাবে কমেছে। সেখানে নারীরা গড়ে মাত্র দশমিক ৮ শিশু জন্ম দিচ্ছেন, যা পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে আফ্রিকার কিছু দেশে জন্মহার এখনো বেশি। সেখানে গড়ে ৫ দশমিক ৮ শিশু জন্মহার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নাইজার।