শিরোনাম
◈ তদবিরে পাত্তা না দিলে তখন শুরু হয় গালাগালি, ভারতের দালাল বানানো হয়: আসিফ নজরুল (ভিডিও) ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পে আ‌র্জেন্টিনার রিভার প্লেট হা‌রিয়ে শেষ ষোলোতে ইন্টার মিলান ◈ ইসরায়েলের পাশে যে দেশগুলো দাঁড়িয়েছে, তালিকা দেখে নিন! ◈ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে তো কি হয়েছে, ‘ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে ফিলিস্তিনের মত হবে’ লেখা চিরকুটে ◈ আমাদের সকল যোদ্ধা বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল চেপে রেখেছে: আইআরজিসি-এর কমান্ডার (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশে পাচারের জন্যই ফেনসিডিল তৈরি করে ভারত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন ◈ যে ৪ কারণে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ফের শুরু হতে পারে ◈ ভারতে আটকা ব্রিটিশ এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান ঘিরে রহস্য, নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে যুক্তরাজ্য ◈ আজ শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা, কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে আছে

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ১০:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২৫, ০১:২৭ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

এনসিপি নেত্রীর কাছে দুদক টাকা চেয়েছে অভিযোগ হাসনাতের, কী বলছে সংস্থাটি

এল আর বাদল: স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল এক লাখ টাকা"–– ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর লেখা এমন একটি পোস্ট নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মি. আব্দুল্লাহ ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "আপনার নামে দুর্নীতির কোন অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব থাকার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।"

তবে "যাচাই-বাছাই ছাড়াই" মি. আব্দুল্লাহ দুদকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার রাতেই ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

এছাড়া, একটি প্রতারকচক্র মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছে বলেও দুদক দাবি করে।

মি.আব্দুল্লাহ যার কাছে দুদকের টাকা চাওয়ার কথা বলেছেন, সেই মাহমুদা মিতু পেশায় চিকিৎসক। পাঁচই অগাস্টের পর গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি'র ডেপুটি চিফ অর্গানাইজার তিনি।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে মাহমুদা মিতু বিবিসি বাংলাকে জানান, গত পাঁচই মার্চ বাংলাদেশে আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রিসেন্টের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর দুই মাস পরই মে মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল।

আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল চৌঠা মে রেড ক্রিসেন্টে অভিযানে যায়। এরপরই একটি সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরে মাহমুদা মিতুর নাম আসে।

সে সময় 'মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর' সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এরপর ওই বিষয়ে মিজ মিতু দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলামের সাথে সে সময় কথা বলেন।

মিজ মিতুর বিরুদ্ধে "কোনো অভিযোগ নেই" এবং আওয়ামী লীগের আমলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছিল বলে তাকে আশ্বস্ত করেন তিনি।

এ তথ্য জানিয়ে মিজ মিতু বলেন, "আমাকে এখান থেকে সরানোর জন্য খুব একটা চেষ্টা চললো। সেটা বুঝলাম যখন একটা পত্রিকায় নিউজ করলো–– আমি এখানে দুর্নীতি করছি, বদলি বাণিজ্য করছি। অথচ আমি আসছি এখানে তখন মাত্র দুই মাস। এখানে কোনো নিয়োগ হয় নাই, দুর্নীতির মতো কিছু হয় নাই।"

তবে গত ছয়ই জুন বাংলাদেশের আরও একটি সংবাদপত্র আবারো তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করে।

মে মাসের ঘটনা এখন আবার কীভাবে আলোচনায় এসেছে এমন প্রশ্নে মিজ মিতু বলেন, "দুই - একদিন আগে আবার দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করা হয়।"

এরপরই দলের নেতা মি. আব্দুল্লাহকে জানালে মঙ্গলবার ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দেন তিনি। দুদকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন মি. আব্দুল্লাহ। একই সাথে 'এক লাখ টাকা দাবি করার পর ৩৫ হাজার টাকায় দফা - রফা' হওয়ার কথা দাবি করে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের তিনটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।

-- দুর্নীতির ক্লিয়ারেন্স নিতে হলেও টাকা দিতে হবে ---

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেত্রী মাহমুদা মিতু দলটির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহকে ঘটনার বিষয়ে আগেই অবহিত করেছেন বলে জানান।

আটই মে দুর্নীতির বিষয়ে 'ক্লিয়ারেন্স' দিয়ে চিঠি নেওয়ার জন্য 'দুদকের কর্মকর্তা' পরিচয়ে যখন মিজ মিতুকে ফোন করা হয় সেদিন তার সাথেই ছিলেন মি. আব্দুল্লাহ।

মিজ মিতু জানান, সে সময় রেড ক্রিসেন্টের একজন অফিস সহকারীকে ওই ক্লিয়ারেন্সের চিঠি আনতে দুদকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে 'চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য' টাকা দাবি করা হয়।

৫০০ টাকা দেয়ার কথা বললেও সে সময় দুদকের কর্মকর্তারা এ কথায় 'নাখোশ' হন বলে দাবি করেন তিনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে তার কাছে এক লাখ টাকা চাওয়া হয় বলেও দাবি করেন মিজ মিতু।

হাসনাত আব্দুল্লাহর তা ফেসবুকে যে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন পোস্ট করেছেন, সেই অডিও কলে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে ঘুষের টাকা নিয়ে দর কষাকষি করতে শোনা যায়। এই আলাপের এক পর্যায়ে ৩৫ হাজার টাকায় রফা হতে শোনা যায়।

রেড ক্রিসেন্টে আওয়ামী লীগের অফিসার যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তারাই তার বিষয়ে 'দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ' ওঠানোর নেপথ্যে রয়েছেন বলে দাবি করেন মাহমুদা মিতু।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে মিজ মিতু বলেন, "রেড ক্রিসেন্টে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি দ্বারা। আওয়ামী লীগের অফিসাররা এখান থেকে কিন্তু একজনও সরে নাই। তারা স্বপদে বহাল আছে। আমি আসার আগে উনাদের কাউকে কাউকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

উনারা আবার আসার জন্য খোঁচাখুঁচি করা শুরু করে। উনাদেরকে কেউ কেউ সাপোর্ট দেয়। আমি মনে করি আওয়ামী লীগের লোকদেরকে সরানো ও সাপোর্ট না দেওয়ার কারণেও এটার পেছনে ভূমিকা আছে এবং তারা দুদকের সাথে মিলে এই কাজটা করছে," বলেন মিজ মিতু।

এনসিপি নেতা মি. আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে দুদকের দুর্নীতির বিচার দাবি করেছেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি।

প্রতারক চক্রের ওপরে দায় দুদকের ----

মঙ্গলবার রাতেই মি. আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দুদক। এতে বলা হয়েছে, "পোস্টটিতে তিনি (হাসনাত আব্দুল্লাহ ) যাচাই-বাছাই ছাড়াই কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন।"

এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একটি প্রতারকচক্র মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলছে বলে দাবি করেছে দুদক। "একটি প্রতারকচক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোন সম্পর্ক নেই।"

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বিভিন্ন সময় এই নম্বর থেকে দুদকের নামে চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ আছে। জিডিও করেছে অনেকে। দুদক এর আগেই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ বিষয়ে জানিয়েছে। জিডিও করেছে।

এনসিপি নেত্রী মাহমুদা মিতুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে উত্তর দেননি মি. ইসলাম।

তবে দুদক এই প্রেস রিলিজের সমালোচনা করেছেন মিজ মিতু। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "দুদক তাহলে তারা প্রতারক চক্রকে ধরে না কেন?

একইসাথে ফেসবুক পোস্ট দেয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দুদকের এই প্রেস রিলিজ দেয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

বিবিসি বাংলাকে মিজ মিতু বলেন, "সাথে সাথে প্রেস রিলিজ দিয়ে তারা জানালো তাদের কোনো কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িত না। ওনারা কীভাবে শিওর হলেন যে ওনাদের কোনো কর্মকর্তারা এর সাথে জড়িত নয়। এটা বলতে পারতো কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হবে। আমি শিওর এর ভেতর দুদক কর্মকর্তারা জড়িত আছে।"

দুদক প্রতারকচক্র ধরতে না পারছে না কেন, তাহলে দুর্নীতির রাঘব-বোয়ালদের ধরা সম্ভব হবে কি না–– এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ জনসংযোগ কর্মকর্তা মি. ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়