ইসরায়েলের টানা হামলার মুখে ইরানে বিশেষ করে রাজধানী তেহরানে অবস্থানের ক্ষেত্রে মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ জন নাগরিককে পাকিস্তান হয়ে দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা, তেহরান ও ইসলামাবাদ থেকে কূটনৈতিক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কূটনীতিকেরা থাকেন— এমন একটি এলাকায় অনেকগুলো বাসভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ওয়ালিদ ইসলামের বাসভবনটিও রয়েছে। তবে হামলার সময় তিনি বাসার বাইরে ছিলেন।
ওয়ালিদ ইসলামের সঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে গতকাল মঙ্গলবার রাতে কথা হয়। তখন তিনি সরকারি কাজে তেহরান থেকে বেশ দূরে ছিলেন।
ঢাকা সময় আজ বুধবার ভোরে ফেসবুকে ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, নৌবাহিনীর বেজক্যাম্পের পাশে অবস্থিত সবগুলো বাসাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর নিজের বাসাটিও অক্ষত নেই—এমনটা তিনি শুনেছেন।
ইরান নৌবাহিনীর বেজক্যাম্পের পাশে হওয়ায় প্রতিটি বাসাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এমনটা উল্লেখ করে ওয়ালিদ বলেন, ‘আমার বাসার উদ্দেশে হামলা চালানো হয়নি।’
ইরানে ঝুঁকির মুখে থাকা বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সর্বশেষ কী অবস্থা—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ টি এম আবদুর রউফ মণ্ডল বলেন, এ বিষয়ে মিশন (দূতাবাস) তৎপর রয়েছে। ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মীদের পরিবারের সদস্য সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন। তাঁদের গতকাল তেহরান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কূটনীতিক আর কর্মীরাও রাতে সেখানেই অবস্থান করেন। আজ সকালে আবার দূতাবাসে এসে কাজ করেছেন। রাতে আবার তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। দিনের চেয়ে রাতে হামলা বেশি হওয়ায় তেহরানের বাইরে রাত কাটাতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ইরান ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক এমন ৭০ ব্যক্তিকে পাকিস্তান হয়ে স্থলপথে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশটির সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক সম্মতি পাওয়া ও তাঁদের পাঠাতে সপ্তাহখানেক লেগে যেতে পারে।
ইসলামাবাদে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা গতকাল জানান, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ চলছে। তবে ইরান থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রথম ব্যাচটি কবে নাগাদ পাকিস্তানে ঢুকতে পারবে, সে বিষয়ে এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হতে পারে। উৎস: আজকের পত্রিকা।