শিরোনাম
◈ উপদেষ্টারা দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেষ্টা করলে জনগণ মেনে নেবে না: রিজভী ◈ রিয়াল মা‌দ্রিদের জ‌য়ের দি‌নে বিদায় নি‌লেন দুই তারকা ফুটবলার  ◈ সরেজমিনে থানচি : আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশ নিয়ে কী জানা যাচ্ছে? ◈ ইং‌লিশ প্রিমিয়ার লিগে সেরা ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহ ◈ সংবিধান সংস্কার থেকে নির্বাচনকালীন সরকার: রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ও যুক্তি কী বলছে? ◈ বাংলা‌দে‌শের বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতলো নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল ◈ ভারত পা‌শে না থাকলে পিএস এ‌লে পা‌কিস্তা‌ন ক্রিকেট বো‌র্ডের  হাজার কোটি টাকার ক্ষতি ◈ গাজার একদিনে ১০০ লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের বিমান হামলা ◈ তিন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন : প্রেস সচিব ◈ প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুই বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াত (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৪ মে, ২০২৫, ১২:১৬ রাত
আপডেট : ২৫ মে, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

​বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: প্রয়োজন বাণিজ্য কূটনীতি

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। স্থল বন্দর দিয়ে ভারত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় ভারতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করতে চার-পাঁচগুণ বেশি খরচ হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ছাড়া আর যেসব পণ্য ভারতে যায়, সেগুলোর গন্তব্য সেভেন সিস্টার্স।

 বাংলাদেশের কিছু শিল্প ওই বাজারকে লক্ষ্য করেই বিস্তৃত হয়েছে। ভারত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে ওই  শিল্পগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে এটা ভারতের ব্যবসায়ীদের জন্যও ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশ কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে সংকট আরো বাড়তে পারে। তাই দুই সরকারের আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বাণিজ্যিক কূটনীতিতে জোর দিতে বলছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সরকারকে সেই অনুরোধই জানিয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এলো।

ভারতের সিদ্ধান্ত: বাংরাদেশের স্থল বন্দর থেকে ভারত আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় গত শনিবার। তাতে বলা হয়েছে,

ভারতের কোনো স্থলবন্দর ব্যবহার করেই দেশটিতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করতে পারবে না। কলকাতার হলদিয়া বন্দর ও মুম্বাইয়ের নব সেবা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা যাবে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না।

পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়েও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। ফলে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা দিয়ে এসব পণ্য রপ্তানি হবে না। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, কোচবিহারসহ ওই এলাকায় বাংলাদেশের এসব পণ্যের চাহিদা বেশ।

ভারত বাংলাদেশের মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। পাশাপাশি ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।

ভারতের বিধিনিষেধ শনিবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। ফলে তৈরি পোশাক বহনকারী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আটকা পড়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯টি  ট্রাক খাদ্য পণ্য বুড়িমারি বন্দর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেনি। আরো কিছু পণ্য সীমান্ত থেকে ফেরত আনা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জনিয়েছেন। অর্ডারের পন্য উৎপদনও স্থহিত রাখা হয়েছে।

দুই দেশের বাণিজ্য: বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র হিসাবে, ভারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩.৭৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে।

অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর বড় অংশ শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য। ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার বাংলাদেশ।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির শীর্ষ ১০ রপ্তানি গন্তব্যের ৮ নম্বর ছিল বাংলাদেশ। মোট রপ্তানি আয়ের ২.৫৫ শতাংশ এসেছে বাংলাদেশ থেকে।

বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষ ১০টি রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে ভারত একটি।

তৈরি পোশাকের বাইরে বাংলাদেশ ভারতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, ফ্রুট ড্রিংক, পানীয়, শর্ষের তেল, কেক ইত্যাদি পণ্য বেশ ভালো রপ্তানি হচ্ছিল। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার চামড়াজাত পণ্যেরও বাজার আছে। একমাত্র তৈরি পোশাক ছাড়া ভারতে অন্য যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার গন্তব্য  ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য।  সেগুলো হলো: অরুণাচল, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয় ।

বাংলাদেশ থেকে বছরে ভারতে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ১৬ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য, ৪.৪ কোটি ডলারের প্ল্যাস্টিক পণ্য, ৩.১৩ কোটি ডলারের তুলা ও তুলার সুতার জুট এবং ০.৬৫ কোটি ডলারের ফার্নিচার রপ্তানি হয়। এইসব পণ্য সড়কপথে রপ্তানি হওয়ায়  অল্প সময়ে এবং কম খরচে এতদিন রপ্তানি হতো। এখন কোলকাতা বন্দরে নিয়ে সেখান থেকে সড়ক পথে চিকেন নেক দিয়ে ওই রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠানো অনেক খরচ আর সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

ব্যবসায়ীরা যা বলছেন: বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন," প্রতিবছর আমরা ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করি ভারতের বাজারে। তার ৫০ শতাংশই যায় উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যে। ওই সাত রাজ্যে পণ্য পাঠাতে আমরা উত্তর-পূর্ব ভারত সংলগ্ন স্থল বন্দর ব্যবহার করতাম কিন্তু ভারতের সিদ্ধান্তের ফলে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আখাউড়া, তামাবিল, চাউলা, ডাউকি, সুতারকান্দি, বুড়িমারি পোর্ট দিয়ে আর পণ্য যা বেনা। আমরা উত্তর-পূর্ব ভারতে আর কোনো পণ্য পাঠাতে পারবো না। আমাদের পণ্যবাহী ১৯টি ট্র্রাক শনিবারের সিদ্ধান্তের কারণে আর ভারতে যেতে পারেনি।”

"আমাদের এখন কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে হবে। কিন্তু সেটা সময় এবং খরচ দুইটাই অনেক বাড়াবে। আমরা স্থল বন্দর দিয়ে এক থেকে ছয়দিনে ভারতের যে-কোনো জায়গায় পণ্য পাঠাতে পারতাম। কিন্তু যদি আমরা সমুদ্র পথে যাই  তাহলে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে। কোলকাতা বন্দর ব্যবহার করলে ১৫ দিন সময় লাগবে। আর খরচ স্থলবন্দরের চেয়ে তিনগুণ বেড়ে যাবে,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, প্রাণের কাছে এখন ছয় মিলিয়ন ডলারের পণ্যের অর্ডার আছে। এখন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। আর সীমান্তে আটকে যাওয়া পণ্য ঢাকায় নিয়ে এসেছেন।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, " আমরা সরকারের সঙ্গে বসেছি। বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে এখন মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কাউন্টার কিছু না করে ভারতের সঙ্গে কথা বলে সরকারের উচিত হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা। আর আমরাও ভারতে যারা আমাদের কাউন্টার পার্ট আছে, যারা আমাদের পণ্য নেয় তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও তাদের দিক থেকে চেষ্টা করছে।”

আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোমল পনীয় জুস ছাড়াও মুড়ি, বিস্কুট এসব রপ্তানি করে ভারতে। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং মাইদুল ইসলাম জানান, " আমরা আপাতত ভারতে রপ্তানি আদেশের  পণ্য উৎপাদন স্থগিত রেখেছি। সমুদ্র বন্দর দিয়ে রপ্তানি করলে আমরা খরচে পোষাতে পারবো না। কারণ, আমাদের পণ্য প্রধানত যায় সেভেন সিস্টার্সে। ”

"আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে আমরf মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বিকল্প বাজার খুঁজবcf। আমাদের স্থানীয় বাজারের চাহিদা ভালো আছে। সেখানেও  সরবরাহ বাড়িয়ে দেবো। তবে এটা দুই দিকেরই ক্ষতি । কারণ, ভারতের ব্যবসায়ীরাও তো পণ্য নেয়ার জন্য অর্থ লগ্নি করেছেন।”

ড্যানিশ ফুড-এর হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ জানান, " প্রাণ সেভেন সিস্টার্সের বাইরে কিছু পণ্য পাঠায়। আর বাকি যারা আমরা আছি, আমাদের পুরো রপ্তানিই হচ্ছে সেভেন সিস্টার্সে। এখন যদি স্থল বন্দর দিয়ে শেষ পর্যন্ত রপ্তানি করা না যায় তাহলে আসলে রপ্তানিই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আমাদের অ্যাগ্রো ফুড অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভারতে রপ্তারি জন্য পাইপলাইনে যে পণ্য আছে, তার একটা হিসাব তৈরি করছি। সরকারকে দেবো। সরকার হয়তো সেগুলো নিয়ে কোনো একটা আলোচনা বা উদ্যোগ নেবে ভারতের সঙ্গে।”

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)-এর সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, "বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে চার কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য যায় ভারতে। বাংলাদেশে ৫০টির মতো কারখানা আছে যারা রপ্তানি করে। আমাদের কিছু পণ্য বর্ডার থেকে ফেরত এসেছে। আবার যে অর্ডার আছে সেগুলো নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। যেখানে সম্ভব উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।”

তার কথা, "এখন বিকল্প পথে দুইটি সমুদ্র বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির যে সুযোগ আছে, তা আমাদের জন্য কস্ট এফেক্টিভ না। আর আমাদের বাজার তো মূলত সেভেন সিস্টারে। এটা দুই পক্ষের জন্যই সমস্যা। আমরা যেমন রপ্তানি করি, ভারতের আমদানিকারকরাও তো আছেন। তাদেরও তো বিনিয়োগ আছে। আমরা এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)-র সঙ্গে রবিবার বসেছি। আশা করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা উদ্যোগ নেবে। সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। আর ভারতের উচিত ছিল একটা সময় দেয়া। তারা সেটা না করে হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিয়েছে।” 

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, " ভারতে বছরে ৬৫ মিলিয়ন ডলারের আসবাবপত্রসহ বিছানার সামগ্রি আমরা রপ্তানি করি। এখন পাইপলাইনে যা আছে, তা আটকে গেছে। পরে রপ্তানি কী হবে তার চেয়ে বড় চিন্তা এই পাইপ লাইনে আটকে যাওয়া পণ্য। আমরা ভারতে যারা আমাদের পার্টনার আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলছি। সরকারের সঙ্গেও কথা বলছি। এটা তো আর আমরা সমাধান করতে পারবো না। এটা দুই দেশের সরকারের বিষয়। তবে আমরা আশা করি, যেন একটা সমাধান হয়।”

ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজারও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিজিএমইএ'র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, " ভারতে  প্রকিবছর প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পেশাক রপ্তানি হয়।  ভারতে আমাদের রপ্তানির পথ এখন সীমিত হয়ে গেল। আমরা কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্র বন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে পারবো।  কিন্তু তাতে তো খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আর ছোট ছোট গার্মেন্টসগুলো সড়ক পথে দ্রুত পোশাক রপ্তানি করতে পারতো। এখন তো আর পারবে না। ”

"আসলে এখন আমাদের ব্যবসার দিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছে, তার জন্য তো  আমরা তিন মাস সময় পেয়েছি। কিন্তু ভারত কোনো সময় দিলো না,” বলেন তিনি।

চাই বাণিজ্য কূটনীতি: অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, " ভারতে যেসব পণ্য যায় তার মধ্যে একমাত্র তৈরি পোশাক ভারতের সবখানেই যায়। কিন্তু আর যেসব পণ্য যেমন ফুড, বেভারেজ, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্য- এগুলো মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে অনেক শিল্প ওই সাত রাজ্যকে টার্গেট করে বিস্তৃত হয়েছে। এখন দুইটি বন্দর দিয়ে যেতে পারবে। যদি কোলকাতা বন্দর হয়ে যেতে হয়, তাহলে অনেক খরচ আর সময় বাড়বে। বাংলাদেশি পণ্য তখন ভায়াবেল হবে না। আর মুম্বাই তো আরো বহু দূরে। তৈরি পোশাক কলকাতা বন্দর দিয়ে মেইনল্যান্ড ইন্ডিয়ায় গেলেও কমপক্ষে দুইগুণ বেশি সময় লাগবে। সড়ক পথে তিন দিন লাগলে এখন লাগবে ছয়-সাত দিন। ”

তার কথা, "এই সমস্যার সমাধান দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে করতে হবে। কোনো কাউন্টার ব্যবস্থা বাংলাদেশের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ, ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রধানত শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে। এগুলো ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ থেকে এত অল্প সময়ে এবং কম দামে আনা সম্ভব নয়। আর সেখান থেকে যে খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয় তা-ও কম দামে ও কম সময়ে আনা যায় বলে আমরা আনি। জরুরি প্রয়োজন মোকাবেলা করা হয়।”

"আসলে আমাদের এখন প্রয়োজন বিজনেস ডিপ্লোম্যাসি। পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা লাভবান হবে না। ভারত কী চায় তা আমাদের বুঝতে হবে। আবার ভারতকেও বুঝতে হবে আমরা কী চাই।” বলেন তিনি।

সরকার কী করছে?: রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস  চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, "আমি এরইমধ্যে যারা ভারতে পণ্য রপ্তানি করেন, তাদের সঙ্গে এবং স্টেক হোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেছি। কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছি। আমরা এখন যেটা বলছি, তা হলো, এটা দুই সরকারকে আলোচনা করার মধ্য দিয়ে একটা সমাধান খুঁজতে হবে। এটা জি টুজি'র বিষয়। আর ব্যবসায়ীদের দিক থেকে তারা ভারতে যাদের সঙ্গে ব্যবসা করে তাদের সঙ্গেও কথা বলবে। ভারতীয় ব্যবসায়ী যারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেয়, তারাও তাদের সরকারের সঙ্গে যাতে কথা বলে সেই চেষ্টা তাদের মাধ্যমে করা হবে।”

"আসলে ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো চিঠি তারা আমাদের দেবে না।  এটা একটা নোটিফিকেশন। ফলে চিঠি পাবো কি পাবো না সেটা প্রশ্ন নয়, যেটা আমরা আশা করতে পারি যে, একটা নির্দিষ্ট সময় দিলে ভালো হতো। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এটা অবশ্য ভারতে যারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করেন, তাদেরও ক্ষতি,” বলেন তিান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, " বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা এখনো করা হচ্ছে না। এটা ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়। এই ক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে, যাতে উইন উইন সিচ্যুয়েশন তেরি হয়।”

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রবিবার সচিবালয়ে বলেন, "ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যবসা চলমান থাকবে। ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনো অফিশিয়ালি কিছু জানি না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর ব্যবস্থা নিতে পারবো। যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয়, তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।”

তিনি আরো বলেন, " প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনই আমাদের বড় লক্ষ্য। এটা দুই দেশের জন্য লাভজনক বিষয়। আমরা মনে করি, ভারত নিজেও একটা টেক্সটাইল বা বস্ত্র শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ। এরপরও যখন আমাদের দেশ থেকে এসব পণ্য রপ্তানি হয়, সেটা আমাদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই হয়।”

বিকেএমইএ-র অনুরোধ : নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন  বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে জানান, " বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে (ভারতের আমদানি, বাংলাদেশের রপ্তানি) ভারত সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। চলমান রপ্তানি ক্রয়াদেশ (অর্ডার) ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধটি স্থগিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

তিনি আরো জানান, "আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে সরকার এটা নিয়ে  কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলবে। আসলে এটা না হলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ে যাবো।”

 

 

 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়