শিরোনাম
◈ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের ফোনালাপ, কী কথা হলো? ◈ ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্বের সুযোগ শেষ ◈ দেশের পথে খালেদা জিয়া ◈ টানা দুই দফা কমার পর আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম, ভরি কত? ◈ আদানি পাওয়ারের কাছে বাংলাদেশের বকেয়া প্রায় ৯০ কোটি ডলার! ◈ তথ্য-উপাত্ত সঠিক না থাকায় ফ্যাসাদ তৈরি হচ্ছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা ◈ চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া সমস্যা নিরসন হবে না: প্রধান উপদেষ্টা ◈ বাতাসের মান যাচাইয়ে রাজধানীর ২৫ যায়গায় বসবে আধুনিক যন্ত্র: ডিএনসিসি   ◈ অবৈধ অভিবাসন বন্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব ইতালির, আরও লোক নিতে আগ্রহী ◈ সারাদেশে ৫০০-এর বেশি ব্যক্তির একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে: এনআইডি ডিজি

প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০২৪, ০৫:১৫ বিকাল
আপডেট : ০১ মে, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবার তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাকে কেন গুলি করে মারা হলো

ঢাকার উত্তরায় গুলিতে নিহত তাজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামের তাজুল ইসলাম (৫৮)।

বাবার মৃত্যুর বিষয়ে একমাত্র ছেলে রেদোয়ান আহমেদ সিয়াম বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল একটি পুরোনো মাইক্রোবাস। একসময় বাবা নিজেই তা চালাতেন। পরে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাড়ায় দিয়ে টেনেটুনে সংসারের খরচ মেটাতেন।

১৮ জুলাই বাবা আমার আশুরার রোজা রেখেছিলেন, সারাদিন আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের কাছে একটি রেন্ট-এ-কারের অফিসে ছিলেন। বিকেলে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইফতারি নিয়ে আর ফেরা হয়নি। হঠাৎ গুলি এসে বাবার বুকটা ঝাঁজরা হয়ে যায়। চির দিনের জন্য আমরা ভাই বোনেরা এতিম হয়ে গেলাম। 

বুকের ভেতর গুলি রেখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরদিন বরুড়ার উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়নের গামারোয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয় বলে জানান সিয়াম। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও তাজুলের পরিবারের এখনও আহাজারি থামছে না। 

স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকার পূর্বাচল এলাকার কাঞ্চন ব্রিজসংলগ্ন উলুখোলা এলাকায় থাকতেন তাজুল। অর্থ সংকটে ছেলেমেয়েদের কেউই এসএসসির গন্ডি পেরোতে পারেননি। 

১৫ বছর বয়সী সিয়াম সংসারের হাল ধরতে দর্জির কাজ শিখছে। সিয়াম বলেন, ঘটনার দিন ঢাকা শহরের গোলাগুলির খবরে বাবাকে আমরা রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেছিলাম। বাবা দুপুরে জানান, তিনি উত্তরার একটি মসজিদের ভেতর আছেন। চালককেও গাড়ি রাস্তায় বের করতে দেননি। বিকেলে সংঘর্ষের সময় রাস্তায় উঁকি মারতেই গুলিবিদ্ধ হন। মোবাইলে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে বাবার গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পাই।

সেদিনের পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে সিয়াম জানায়, তখন হাসপাতালে রক্তাক্ত অনেক মানুষের চিৎকার আর আহাজারিতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। এত রক্ত কখনও দেখিনি। সিয়ামের ভাষ্য, আমার বাবার তো কোনো অপরাধ ছিল না। তিনি কোটা আন্দোলনে ছিলেন না। তাঁকে কেন গুলি করে মারা হলো? এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার? সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। কার কাছে বিচার চাইব। বাবার মৃত্যুর শোকে মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

নিহত তাজুলের ছোট ভাই রফিকুল ইসলামও ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালান। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। অন্য চালকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাস্তায় কেন নিরপরাধ লোককে গুলিতে মরতে হবে? অন্যদের কাছ থেকে জেনেছেন তাঁর ভাই বাসায় ফিরতে চেয়েছিলেন। তাই রাস্তার পরিস্থিতি দেখতে বের হন। এ সময় হঠাৎ গুলি এসে বুকে লাগে। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

তিনি বলেন, ভাই মারা যাওয়ার কারণে চিকিৎসকরা মরদেহের ভেতর থেকে আর গুলি বের করেননি। এ অবস্থায়ই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারটি অসহায় হয়ে গেল। সরকারি সহায়তা না পেলে তাদের রাস্তায় বসতে হবে।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়