শিরোনাম
◈ ১০ হাজারেরও বেশি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ◈ এখন পর্যন্ত কত টাকার সম্পদ জব্দ করেছে সরকার, জানালেন প্রেস সচিব ◈ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের শঙ্কা ঢাকাসহ ১৪ জেলায়, সতর্ক সংকেত ◈ ডিএসসিসি মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে উত্তাল নগর ভবন, মুখ খুললেন ইশরাক হোসেন ◈ বিশ্বব্যাপী ভারতের সর্বদলীয় কূটনৈতিক যুদ্ধ ◈ লুটপাটের অর্থ জনকল্যাণে ব্যবহারে বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ◈ বিএনপি গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে আন্দোলন করছে: উপদেষ্টা আসিফ ◈ বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ ‘বিয়ারিং ফেইলিওর’: তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন ◈ নুসরাত ফারিয়া মামলার ঘটনার দিন দেশে ছিলেন না, কানাডায় ছিলেন: আইনজীবী ◈ এগুলো বিচার নয়, হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন, ফারিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০২৫, ১০:৩৯ দুপুর
আপডেট : ১৯ মে, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বাংলাদেশি পণ্যে আমদানি বিধিনিষেধ নিয়ে ভারতের মিডিয়া কী বলছে?

এল আর বাদল : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক-সহ অন্যান্য বহু পণ্যের আমদানিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার (১৭ই মে) যে সব নতুন কড়াকড়ি ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, ভারতের বেশির ভাগ মূল ধারার সংবাদমাধ্যম সেটিকে একটি 'রেসিপ্রোকাল মুভ' বা 'পাল্টা পদক্ষেপ' হিসেবেই বর্ণনা করছে।

তাদের দাবি, সম্প্রতি ঢাকা ভারতের রফতানিতে যেসব অশুল্ক বাধা (নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার) আরোপ করেছে, তার জবাবেই দিল্লির এই সিদ্ধান্ত - ভারত নিজে থেকে এটি নেয়নি।

কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা 'সেভেন সিস্টার্স'কে 'স্থলবেষ্টিত' বলে অভিহিত করেন এবং বাংলাদেশকে ওই অঞ্চলের জন্য 'সমুদ্রের অভিভাবক' হিসেবেও দাবি করেন। ভারতের কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম অধ্যাপক ইউনূসের ওই মন্তব্যের সঙ্গেও দিল্লির সর্বশেষ সিদ্ধান্তের সম্পর্ক টানছেন। -- বি‌বি‌সি বাংলা

বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সব নিত্যনতুন কড়াকড়ি যে দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্রমাবনতিরই প্রতিফলন, তা নিয়েও ভারতের প্রধান খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে কোনও দ্বিমত নেই।
ভারতের প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দিল্লির এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছে, এই প্রতিবেদনে সেটাই সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।

-- বাংলাদেশ সরকারকে 'বার্তা দিতেই' এই সিদ্ধান্ত : দ্য হিন্দু--

দ্য হিন্দু'-র দিল্লি সংস্করণে এটি আজকের (১৮ই মে) প্রধান খবর। শিরোনাম হল, "সব স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের রফতানি বন্ধ করে দিল ভারত"।

খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক চীন সফরে মুহাম্মদ ইউনূসের করা মন্তব্যের পটভূমিতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে 'একটি বার্তা দিতেই' এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে পত্রিকাটিকে জানানো হয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা-সহ ভারতে আরও অনেকেই যে ওই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

'দ্য হিন্দু'কে সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, সম্প্রতি ভারত থেকে কটন ইয়ার্ন আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক কড়াকড়ি চালু করেছে – স্থলবন্দরগুলোতে এই সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করতে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তা ছাড়া ভারতের পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশের দিকে 'অ্যাগ্রেসিভ ইনস্পেকশন' বা কড়া তল্লাসির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও দিল্লি লক্ষ্য করেছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই ভারত শনিবারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেন।

-- ব্লো টু বাংলাদেশ': দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া--

এই খবরটি ভারতের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াতেও প্রথম পাতায় ঠাঁই পেয়েছে এবং তারা ভারতের এই সিদ্ধান্তকে 'ব্লো টু বাংলাদেশ' (বাংলাদেশের জন্য বড় আঘাত) বলে বর্ণনা করেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়াও এটিকে একটি 'রিটালিয়েটরি মুভ' বা প্রত্যাঘাতমূলক পদক্ষেপ বলে মনে করছে। অর্থাৎ তাদের মতে ভারত নিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি, বাংলাদেশের পদক্ষেপের জবাব দিতেই এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

তারা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত মাসেই বাংলাদেশ ভারত থেকে ইয়ার্ন (যা পোশাক তৈরির অপরিহার্য কাঁচামাল) ও চাল আমদানিতে বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল। তারও আগে অবশ্য ভারত তাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য পাঠানোর সুযোগ (ট্রান্সশিপমেন্ট) প্রত্যাহার করে নেয়।

দিল্লিতে একজন সরকারি কর্মকর্তা পত্রিকাটিকে বলেছেন, "দ্বিপাক্ষিক এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজের সুবিধামতো 'চেরি-পিক' করবে (মানে শুধু নিজের পছন্দেরটা বেছে নেবে) কিংবা ভারতের বাজারে অ্যাকসেস পাওয়া যাবেই বলে ধরে নেবে – এটা মেনে নেওয়া যায় না।"

তবে ওই কর্মকর্তা এটাও জানিয়েছেন যে ভারত এই সব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত – কিন্তু "পরিবেশে যাতে কোনও তিক্ততা না থাকে সেটা নিশ্চিত করা বাংলাদেশেরই দায়িত্ব।

-- রেসিপ্রোকাল মুভ': দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস--

ভারতের প্রথম সারির আর একটি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও দিল্লির এই সিদ্ধান্তকে 'রেসিপ্রোকাল মুভ' বলে বর্ণনা করেছে। তাদের মতে, গত মাসে বাংলাদেশ ভারতের রফতানিতে যে সব নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার (অশুল্ক বাধা) বসিয়েছে, তার জবাবেই এই পদক্ষেপ।

গত বছরের অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের অপসারণের পর এই সিদ্ধান্তকে ঢাকার বিরুদ্ধে দিল্লির সবচেয়ে শক্তিশালী 'পুশব্যাক' (ধাক্কা)-গুলোর অন্যতম বলেও বর্ণনা করেছে পত্রিকাটি।

এই খবরটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাতেও প্রথম পাতাতেই এসেছে। বেইজিং-এর মাটিতে দাঁড়িয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতকে মুহাম্মদ ইউনূসের 'স্থলবেষ্টিত' বলে বর্ণনা করার মাত্র মাসদেড়েকের মধ্যেই যে এই সিদ্ধান্ত এল, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছে ওই পত্রিকাটি।

"চীনের অর্থনীতির সম্প্রসারণের পটভূমিতেই" যে অধ্যাপক ইউনূস ওই মন্তব্য করেছিলেন, সে কথাও তারা উল্লেখ করেছে। রেডিমেড গারমেন্ট থেকে শুরু করে কটন ইয়ার্ন এই নতুন বিধিনিষেধের আওতায় পড়লেও মাছ, ভোজ্য তেল বা গুঁড়ো পাথরের মতো পণ্য কড়াকড়ি থেকে ছাড় পেয়েছে বলেও জানিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

-- বাংলাদেশ থেকে ৪২% আমদানি বাধাগ্রস্ত হবে : দ্য ইকোনমিক টাইমস--

ভারতের প্রথম সারির অর্থনৈতিক পত্রিকা দ্য ইকোনমিক টাইমস জানাচ্ছে, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ থেকে মোট আমদানির ৪২ শতাংশই বাধাপ্রাপ্ত হবে – আর্থিক অঙ্কে যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ কোটি ডলার।

ট্রেড রিসার্চ গ্রুপ 'গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ'-কে (জিটিআরআই) উদ্ধৃত করে তারা এই পরিসংখ্যান দিচ্ছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এখন প্রতি বছর ভারতে ৬১.৮ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করা হয় – যেটা এরপর থেকে কলকাতা ও নহভা সেভা (মুম্বাই) সমুদ্রবন্দর ছাড়া আর কোনও রুটে আনা যাবে না।

কিন্তু এই দুটো রুটই স্থলবন্দরের তুলনায় অনেক বেশি খরচ ও সময়সাপেক্ষ – ফলে বাংলাদেশ থেকে আমদানি স্বভাবতই নিরুৎসাহিত হবে।

বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'জিটিআরআই'-এর একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ওই পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, "ঢাকার 'ডিপ্লোম্যাটিক পিভট' বা কূটনৈতিক ভারসাম্য যে চীনের দিকে ঝুঁকছে – ভারতের এই সব বিধিনিষেধ তারই উত্তর বলে মনে করা যেতে পারে।

---  ভারতের পোশাক রফতানিকারীরা খুশি হবেন : এনডিটিভি---

ভারতের প্রথম সারির চ্যানেল এনডিটিভি বলছে, ভারতের অ্যাপারেল বা তৈরি পোশাক রফতানিকারীরা বহুদিন ধরেই সরকারের কাছে আর্জি জানিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক।

প্রথমে তৃতীয় দেশে রফতানির জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে এবং তারপর স্থলবন্দর বন্ধ করে দিয়ে সরকার তাদের দাবিই কার্যত মেনে নিল বলে এনডিটিভি-র প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। টেক্সটাইল খাতে ভারত ও বাংলাদেকে পরস্পরের 'বড় প্রতিদ্বন্দ্বী' বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।

চীনের মাটিতে দাঁড়িয়ে 'সেভেন সিস্টার্স' নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যও ভারত ভালভাবে নেয়নি, সে কথাও উল্লেখ করেছে এনডিটিভি।

-- কতটা প্রভাব পড়বে দিল্লির সিদ্ধান্তে : প্রশ্ন আনন্দবাজারে--

কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় এই সংক্রান্ত খবরটির শিরোনাম হল : 'স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে কত হাজার কোটির বাণিজ্য চলে বাংলাদেশের? কতটা প্রভাব পড়বে দিল্লির সিদ্ধান্তে?'

তারা ওই খবরে বলেছে, "ভারত সরকারের নির্দেশিকা মেনে এখন থেকে পোশাক, তেল, ফল বা সুতো এ দেশে রফতানি করতে হলে বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা জলপথ। তা ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এতে রফতানির পরিমাণ কমতে বাধ্য। ফলে বাংলাদেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়