শিরোনাম
◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০২৪, ১২:৩৫ দুপুর
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২৪, ১২:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাতিঘর ও প্রবাসে বইয়ের ভবিষ্যৎ 

অজয় দাশগুপ্ত: ‘বাংলা মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত বইয়ের ভবিষ্যৎ কী? বইয়ের পাঠক কি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে? আমাদের নতুন প্রজন্ম কি আর বই পড়বে না? ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই থেকে বিষয়টা নিয়ে আমিও ভাবছি। সত্যি কি বাংলা বইয়ের পাঠক সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে? বইয়ের ভবিষ্যৎ কি খুব খারাপ? আমেরিকায় গড়পড়তা সবাই মোটামুটি বই পড়েন। তারা বইকে জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছেন। বই ভালোবাসে না এখানে এমন লোক পাওয়া খুব কঠিন।  এদেশে রাস্তার ফুটপাথে বসে, বাসে, পাতাল ট্রেনে, পার্কের বেঞ্চে এমনকি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও এই বই পাগল মানুষগুলো বইয়ের রসে নিজেদের ডুবিয়ে রাখেন। কিন্তু গড়পড়তা বাঙালি কি বই পড়েন? নাকি তারা বই নামক বস্তুটি থেকে তাদের মুখ তুলে নিয়েছেন? বই কি শুধুই একটি পণ্য? পড়ার সময় কোথায়?  চা-শিঙাড়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা আর তর্ক-বিতর্ক করতে পারবেন কিন্তু একটা বই হাতে নিয়ে দেখার সময় আপনার হয়ে ওঠে না। আজ থেকে প্রায় এক শ বছর আগে সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত ‘বইকেনা’ রম্য রচনাটির কথা আবার নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।’-কথাগুলো আমার দারুণ লেগেছে ।

ঢালাও ভাবে বলা হয় মানুষ না কি এখন আর ব ই পড়ে না। কথাটা আংশিক সত্য। মানুষ আগের মতো ব ই পড়ে না। তাতে কী? মানুষতো আগের মতো রেডিও ও শোনে না। আগের মতো ক্যাসেটে গান শোনে না। তাতে কি রেডিও বা গানের জগত বন্ধ হয়ে আছে ? বরং নানা দৃষ্টিকোণে তাদের বাড় বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। মানুষ আগের ফর্মে হয়তো ব ই পড়ে না তা বলে ব ইপড়া বা পযার রেওয়াজ থামে নি। বলছিলাম এই কারণে, অষ্ট্রেলিয়ার বানিজ্যিক রাজধানী সিডনির ব ইয়ের দোকানগুলো এখনো সমানে ব্যবসা করছে। নতুন নতুন ব ইপত্রে ঠাসা এই দোকানগুলোতে ক্রেতা ও কম নয়।  একেকটি ব ইয়ের বিক্রি ও এডিশনের সংখ্যাই বলে দেয় ব ইয়ের জগত যেন আবার জেগে উঠছে। জেগে যে উঠছে সেটি বাঙালি ব ই মেলাতেও টের পাই। একেবারে নতুন লেখকদের ব ই ও চলে দেদার।

আমাদের এই কসমোপলিটন শহরে দুনিয়ার প্রায় সবদেশের মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশীরাও আছেন। ভালো ভাবে দাপটের সাথেই আছেন। বাড়তে বাড়তে প্রায় তিরিশ চল্লিশ হাজার বাঙালি মতান্তরে ৫০ হাজারের বেশী এই সংখ্যা এখন ফুলে ফেঁপে বটবৃক্ষ। কত রথী মহারথী আসেন যান। খবর রাখাও দায়। বিদেশের বাঙালি সজ্জন এই কথাটা সন্জীব চন্দ্র একটুও ভুল বলেন নি। তেমন কেউ আসলেই আমরা তাদের নিয়ে আসর পাতাই। অনুষ্ঠান হয় । সে অনুষ্ঠানে গাঁটের টাকা খরচ করে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অতিথিদের অনেকেই জানেন না এই ডলার যোগাড় করতে কাউকে ওভার তাইম কাউকে বেশী পরিশ্রম ও করতে হতে পারে। কিন্তু তাতে কী? আনন্দ আর আতিথেয়তা কি বন্ধ থাকে বাঙালির?

এবার এসেছিল দীপংকর দাশ। দীপংকরকে আপনি চেনে আর না চেনেন বাতিঘর নামটি নিশ্চয় ই আপনার চেনা। চেনা সে সব ব ইয়ের দোকান  যেগুলো বাতিঘর নামে আলো ছড়িয়ে চলেছে । বাতিঘরের কর্ণধার দীপংকরকে আমি চিনি অনেক বছর ধরে। সে যখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান পাঠাগার বা লাইব্রেরির ভ্যান গাড়ি নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল তখন থেকে জানি। জীবনের শুরুতেই পিতৃহারা দীপংকর সংগ্রামী যুবক। তার কাছে শেখার বিষয় এই, সংকল্প আর জেদ দিয়ে সে বৈরী পরিবেশকে বশে এনেছে । পেরেছে এমন একটা বাতিঘর প্রতিষ্ঠা করতে যার আলো চট্টগ্রাম ঢাকা সিলেট হয়ে এখন সারাদেশে আলো ছড়াতে চায় । এও এক ধরণের সামাজিক বিপ্লব । যখন মানুষ ব ই পড়া ভুলে ডিজিটাল মিডিয়ায় ই বুক পড়ছে যখন ভিডিও চাপে দৃশ্যমানতার প্রভাবে চোখ খুলে কান বন্ধ করে রাখছে তখন আবার পাঠকের ঘরে ঘরে ব ই পৌঁছে দেয়া বানিজ্যের পাশাপাশি এক মহতি সংগ্রাম ই বটে।

আমরা তাকে নিয়ে বসেছিলাম এক সন্ধ্যায় । প্রশান্তিকা নামে আমাদের যে লাইব্রেরি এবং ব ইয়ের প্রতিষ্ঠান তার মালিক আতিকুর রহমান শুভ ছিল উদ্যেক্তা । ছিল তার অনুজ এখন জনপ্রিয় লেখক আরিফুর রহমান। নামের তালিকা না দিয়ে বরং বলি অগ্রজ সমাজ কর্মী নেতা গামা আবদুল কাদিরের সূচনার পর সবাই মূলত: দীপংকরের কাছেপ্রশ্ন রাখছিল কি ভাবে প্রবাসীদের এর সাধে যুক্ত করা যায়? মানতে হবে প্রবাসীদের রেমিটেন্স গ্রহণে দেশের যতটা আগ্রহ তাদের স্বীকৃতির বেলায় ততটা দেখা যায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সময় পেলেই প্রবাসী কল্যাণে জোর দেয়ার কথা বলেন। তাঁর মতো করে সবাই ভাবলে পরিস্থিতি অন্য ধরণের হতো। কিন্তু সবাই জানেন এবং মানেন পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা এই প্রবাসীদের সবাই প্রায় স্বচ্ছল। আর এই স্বচ্ছলতা তাকে যা  ইচ্ছে কিনতে প্রলুব্দ করে। ফলে দীপংকরের বাতিঘর যে প্রশান্তপাড়েও বানিজ্যের ডানা বিস্তার করতে পারে এটাই সত্য ।

সে সন্ধ্যায় প্রশ্নোত্তর পর্বে লেখক সাফিন রাশেদ ও মনোবিদ জন মার্টিনের প্রশ্নগুলো ছিল যথাযথ। প্রকাশক উত্তর দিয়েছেন সঠিক ভাবে । বাংলা বাঙালির নবীন প্রবীন লেখকের সাথে বিদেশের ম্যাল বন্ধন না হলে জাতি হিসেবে আমরাই পিছিয়ে পড়ব। আমাদের সাহিত্যের অনুবাদ যে জরুরী সে কথা বলেছেন লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন। সমাজ কর্মী নোমান শামীমের কথাগুলো আমার ভালো লেগেছে। এমন অনুষ্ঠানের পেছনে থাকেন মোঃ শফিকুল আলম। যার সহৃদয় সহযোগিতা শিরোধার্য। সেদিন পূরবী পারমিতা বোসও দারুণ বলেছিল। 

এ সব ই অনুষ্ঠানের আলাপ। মূল কথা হচ্ছে প্রশান্তিকা'র যে ব ইঘরটি  সিডনিতে ছিল সেটি টেকে নি। তার এরপর আর শহরের কোথাও চেষ্টা করলেও মনে হয় তা নাই।অনুষ্ঠান আয়োজন করার পাশাপাশি সে লাইব্রেরিটি আবার চালু করার কথা ভাবা দরকার তাদের । অন লাইনে অর্ডার  দিয়ে বাড়ি বাড়ি ব ই পৌঁছানো বেশিদিন চলে না। সেটা চললে কলকাতার বাঙালি শ্রীমন্ত বাবু এতদিনে বিপ্লব করে ফেলতেন । আরেকটা সমস্যা হচ্ছে কয়েকটা অনুষ্ঠান আর আয়োজনের পর প্রবাসে এক ধরণের  অহমিকা বাসা বাঁধে। তখন কে যে কে আর কোনটা যে কি  সে জ্ঞান লুপ্ত হতে শুরু করে।  আমি আশা করি প্রশান্তিকাকে তা স্পর্শ করবে না। মনে রাখা দরকার ২৫তম বর্ষেও সিডনির বাঙালি বইমেলা তেমন কোন ক্যারিশমা তৈরী করতে পারেনি।

আমি আশাবাদী মানুষ। বাতিঘরের কর্নধার সিডনির সাধে কী যোগসূত্র তৈরী করবেন আর তাতে আমাদের ও বাঙালি জাতি বাংলাদেশের কি লাভ হবে সেটি দেখার আশায় থাকলাম। সম্পাদনা: রাশিদ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়