শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৩২ দুপুর
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নাম বিকৃতির পরিণতি ও ইসলামের নির্দেশনা

নাম মানুষের পরিচয়ের অন্যতম প্রধান অংশ। একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম শুধু দুনিয়াতে নয়, আখিরাতেও মর্যাদা বয়ে আনে। ইসলাম নামের গুরুত্বকে অত্যন্ত জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে।

রাসুল (সা.) সন্তানের সুন্দর নাম রাখতে বলেছেন এবং অনেকের নাম পরিবর্তনও করেছেন, যদি তাতে মন্দ অর্থ বা বিকৃত ধ্বনি থাকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে প্রায়ই নাম বিকৃতি বা নাম বিকৃতভাবে উচ্চারণ করার প্রবণতা দেখা যায়, যা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী।

সঠিক নামে ডাকার গুরুত্ব

কোরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে, মানুষকে তার নিজস্ব নামেই ডাকা উচিত।

আল্লাহ বলেন: “তোমরা একে অপরকে উপহাস করো না, একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নামকরণ অতি নিকৃষ্ট।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১১)

রাসুল (সা.) বলেছেন: “তোমরা সন্তানদের সুন্দর নাম দাও, কারণ কিয়ামতের দিনে তোমাদের নাম ও পিতার নামে ডাকা হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৮)

নাম বিকৃতির ক্ষতি

নাম বিকৃতির অনেক রূপ হতে পারে, তবে সবচে’ খারাপ হলো, নামকে খারাপ অর্থে বা মন্দ ইঙ্গিত করে ডাকা। বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে নাম বিকৃত করে ডাকা।
এগুলো কেবল সামাজিকভাবে অশোভনই নয়, বরং ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে ইসলামের অনেকগুলো বিধানের লঙ্ঘন হয়, যেমন:

 ১. অপমান ও ব্যঙ্গ – এটি অন্যকে কষ্ট দেওয়ার সমতুল্য, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

২. অর্থের বিকৃতি – নামের মূল অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, যেমন “আব্দুল্লাহ” থেকে “আবু” বানালে দাসত্বের অর্থ হারিয়ে যায়।

৩. পরিচয়ের বিভ্রান্তি – সামাজিক ও আইনগত দিক থেকেও নাম বিকৃতি সমস্যার সৃষ্টি করে।

৪. আল্লাহর অপ্রসন্নতা – কোরআনেই সরাসরি বলা হয়েছে, কারও নাম বিকৃত করা ঈমান পরবর্তী অবস্থায় বড় গুনাহের কাজ।

নবীজির নির্দেশনা

রাসুল (সা.) শুধু কু-অর্থবাহী নাম পরিবর্তনই করেননি, বরং বিকৃত বা অশোভন নামের পরিবর্তে সুন্দর নাম দিয়েছেন। এক সাহাবির নাম ছিল “হুযন” (কষ্ট), নবীজি তা পরিবর্তন করে “সাহল” (সহজ) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৯০)

তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে সবচেয়ে অপছন্দনীয় ব্যক্তি সে, যার নাম ‘খবীস’ (অশুভ বা মন্দ)।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৩৬)

এ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম নাম বিকৃতি বা মন্দ অর্থবাহী নাম ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করেছে।

মনীষীদের অভিমত

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, নাম বিকৃত করা মানুষের আত্মমর্যাদার উপর আঘাত হানে, যা ইসলামের নৈতিকতার পরিপন্থী।  (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারি, ভলিউম ১০, পৃ. ৫৭২, দারুল মাআরিফ, কায়রো, ১৯৫৯)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন: মন্দ নামে কাউকে ডাকা, এমনকি মজা করার জন্য হলেও হারাম। (নববী, শারহ সহিহ মুসলিম, ভলিউম ১৬, পৃ. ১৭৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

ইসলামে নাম বিকৃতি করা শুধু শিষ্টাচারবিরোধী নয়, বরং একটি গুরুতর গুনাহ। কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে—মুসলিমদের উচিত পরস্পরকে সুন্দর নামে ডাকা এবং কারও নাম বিকৃত বা ব্যঙ্গার্থে ব্যবহার না করা। আমাদের সামাজিক জীবনে এ বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়