শিরোনাম
◈ ট‌রে‌ন্টো‌তে হোঁচট খে‌লো মেসির ইন্টার মায়া‌মি ◈ ব্রিটিশ মেয়রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি আত্মীয়-স্বজনের জন্য ‘ভিসা জালিয়াতির’ অভিযোগ ◈ বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গ্রহণে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করল আইএমএফ ◈ বেনজীরের অর্থপাচার মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত ৪ দিনের রিমান্ডে ◈ প্রকাশ্যে নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, বললেন দেশ ছেড়ে পালাব না ◈ ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিতর্ক, যা বললেন উপাচার্য ◈ জনসভায় মৃত্যুর রোল, অবশেষে মুখ খুললেন থালাপতি বিজয় ◈ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক এগিয়ে নিয়েছি: সিইসি ◈ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, করা হলো সতর্ক ◈ ড. ইউনুসের কথা শুনে মনে হয়েছিলো, আমি জিয়াউর রহমানের কথা শুনাছিলাম: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৫৩ সকাল
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অভাব-অনটনের সমাধান মানুষের নয়, আল্লাহর দরবারেই : হাদিসের শিক্ষা

মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি বাস্তবতা হলো অভাব-অনটন। কখনও অর্থকষ্ট, কখনও খাদ্যাভাব, কখনও আবার বেকারত্ব বা নানা সংকট। জীবনের কোনো না কোনো অধ্যায়ে মানুষ এসবের মুখোমুখি হয়। প্রশ্ন হলো, এর সমাধান আমরা কোথায় খুঁজবো? মানুষের দুয়ারে নাকি আল্লাহর দরবারে?

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ نَزَلَتْ بِهِ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِاللَّهِ فَيُوشِكُ اللَّهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ‏"‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি অভাব-অনটনে পড়ে তা মানুষের নিকট উপস্থাপন করে তাহলে তার অভাব-অনটন দূর হবে না।

আর যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে তা আল্লাহ তা’আলার নিকট উপস্থাপন করে তবে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে দ্রুত অথবা বিলম্বে রিযিক দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস: ২৩২৬)

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এই হাদিস মানবজীবনের অর্থনৈতিক সংকট ও রিজিকের দর্শনকে গভীরভাবে তুলে ধরেছে। এখানে দু’টি দিকের প্রতি ইঙ্গিত আছে— একদিকে মানুষের কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে চাওয়া, অন্যদিকে আল্লাহর কাছে বিনয় ও আস্থার সাথে দোয়া করা।

মানুষের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়ার পরিণতি

মানুষের কাছে অভাব প্রকাশ করা প্রথমত আত্মসম্মানকে ক্ষুণ্ণ করে, দ্বিতীয়ত সমস্যার সমাধানও করে না। সাময়িকভাবে কিছু সাহায্য মেলে, কিন্তু প্রকৃত অভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। বরং অন্যের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়ার ফলে লজ্জা, অবমাননা ও নির্ভরতাহীনতার শৃঙ্খল আরও দৃঢ় হয়। রাসুল (সা.) অন্যত্র সতর্ক করে বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি মানুষের কাছে কিছু চাইবে, কিয়ামতের দিন সে মুখে কোনো মাংস ছাড়াই আসবে।” (মুসলিম, হাদিস: ১০৪০) অতএব, মানুষের উপর নির্ভরশীলতা একজন মুমিনকে দুর্বল করে দেয় এবং তার হৃদয় থেকে তাওহীদের দৃঢ়তা মুছে দেয়।

আল্লাহর দরবারে অভাব পেশ করার ফলাফল

কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করা হয়েছে— “আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য একটি পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন যা তার ধারণাতেও ছিল না।” (সুরা আত-তালাক, আয়াত:২-৩) এ আয়াতের মতোই এ হাদিসে বলা হয়েছে— যদি মানুষ আল্লাহর উপর আস্থা রাখে এবং অভাবকে তাঁর কাছে উন্মুক্ত করে, তবে আল্লাহ কখনোই তাকে হতাশ করেন না। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে সমাধান আসবে, নয়তো বিলম্বে; কিন্তু আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে রিজিক অবশ্যই পৌঁছে যাবে।

হাদিস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা

১. পরিশ্রম ও দোয়া একসাথে: ইসলাম পরিশ্রমকে পরিত্যাগ করতে বলে না। বরং কাজ করা, চেষ্টা করা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হওয়া হলো সুন্নাহ। তবে পাশাপাশি হৃদয়ের ভরসা রাখতে হবে শুধু আল্লাহর উপর।

২. মানুষের সাহায্য বৈধ, কিন্তু মূল নির্ভরতা আল্লাহর উপর: যাকাত, সদকা কিংবা বৈধ সহায়তা গ্রহণ করা শরীয়তে অনুমোদিত। কিন্তু সাহায্যের আসল উৎস হিসেবে মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া- তা নিরুৎসাহিত।

৩. অভিযোগ নয়, আর্জি:  মানুষের কাছে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বকে প্রদর্শন করা একটি অভিযোগের রূপ। কিন্তু আল্লাহর কাছে দোয়া করা হলো আর্জি— যা ইবাদতেরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপ।

আজকের যুগে মানুষ যতই সমৃদ্ধ হোক, সংকট তার পিছু ছাড়ে না। অভাবের সময় মানুষের কাছে গিয়ে অভিযোগ করা কেবল অপমান বাড়ায়, কিন্তু সমাধান আনে না। অথচ আল্লাহর দরবারে সেজদায় মস্তক রেখে, চোখের অশ্রু মিশিয়ে, আন্তরিকভাবে বললে- “হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কেউই আমার অভাব মেটাতে পারবে না”  তখন আসমানের অদৃশ্য ভাণ্ডার থেকে রিযিকের দুয়ার খুলে যায়।

অতএব, অভাব-অনটনে প্রকৃত সমাধান মানুষের দুয়ারে নয়, বরং আল্লাহর দরবারেই নিহিত। আর আল্লাহর কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া অপমান নয়— বরং সেটিই হলো এক মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্মান।

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়