মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্ধ্যা রাতে অর্থাৎ মাগরিবের পর ইশার আগ পর্যন্ত ঘুমানো অপছন্দ করতেন। ইশার পর না ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করাও অপছন্দ করতেন। আবু বারজা আল আসলামি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইশার আগে ঘুমানো এবং ইশার পর কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৭৪)
মহানবী (সা.) মাগরিবের পর কখনও ঘুমাতেন না, ইশার পর দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) ইশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং ইশার পর অহেতুক কথাবার্তা বা গল্পগুজব করে সময় নষ্ট করেননি। (সুনানে ইবনে মাজা: ৭০২)
হিশাম ইবনে উরওয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার বাবাকে (উরওয়া ইবনুয যুবায়ের) বলতে শুনেছি, একদিন ইশার পর আমার খালা আয়েশা (রা.) আমাকে কথা বলতে শুনলেন। আমরা এমন একটি ঘরে ছিলাম যার ছাদ আমাদের ঘর ও তার ঘরের মাঝে ছিল। তিনি বললেন, হে উরওয়া! এখন কিসের গল্পগুজব? আমি রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও ইশার নামাজের আগে ঘুমাতে দেখিনি, ইশার নামাজের পর কথা বলতেও দেখিনি। তিনি হয় ঘুমিয়ে পড়তেন অথবা নামাজ পড়তেন। (শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি: ৪৯৩৫)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, মহানবী (সা.) মাগরিবের পর বা সন্ধ্যায় না ঘুমিয়ে ইশার পর দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তেন। অহেতুক কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করতেন না। তিনি সন্ধ্যার ঘুম অপছন্দ করতেন এবং রাতের ঘুমকে গুরুত্ব দিতেন। তার জীবন ছিল রুটিনবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল। কেউ যদি সন্ধ্যার পর ঘুমায়, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে হয় তার ইশার নামাজ কাজা হবে অথবা সে ইশার নামাজের জন্য জেগে উঠবে এবং রাতে আর সে দ্রুত ঘুমাতে পারবে না। আর রাতে ঘুমাতে দেরি হলে তাহাজ্জুদ ও ফজরের জন্য জেগে ওঠা তার জন্য কষ্টকর হবে।
ঘুমের মূল সময় হলো রাত। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম বা ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আবরণ। (সুরা নাবা: ৯-১০)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা কথা শোনে। (সুরা রূম: ২৩)
ইমাম ইবনুল কাইয়িম তার ‘তিব্বুন-নববী’ গ্রন্থে বলেন, যদি কেউ নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম ও জাগরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, তবে সে দেখবে যে, তার ঘুম ছিল পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি রাতের প্রথম অংশে (ইশার পরপর) ঘুমাতেন এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম অংশে (তাহাজ্জুদের সময়) জাগ্রত হতেন, তারপর মিসওয়াক করতেন, অজু করতেন এবং নামাজ আদায় করতেন। এতে তাঁর শরীর ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজনও পূর্ণ হতো এবং একইসঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও সওয়াবও লাভ হতো। নবিজি (সা.) কখনো অতিরিক্ত ঘুমাতেন না। নিজের শরীরের জন্য যতটুকু ঘুম প্রয়োজন, ততটুকুই ঘুমাতেন। সূত্র: জাগো নিউস ২৪