চঞ্চল পাল, পশ্চিমবঙ্গ (ভারত): শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনও অবধি মৃতের সংখ্যা ২৮৮। আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধেয় ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে হাজির হন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেল, দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)। উদ্ধারকাজে ভারতের বিমানবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রাজ্য সরকার একযোগে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। নেমেছে সেনাও। ভারতীয় বায়ুসেনাও উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও মৃতদেহের খোঁজ চালাচ্ছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথাও বলেন। দক্ষিণ–পূর্ব রেল সূত্রে খবর, হামসফরের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হওয়ার কারণেই এতবড় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে। ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কা খায় একটি মালগাড়ির সঙ্গে। এরপর বেলাইন হওয়া করমণ্ডলের কামরায় ধাক্কা মারে যশবন্তপুর–হাওড়া এক্সপ্রেস।
ওড়িশার বালেশ্বর বাহানাগা স্টেশনের কাছে একটি মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় লাইনচ্যুত হয় এক্সপ্রেস ট্রেন। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৮টি বগি লাইনচ্যুত, মালগাড়ির ৫টি বগি উঠে গিয়েছে ট্রেনের ওপর। করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির ধাক্কা হয় বালেশ্বরের কাছে। এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা না গেলেও, হতাহতের সংখ্যা তিন শতাধিকের কাছাকাছি বলেই খবর সূত্রের। ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনায় আহত, নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হলো। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব টুইট করে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লাখ, গুরুতর আহতদের ২ লাখ এবং তুলনামূলক কম আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
সবরকম সহায়তায় ওড়িশা যাচ্ছে বাংলার প্রতিনিধি দল।
এই পরিস্থিতিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে টুইট করেছেন পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, ‘বালেশ্বরের কাছে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। আমাদের কিছু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ওড়িশা সরকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। জরুরি পরিষেবার কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে। নম্বর - ০৩৩-২২১৪৩৫২৬/ ২২৫৩৫১৮৫। উদ্ধার, পুনরুদ্ধার, সাহায্য এবং সহায়তার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চলছে।'তিনি টুইটে লিখেছেন, 'আমরা ওড়িশা সরকার এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য এবং উদ্ধারকার্যে সহায়তার জন্য ঘটনাস্থলে ৫-৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছি।' মুখ্যসচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ঘোষনা করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব।
ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়েছে একগুচ্ছ ট্রেন। বাতিল শিয়ালদা-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস, হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেস, হাওড়া-চেন্নাই মেল, শালিমার-সম্বলপুর এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-পুরী স্পেশাল সহ একগুচ্ছ ট্রেন। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথের পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও খবর সূত্রের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলায় লাইনচ্যূত হলে কলকাতার হাওড়া-চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস এ দুর্ঘটনায় পড়ে। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুর সোয়া তিনটায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি শালিমার স্টেশন ছেড়ে আসে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সেটি পৌঁছায় বালেশ্বরে। সন্ধ্যা সাতটা ২০ মিনিটে সেখানকার কাছাকাছি এলাকা বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ বগির ট্রেনটি। সূত্রের খবর, ওড়িশার বালেশ্বর স্টেশনের কাছে এই ট্রেনের একাধিক কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। মালগাড়ি ও এক্সপ্রেসের মুখোমুখি ধাক্কার ফলেই এই দুর্ঘটনা বলে জানা গিয়েছে। ট্রেনটি শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। আর চেন্নাই যাওয়ার আগেই ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা। কিন্তু কীভাবে একই লাইনে মালগাড়ি ও এক্সপ্রেস ট্রেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সম্পাদনা: রাশিদ
প্রতিনিধি/আর/এসবি২