শিরোনাম
◈ নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: কেন ক্ষুব্ধ মোদি সমর্থকেরা? আল–জাজিরার প্রতিবেদন ◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৯:২৩ রাত
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৩:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাশা আমিনের মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ইরান

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্ক: ইরানে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ প্রতিবাদ দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে এবার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিলো পুলিশ। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ তার মৃত্যু হয়েছে স্বাস্থ্যগত কারণে। যদিও ওই তরুণীর পরিবার ও বহু ইরানি নাগরিকের বিশ্বাস যে হেফাজতে মারাত্মক প্রহারের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিবিসি বাংলা

বিক্ষোভকারীরা বলছেন তারা যদি এখনই এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ান তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ত্রিশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন ইরানের মানুষ এমনিতেই ক্ষুব্ধ। দেশটির এলিট রাজনীতিকদের দুর্নীতি, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া, পারমানবিক আলোচনায় অচলাবস্থা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব তরুণদের সহ একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে হতাশ করে তুলেছে।

ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে দেশটির অন্তত আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে এবং ক্রমশ এই সংখ্যা বাড়ছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে এটাই বিক্ষোভের নতুন কোন ঘটনা নায়। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকের মতে আগের যে কোন ঘটনার তুলনায় এবারেরটায় ভিন্নতা আছে।

সমাজে পরিবর্তন এসেছে
নাগরিক অধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো অনেক দিন ধরেই ইরানের নারীদের ওপর দমন পীড়নের বিষয়টি তুলে ধরে আসছিলো। মূলত ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানি সমাজে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিপ্লবের পরপরই নারীদের হিজাব পড়তে বাধ্য করা হয় এবং তারা তাদের অনেক অধিকারও হারান। এর মধ্যে আছে ভ্রমণ ও কাজের অধিকার এবং সাত বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে রাখার বিষয়ও আছে। ওই সময় এসব পরিবর্তনের বিষয়ে পুরুষদের দিক থেকে খুব একটা কথা শোনা যায়নি। এখন অনেক পুরুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে যাতে বোঝা যাচ্ছে যে প্রগতিশীল দাবির প্রতি সমাজে পরিবর্তন এসেছে, বলছিলেন সুইডেন ভিত্তিক ইরানি সমাজবিজ্ঞানী মেহরদাদ দারভিশপোর। এবারের বিক্ষোভের প্রধান শ্লোগান হলো: 'নারী, জীবন, মুক্তি'-যা মূলত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও সমতার আহবান। এছাড়া এবারের বিক্ষোভে আগের চেয়ে অনেক বেশি অংশগ্রহণমূলক।

এর আগে ২০০৯ সালে কথিত গ্রিন মুভমেন্টের সময় নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনে মধ্যবিত্তরাই অংশ নিয়েছিলো। তখন বড় আন্দোলন হলেও সেটি বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। আবার ২০১৭ ও ২০১৯ সালের আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিলো দরিদ্রদের মধ্যে। কিন্তু এবারের আন্দোলনে মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী-উভয় শ্রেণীর মানুষের অংশ নেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আসলে একটি মেগা আন্দোলনের জন্ম দেখছি," বলছিলেন মিস্টার দারভিশপুর। এ আন্দোলনটি নারীদের নেতৃত্বে হচ্ছে কিন্তু তারা অন্যদেরও আন্দোলনে সামিল করতে সমর্থ হচ্ছে।

সরকারের বিকল্প
কর্তৃপক্ষ একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। মাশা আমিনের মৃত্যু সরকারের সমর্থকদের একটি অংশকেও ঝাঁকুনি দিয়েছে। এদের অনেকের মধ্যে কিছু ধর্মীয় পণ্ডিত আছেন। তারা নারীদের বিরুদ্ধে নৈতিক পুলিশ ব্যবহারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গাশ্ত-ই এরশাদ (আক্ষরিক অনুবাদ - নির্দেশ টহলদার) নামের এই বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মানুষ যাতে ইসলামি আদর্শ ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সেটা নিশ্চিত করার এবং কেউ "অনৈতিক" পোশাক পরেছে মনে হলে তাকে আটক করার।

ইরানে প্রচলিত শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বা চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও নারীদের শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে পা পর্যন্ত লম্বা ও ঢিলা পোশাক পরার বিধান দেশটিতে রয়েছে। সুতরাং এখন সরকারের হাতে দুটো বিকল্প আছে: একটি হলো হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম কানুন পরিবর্তন করা। আবার এটি করলে সেটি অনেক বিক্ষোভকারীকে সরকার পরিবর্তনের দাবি আদায়ের দিকে উৎসাহিত করে তুলতে পারে।

অথবা কোন কিছুই পরিবর্তন না করা এবং সহিংস দমন বা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা। এগুলো সাময়িকভাবে পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারে কিন্তু সেটি আসলে কেবল ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকেই উস্কে দেবে। পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য এখন দমন পীড়ন করছে তাদের অনেকেও চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছে। চলমান বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে তারাও হয়তো অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন। আবার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বয়স এখন ৮৩ বছর ।তার অসুস্থতার বিষয়টিও বহু ইরানি নাগরিকের চিন্তায় আছে। তার অবর্তমানে কে এই দায়িত্ব পাবেন এবং তিনি সরকারের কট্টর সমর্থকদের সমর্থন পাবেন কিনা তা পরিষ্কার নয়। তাই এটাই হয়তো শেষ অধ্যায় নয় কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সম্পাদনা: আলামিন শিবলী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়