শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কাজ করতে দেওয়া হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ৪৮ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগরে নতুন লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা, ভারী বর্ষণের শঙ্কা ◈ খেলতে গিয়ে নদীতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু, চলছে নিখোঁজ দুইজনের উদ্ধারকাজ ◈ শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায় ◈ তুরস্কে ১,৬০০ বছরের প্রাচীন ওয়াইন তৈরির কারখানা উদ্ধার! ◈ ভারতের ৩৯% অবিবাহিত মনে করেন বিয়ে আর জীবনের মাইলফলক নয়, এটি ঐচ্ছিক ◈ বাংলাদেশে চতুর্থ গণভোটের আলোচনা: সংবিধানে কী আছে, আগের অভিজ্ঞতা কী বলছে ◈ বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ কর‌লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হলো না?  ◈ নূর ভাই বেঁচে আছেন, সে বেঁচে থাকা মৃত‍্যুর চেয়ে একটু ভালো: অভিনেতা আফজাল হোসেন

প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৫০ সকাল
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উচ্চশিক্ষায় নিউজিল্যান্ড: নিরাপদ, আধুনিক ও সুযোগসমৃদ্ধ এক স্বপ্নভূমি

ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন সিলভার ফার্নের দেশ নিউজিল্যান্ড। এটি পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের ওশেনিয়া অঞ্চলে। দেশটিকে ‘শুভ্র মেঘের দেশ’ বলেও ডাকা হয়। চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিমণ্ডিত পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেশ নিউজিল্যান্ড। প্রকৃতির মতোই এখানকার শিক্ষাব্যবস্থারও রয়েছে নিজস্ব মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব, যা বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে এক উজ্জ্বল নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশটিকে।

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিষয়ে কথা হয় সিএইচএস এডুকেশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাজমুল হাসান রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা তার আধুনিকতা, গবেষণার সুযোগ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে। এখানে শিক্ষা শুধু পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান, সৃজনশীল চিন্তা এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে জোর দেওয়া হয়।’

নিউজিল্যান্ডে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান রাজু বলেন, ‘দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বৈশ্বিক চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, পরিবেশবিদ্যা, ব্যবসায় প্রশাসন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো খাতে নিউজিল্যান্ডের ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ফলে এখানকার স্নাতকেরা সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ পান।’

শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান—

শিক্ষার মানের দিক থেকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম বিশ্বব্যাপী। যেমন ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ড নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম ও সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিং–প্রাপ্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পেয়েছে এবং নিউজিল্যান্ডের প্রথম সারির গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। ওএস র‍্যাঙ্কিং ও টাইমস হায়ার র‍্যাঙ্কিং অনুসারে দেশটির প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের প্রথম পাঁচ শ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির ক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ডের অবস্থান ঈর্ষণীয়, প্রায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে সরাসরি কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারেন।

গবেষণা ও কাজের সুযোগ—

যাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাসের ইচ্ছা রাখেন, তাঁদের জন্য নিউজিল্যান্ডে গবেষণামূলক শিক্ষা (ডক্টরাল বা পিএইচডি) হতে পারে আদর্শ সিদ্ধান্ত। গবেষণাকালে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ সময়ের জন্য কাজ করার অনুমতি পান। পড়াশোনার চাপ কম, অনলাইনে পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাসে একবার সাক্ষাৎ করলেই যথেষ্ট। গবেষণা শেষে অতিরিক্ত দুই বছর কাজের অনুমতি দেওয়া হয়, যা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দারুণ সুযোগ।

সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফিতে কোনো পার্থক্য নেই। বছরে প্রায় চার হাজার ডলারে পিএইচডি করা সম্ভব, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারের সহায়তা পেলে অনেক সময় বিনা খরচেও ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়।

খণ্ডকালীন কাজের সুবিধা—

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে গড়ে ২৫ থেকে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। আর গবেষণামূলক পড়াশোনায় যুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সময়সীমা নেই, তাঁরা পূর্ণ সময়ের জন্য কাজ করতে পারেন, সঙ্গে তাঁর স্বামী বা স্ত্রীও ফুলটাইম কাজ করতে পারেন।

উচ্চশিক্ষা শেষে কাজ ও স্থায়ী বসবাস—

নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা সহজেই গ্রিন প্রফেশনাল রেসিডেন্সি পেয়ে থাকেন। মাত্র দুই থেকে তিন বছর থাকার পরই স্থায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। এই সুবিধা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে খুব কমই রয়েছে।

ভর্তি ও ভিসার নমনীয়তা—

নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিপ্রক্রিয়া নমনীয়। উচ্চ প্রতিযোগিতা নেই, বরং সরকার শিক্ষায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা পর্যাপ্ত। পূর্বের পড়াশোনা যদি ইংরেজি মাধ্যমে হয়ে থাকে তবে ভাষা পরীক্ষার শর্ত থেকেও ছাড় পাওয়া যায়। স্নাতক পর্যায়ে প্রয়োজন আইইএলটিএস ৫.৫ থেকে ৬.০ স্কোর আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রয়োজন আইইএলটিএস ৬.০ থেকে ৬.৫ স্কোর। আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন বিষয়ে আবেদন করতে হলে প্রয়োজন আইইএলটিএসের ৭.০ স্কোর। ভিসা–প্রক্রিয়াতেও রয়েছে সহজ সুযোগ, ব্যাংক স্টেটমেন্টে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা ব্যালেন্স দেখালেই যথেষ্ট। প্রয়োজন কেবল একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যপত্র, যেখানে বোঝাতে হবে, আপনি সত্যিই নিউজিল্যান্ডে পড়তে আগ্রহী।

উচ্চশিক্ষার ধাপ—

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ধরন ইউরোপীয় ধারার অনুরূপ। এখানে ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও ডক্টরাল কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা হয়। তাই ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস, পিটিই বা টোফেল স্কোর জমা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে স্কোরের মানদণ্ড আলাদা হতে পারে।

বৃত্তি ও সহায়তা—

প্রতিবছর নিউজিল্যান্ড সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের বৃত্তি প্রদান করে। এসব বৃত্তি পূর্ণ বা আংশিকভাবে শিক্ষার ব্যয় মওকুফ করে, ফলে স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ মেলে। উল্লেখযোগ্য কিছু বৃত্তি হলো নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক বৃত্তি, অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠত্ব বৃত্তি, ওয়েলিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও স্নাতকোত্তর বৃত্তি, ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা বৃত্তি, ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠত্ব বৃত্তি ইত্যাদি।

বসবাস ও জীবনধারা—

নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া মনোরম ও শান্তিপূর্ণ। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও ক্লাব কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক ক্লাব সক্রিয়, যা শিক্ষার্থীদের আন্তসংযোগ ও অভিজ্ঞতা বাড়ায়। নিরাপদ সমাজ, সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা, মানসম্মত শিক্ষা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি—সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড আজ বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষার এক অনন্য স্বপ্নভূমি।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়