মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলাকে উপনিবেশ বানাতে চান বলে অভিযোগ তুলেছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক উইলিয়াম সাআব। তিনি বলেন, ট্রাম্প যে মাদুরো সরকারকে উৎখাতের পাঁয়তারা করছে, এ বিষয়ে তার কোনও সন্দেহ নেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেছেন।
সাআবের অভিযোগ, মূলত সরকার উৎখাত করে ভেনেজুয়েলার স্বর্ণ, তেল, তামাসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের দখল নেওয়ার ছক কষছে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতি বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। কোনও প্রমাণ পেশ ছাড়াই তিনি মাদুরোকে মাদক কারবারি চক্রের নেতা বলে উল্লেখ করেছেন। এরমধ্যে, কিছুদিন আগে মাদুরোকে গ্রেফতারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে পুরস্কারের পরিমাণ রাতারাতি দ্বিগুণ করে পাঁচ কোটি ডলারে উন্নীত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
স্বাভাবিকভাবেই, ওয়াশিংটনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারাকাস।
বিগত কয়েক সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পরিবহনের অভিযোগ তুলে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর পরিচালিত একাধিক হামলায় অন্তত ৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও, প্রেসিডেন্টের মতো তারাও অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনও প্রমাণ পেশের তোয়াক্কা করেনি।
মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ডে ভেনেজুয়েলার আশঙ্কা, মাদুরোকে অপসারণে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করছে হোয়াইট হাউজ। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সাম্প্রতিক সামরিক উপস্থিতির তোড়জোড় চোখে পড়ছে।
ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানো হতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সাআব বলেন, এটা হওয়া উচিত নয়, তবে আমরা যে কোনও কিছুর জন্য প্রস্তুত। 'মাদকবিরোধী' অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের 'অবৈধ' ভূমিকা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলা আলোচনার জন্য রাজি আছে।
গত দুই মাসে ক্যারিবীয় অঞ্চলে রণতরি, যুদ্ধবিমান, বোমারু ও ড্রোনসহ বিশাল সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন একে 'মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান' হিসেবে দাবি করলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন,প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উৎখাতে ভীতি প্রদর্শনের কৌশল গ্রহণ করেছে হোয়াইট হাউজ।
এটি মাদুরোর ওপর চাপ সৃষ্টি ও সরকার পতনের লক্ষ্যে এক ধরনের ভয় প্রদর্শনের কৌশল।
চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হয়, যখন ক্যারিবীয় অঞ্চলে বৃহত্তম মার্কিন রণতরী ইউএসএস জেরার্ল্ড ফোর্ডকে মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওয়াশিংটনের কর্মকাণ্ড নিয়ে মাদুরোর অভিযোগ, যুদ্ধ বাধানোর উসকানি দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলা দাবি করেছে, তারা ভাড়াটে যোদ্ধাদের একটি দলকে আটক করেছে। দলটি মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য পেত বলে অভিযোগ করেছে কারাকাস। তাদের দাবি, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো এবং ভেনেজুয়েলার উপকূলের মাঝে একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন পরিচালনার ষড়যন্ত্র করছিল তারা।
ফলস ফ্ল্যাগ হচ্ছে এমন রাজনৈতিক বা সামরিক পদক্ষেপ, যা বিরোধী কোনও এক পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করা হয়। এর আগেও ফলস ফ্লাগ হামলার অভিযোগ এনেছিলেন মাদুরো। এরমধ্যে অক্টোবরের শুরুতে কারাকাসে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে বিস্ফোরক স্থাপনের ষড়যন্ত্রকেও আরেকটি ফলস ফ্ল্যাগ বলে দাবি করা হয়। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন