ভারতের মুদ্রা রুপি সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মতপার্থক্য। কেউ বলছেন রুপির পতন আরও হবে, আবার কেউ মনে করছেন এর নিম্নগামী ধারা শেষের পথে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রুপির এই অস্থিরতা ভারতের অর্থনীতির বহুমুখী চাপের প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাণিজ্য শুল্ক, বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং দুর্বল বাণিজ্য প্রবাহের মাঝেও দেশটির অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে দৃঢ় রয়েছে।
মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে, রুপির ওপর বহিরাগত চাপের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে মুদ্রামানে প্রতিফলিত হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ডলার ও অন্যান্য বাণিজ্যিক মুদ্রার বিপরীতে রুপি এখন ‘অবমূল্যায়িত’ অবস্থায় রয়েছে।
ব্যাংকটি রুপির পতনকে তুলনা করেছে ‘মুষলধারে মৌসুমি বৃষ্টির’ সঙ্গে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক ও ভারতীয় আইটি খাতে ভিসা খরচ বৃদ্ধিই মূল কারণ। এর ফলে রুপি এ বছর পর্যন্ত এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
একই মত দিয়েছে ব্যাংক অব আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পতনের পর রুপির মান এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ব্যাংকটি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ রুপির বিনিময় হার প্রতি ডলারে ৮৬ রুপি পর্যন্ত ফিরে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে সব বিশ্লেষক এতটা আশাবাদী নন। এইচএসবিসি'র এশীয় মুদ্রা বিশ্লেষক জোয়ি চিউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য আলোচনায় যত দিন অগ্রগতি না হবে, তত দিন রুপির ওপর চাপ বাড়বে।
তিনি মনে করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করে, তবে রুপি ৮৭ রুপি পর্যন্ত আসেতে পারে।
চলতি বছরে রুপি ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩.৭ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। শুক্রবার এটি প্রতি ডলারে ৮৮.৭৮ রুপি-তে লেনদেন হয়। যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৮৮.৮০ রুপির কাছাকাছি।
জাপানের এমইউএফজি ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, রুপি আপাতত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানেই থাকবে এবং ধীরে ধীরে ৮৯.৭৫ রুপি পর্যন্ত নামতে পারে। তাদের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতি অব্যাহত থাকলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) থেকে প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং এর ফলে বিদেশি মূলধন প্রবাহ আরও কমবে।
বিশ্লেষকদের মতে, রুপির ভবিষ্যৎ এখন মূলত নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির ওপর। একদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি দৃঢ় ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, বহিরাগত চাপ রুপিকে দুর্বল অবস্থায় রেখেছে। উৎস: বাংলাট্রিবিউন।