শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১০ দুপুর
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সার্ক সক্রিয় করতে কাজ করছে ঢাকা

চার দেশ ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে ড. ইউনূস দেশের নির্বাচন, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, সংস্কার ও জুলাই সনদ নিয়েও তার অবস্থান তুলে ধরেন।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরো কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারও তুলে ধরেছেন। তার ভাষ্য, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কে সংস্থাটির সদর দফতরে চার দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সাথে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।বাংলাদেশে হোটেল

বিভিন্ন দেশের নেতাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক : প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, চার দেশ ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে ড. ইউনূস দেশের নির্বাচন, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, সংস্কার ও জুলাই সনদ নিয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। এ ছাড়া অন্য এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে এ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়।

সমৃদ্ধ স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতেও বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।

জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে জোর দিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না। তিনি বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।বাংলাদেশে হোটেল

ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে অনুরোধ করলে তিনি ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন।

প্রধান উপদেষ্টার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সাথে বৈঠকের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, এতে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ফিনল্যান্ড ও ইতালি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আশা প্রকাশ করেছেন যে তিনি আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করবেন।

প্রেসসচিব জানান, বৈঠকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গাবিষয়ক সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়। প্রেসসচিব বলেন, কসোভা একটি ছোট দেশ হলেও এর অর্থনীতি ইউরোপে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছরে এটি ইউরোপের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।বাংলাদেশে হোটেল

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস রাউন্ড টেবিলে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি মেটলাইফ, শেভরন ও এক্সেলেরেট এনার্জিসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সফরে আসা বাংলাদেশের ছয় রাজনৈতিক নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাথে বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে দুই নেতা নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়।বাংলাদেশে হোটেল

বাংলাদেশে আরেক স্বৈরশাসকের উত্থান রোধ করাই সংস্কারগুলোর লক্ষ্য জানিয়ে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায় চলছে এবং দলগুলো শিগগির সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের মূল বিষয়গুলো নিয়ে একটি ‘জুলাই সনদ’ সই করবে।

প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানিতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান। এ সময় শাহবাজ শরিফ এ ধরনের দুর্যোগের ঘন ঘন ও তীব্র হওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।

সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বিকল্প পথ নিয়েও দুই নেতা আলোচনা করেন। বৈঠকে শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।বাংলাদেশে হোটেল

‘সার্ককে সক্রিয় ও আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ কাজ করছে’ : ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সাথে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি প্রধান সেতুবন্ধ হিসেবে দেখতে চাই। আসিয়ানের সাথে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আমাদের আবেদন পূর্ণ সদস্যপদের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

এ সময়ে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশনীতি সম্পর্কে জানতে চান।

বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, জাতিসঙ্ঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সঙ্কট, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, আসিয়ান সদস্যপদ প্রক্রিয়া, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ব্যবহার সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।বাংলাদেশে হোটেল

প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১২ কোটি ভোটারের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। অধ্যাপক ইউনূস ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে জানান যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারপ্রক্রিয়া চলছে। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অন্তর্বতী সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচারের মুখোমুখি থাকা সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ন্যায়বিচারের জন্য প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে।’

ক্লাব ডি মাদ্রিদে যোগদানের প্রস্তাব : ক্লাব ডি মাদ্রিদের সভাপতি ও স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দানিলো তুর্ক অধ্যাপক ইউনূসকে সংগঠনের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মানিত হবো যদি আপনি আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেন। একই সাথে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর বিষয়ে আপনার মতামত আমরা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করব।’বাংলাদেশে হোটেল

প্রধান উপদেষ্টা এ আমন্ত্রণকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক সংস্কারের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ক্লাব ডি মাদ্রিদ বিশ্বের বৃহত্তম ফোরাম, যেখানে গণতান্ত্রিক সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং সারা বিশ্বের মানুষের কল্যাণে কাজ করে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের প্রস্তাব কসোভোর : কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানি বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছেন। নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অভিবাসন, বাণিজ্য এবং পারস্পরিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।বাংলাদেশে হোটেল

প্রেসিডেন্ট ওসমানি কসোভোর প্রতি বাংলাদেশের প্রাথমিক ও ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপীয় দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদানকারী রাষ্ট্রগুলোর একটি। তিনি কসোভোর সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, দেশটি টানা দ্বিতীয় বছরের মতো দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে প্রেসিডেন্ট ওসমানি বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। বিশেষভাবে তিনি বস্ত্র খাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সুপারিশ করেন এবং এ খাতে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুফলের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ওসমানিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং ঢাকায় একটি কসোভো বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠানোর আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়