পার্সটুডে-ব্লুমবার্গ নিউজ নেটওয়ার্ক লিখেছে, হোয়াইট হাউস ভেনিজুয়েলার উপকূলে মাদক পাচার রোধের প্রচেষ্টা হিসেবে বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং চার হাজার সৈন্য পাঠানোর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছে।
এই সামরিক বাহিনী পাঠানোর ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে লিখেছে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সন্ত্রাসী বলেছেন এবং তার সরকার সম্প্রতি ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরষ্কার নির্ধারণ করেছে। ইরনা'র বরাত দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে তার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতের মতে, তিনি আশা করেন যে ভেনিজুয়েলার নেতা বেশি দিন শাসন করতে পারবেন না।
এখন প্রশ্ন হল ট্রাম্প যার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনের প্রধান বৈদেশিক নীতির প্রতিশ্রুতি ছিল চিরন্তন যুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, তিনি কি পশ্চিম গোলার্ধে একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করবেন?
১৯৮৯ সালে জেনারেল ম্যানুয়েল নোরিয়েগার সরকার উৎখাত করার জন্য আমেরিকা পানামা আক্রমণ করেছিল। ভেনিজুয়েলার তুলনায় দেশটির আয়তন অনেক ছোট হওয়ায় তেলসমৃদ্ধ ওই দেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা অনেক সহজ ছিল বলে মনে হচ্ছে।
বর্তমানে, এ অঞ্চলে মোতায়েন করা মার্কিন বাহিনীর সংখ্যা পানামা অভিযানে মোতায়েন করা ২৬ হাজারেরও বেশি সৈন্যের একটি অংশ মাত্র। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প কারাকাসে আক্রমণ করতে প্রস্তুত নন।
পক্ষান্তরে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার আশেপাশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণের মতোই। এর মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের থামিয়ে জ্ঞিজ্ঞাসাবাদ করা কিংবা মার্কিন শহরগুলোর রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার করা অন্তর্ভুক্ত। প্রতিবেদক মনে করেন ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ভেনিজুয়েলার সাথে যুদ্ধ শুরু করার জন্য নয় বরং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ, শক্তি প্রদর্শন এবং পরোক্ষ হুমকির জন্য।
ভেনিজুয়েলার জন্য প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ প্রতিনিধি এলিয়ট আব্রামস, যিনি মাদুরোর পতন অনিবার্য বলে মনে করেন, বলেছেন: তিনি মনে করেন না ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ করবেন । কিন্তু গায়ানার সাথে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ পুনরায় চালু করা মাদুরো যদি দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মার্চ মাসে গায়ানা সফর করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে গায়ানার ওপর আক্রমণ অথবা সেদেশে তেল জায়ান্ট এক্সন মোবিলের কার্যকলাপ মাদুরো প্রশাসনের জন্য খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। মাদক পাচার চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে রুবিওর আগামী সপ্তায় মেক্সিকো এবং ইকুয়েডর ভ্রমণের কথা রয়েছে।
আব্রামস বলেন: ট্রাম্পের লক্ষ্য যদি ভেনিজুয়েলার শাসককে উৎখাত করা হয়ে থাকে, তাহলে তিনি মাদুরোর ওপর আরও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবেন এবং শেভরনকে দেশে তেল উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে বাধা দেবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু কিছু মার্কিন কর্মকর্তা হয়তো আশা করতে পারেন যে ভেনিজুয়েলার উপকূলে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শন মাদুরোকে উৎখাত করতে সামরিক কমান্ডারদের উৎসাহিত করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা এটাও বলছেন যে, মাদুরো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে নিজেকে পারদর্শী বলে প্রমাণ দিয়েছেন।