দখলদার ইসরাইলের জন্য একটি সৌদি জাহাজে অস্ত্র বোঝাই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ইতালির বন্দরকর্মীরা। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে চলমান ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন কর্মীরা। প্রেস টিভি।
সোমবার (১১ আগস্ট) ‘বাহরি ইয়ানবু’ নামের জাহাজে এ ঘটনা ঘটে। জাহাজটি সৌদি শিপিং কোম্পানি ‘বাহরি’ পরিচালনা করে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর থেকে আসা এ জাহাজে ইতালির প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠান লিওনার্দো নির্মিত সামরিক সরঞ্জাম তোলার কথা ছিল। এর মধ্যে আবু ধাবির জন্য তৈরি একটি ওটো মেলারা কামানসহ ট্যাংক বা ভারী অস্ত্রও ছিল বলে জানা গেছে।
ইতালির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ৪০ জন বন্দরশ্রমিক জাহাজে উঠে পরিদর্শনের পর দেখতে পান, জাহাজে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।
স্বশাসিত পোর্ট ওয়ার্কার্স কালেক্টিভ ও ইউনিয়ন সিন্ডিকাল দি বেস-এর সদস্য হোসে নিভোই বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের জন্য কাজ করি না’। তিনি জানান, বন্দরের কর্তৃপক্ষ অস্ত্র পাচার বিষয়ে ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইতালির শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর জন্য এ ধরনের অস্ত্র সামগ্রী ব্যবস্থাপনা করা ইসরায়েলের গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে সহায়তার শামিল। তারা যে কোনো উপায়ে এ ধরনের অস্ত্র খালাসে নিষেধাজ্ঞার অঙ্গীকার করেন।
২০১৯ সালেও জেনোয়া বন্দরের শ্রমিকরা একই জাহাজে অস্ত্রবাহী চালান আটক করেছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরে ইসরায়েলের জন্য নির্ধারিত অস্ত্র চালান আটকে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। চলতি বছরের ৪ জুন ফরাসি ডক শ্রমিকরা মার্সেই বন্দরে ইসরায়েলগামী অস্ত্রের অংশ খালাসে অস্বীকৃতি জানান।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দখল ও অবরোধের কারণে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শিশুসহ বহু মানুষ অনাহারে মারা গেছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আগে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানালেও, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গোপনে ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে সাবেক সৌদি গোয়েন্দা কর্নেল রাবিহ আল-আনজি স্বীকার করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা অস্ত্রের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিয়াদ হামাসবিরোধী যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে। এ বছর জুনে তিনি আরও জানান, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা দিতে সৌদি আকাশসীমা উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল এবং ইরানি ড্রোন আটকাতেও সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি শিপিং কোম্পানি ‘বাহরি’। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ তারা জানায়, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে সৌদি আরবের নীতির প্রতি এবং সব আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় নীতিমালার প্রতি বাহরি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোম্পানিটি কখনো ইসরায়েলে কোনো পণ্য পাঠায়নি বা এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত হয়নি। তাদের সব কার্যক্রম কঠোর পর্যালোচনা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। বাহরি অভিযোগ করেছে, এ ধরনের খবর তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে এবং প্রয়োজনে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবে।