শিরোনাম
◈ ইরানের প্রতি পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থন ◈ বৃহৎ ইসলামি জোট শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কি? ◈ মোসাদের দুঃসাহসিক অভিযান: ২৭ সিন্দুক পরমাণু নথি চুরি ও বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার বিস্ময়কর ইতিহাস ◈ সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বাড়াতে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ◈ ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠক নিয়ে নতুন রাজনীতি, বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ◈ অ‌স্ট্রেলিয়া‌কে হারি‌য়ে টেস্ট চ‌্যা‌ম্পিয়ন‌শি‌পের শি‌রোপা জিত‌লো দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকা ◈ ট্রফি থেকে প‌তৌ‌দির নাম মুছে ফেলায় মনকষ্ট বি‌সি‌সিআইর, সম্মানরক্ষায় ইংল্যান্ড বোর্ডকে অনু‌রোধ ◈ গভর্নরের লন্ডন সফরে কী পেলো বাংলাদেশ, যা জানাগেল ◈ মে‌রি‌লি‌বোন ক্রিকেট ক্লাব বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচের নিয়মে যে পরিবর্তন আন‌তে যা‌চ্ছে ◈ কোচ কাবরেরার উপর গরম দেখা‌লেন বাফু‌ফে সদস‌্য, চাই‌লেন তার পদত্যাগ, বিব্রত সভাপ‌তি

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৫, ১১:৩১ দুপুর
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ভোটার কার্ড কেলেঙ্কারিতে ফের বিতর্ক: ‘বাংলাদেশি’ নিউটনকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর, তদন্তে নির্বাচন কমিশন

এল আর বাদল : পশ্চিমবঙ্গে আবার ‘বাংলাদেশি’ নিয়ে বিতর্ক৷ বাংলাদেশির নামে ভারতীয় ভোটার কার্ড, কার্ডধারী নিউটন নাকি কোটা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের অভিযোগ এবং সরকারি দলের অস্বীকার - এ অবশ্য ২০ বছর ধরে চলমান৷  -- ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা এলাকার নিউটন দাসকে নিয়ে, নিউটনের ভোটার কার্ড নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সুন্দরবনের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সখ্য থাকায় টাকার বিনিময়ে নিউটন ভারতের ভোটার কার্ড পেয়েছেন - এমন অভিযোগ করেছে বিজেপি ৷ নিউটনের সঙ্গে তৃণমূল নেতা ও বিধায়কের ছবি এবং ভিডিও-ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা ৷

নিউটনে বিতর্কের সূচনা---

সম্প্রতি বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিউটনের একটি ছবি পোস্ট করে। সেখানে দেখা গিয়েছে, গত বছর বাংলাদেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন নিউটন দাস। এর পাশাপাশি, নিউটনের সঙ্গে সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি দেবাশিস দাসের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। সেখানে জন্মদিনে নিউটনকে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন দেবাশিস। তৃণমূল নেতা মন্টুরাম পাখিরার জন্মদিনের ছবিতেও তাকে দেখা গিয়েছে ৷

 এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন নিউটন (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ডিডাব্লিউ)৷ ভিডিও পোস্ট করে তিনি দাবি করেন, তার ভোটার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করেছেন কাকদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা। নিউটনের আরো দাবি- তিনি ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় ভোটার। তবে ২০১৬ সালে কার্ড হারিয়ে যায়। তাই ২০১৮ সালে বিধায়কের সাহায্যে নতুন ভোটার কার্ড বের করেন।

বিজেপির অভিযোগ, বাংলাদেশের নাগরিক নিউটন তৃণমূল নেতাদের মদতে কাকদ্বীপে ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়েছেন। তিনি স্বামী বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের দাসপাড়ায় থাকতেন। সেখানে তার দাদা তপন দাসের বাড়ি ৷ বিজেপির আরো দাবি- নিউটন দাসের পুরো পরিবারই বাংলাদেশের নাগরিক।

জানা গেছে, নিউটন নামখানার একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন হস্টেলে থেকে৷ প্রশ্ন উঠেছে, বারবার কীভাবে দুটি দেশের মধ্যে অবাধে যাতায়াত ও বসবাস করতে পারলেন নিউটন? 

তবে নিউটন দাবি করছেন তিনি ভারতীয়, "আমি বাংলাদেশি নই, আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশে ছিলেন। সেখানে আমার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। সেই কারণে আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম গত বছরে। সেই সময়ে কোটা আন্দোলনে আটকে পড়েছিলাম।"

তবে বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক সঞ্জয় দাস নিউটনের এ বক্তব্য মানছেন না৷ তার দাবি, "নিউটন আটকে পড়েননি, কোটা আন্দোলনে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আবার ভারতেএসে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।  কী উদ্দেশ্যে এদেশে আসা, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গে এমন দৃষ্টান্ত অনেক---

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকের ভোটার কার্ড এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট জোগাড় করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত খুব কম নয়৷ 

মালদহের রসিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন লাভলি খাতুনের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সদস্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে লাভলি বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন। তার আসল নাম নাসিয়া শেখ। তিনি বাংলাদেশের রাজশাহির বাসিন্দা। 

অভিযোগ সেই একই, এপারে ঢুকে ভুয়ো নথি তৈরি করেছিলেন নাসিয়া। সেই নথি দিয়ে এদেশে ভোটার কার্ডই শুধু না, নির্বাচনেও দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। ভারতে নিজের ভুয়ো পিতৃপরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। লাভলিকে পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

ভোটে লড়া দূরের কথা, কোনো বাংলাদেশি ভারতীয় নির্বাচনের প্রচারেও অংশ নিতে পারেন না। অতীতে বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস ভোটের প্রচারে অংশ নেয়ায় বিতর্কিত হয়েছেন। 

কী উপায়ে ভুয়ো কার্ড?---

লাভলি, নিউটনের মতো অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসে এদেশের পরিচয়পত্র তৈরি করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকা খরচ করলে সহজেই পাওয়া যায় আধার কার্ড। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বিভিন্ন চক্র এই অবৈধ কাজ করছে। 

কোচবিহারের গীতালদহ, দিনহাটা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা কিংবা মালদহের বামনগোলা, হরিশ্চন্দ্রপুরের মতো জায়গায় তৈরি হচ্ছে ভুয়া ভোটার কার্ড। ভুয়ো কার্ড তৈরি করার খরচ ভালোই। এক একটি কার্ড তৈরিতে কিছু ক্ষেত্রে ৪০ হাজাও লাগছে। 

অভিযেোগ, মূলত তিনটি পদ্ধতিতে এই কাজ হয়। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় আত্মীয় বা পরিচিতদের বাড়িতে এসে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এই সুবাদে পেয়ে যাচ্ছেন পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন।পশ্চিমবঙ্গের কাউকে বিয়ে করে তার বাবা-মায়ের পরিচয় কাজে লাগিয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করা হচ্ছে। অনেকে আবার সরাসরি অসাধু চক্রের দ্বারস্থ হচ্ছেন ভুয়ো কার্ডের জন্য।

স্থানীয় প্রশাসনের প্যাডে লেখা এ সার্টিফিকেট বহুবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যাচাই না করে সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই জাল চক্র তৈরি করছে ভুয়ো প্যাড। তাতে নকল স্ট্যাম্প মেরে সার্টিফিকেট ইস্যু করছে, যা কাজে লাগছে ভোটার কার্ড তৈরিতে। 

প্রশাসনের একাংশের এই অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও দীর্ঘদিনের।এর অনেক প্রমানও আছে৷ সম্প্রতি কাকদ্বীপ মহকুমার এক নির্বাচনি আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা থেকে ন্যায্য ভোটারদের নাম বাদ দেয়া ও ভুয়ো ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পরে তাকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। সেই কাকদ্বীপেই বাংলাদেশির নাম ভোটার তালিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিকের দপ্তরে জমা পড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাসপোর্ট বাংলাদেশের হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটার, এমন অন্তত ৫০ জনের নাম মিলেছে তালিকায়। এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ভুতুড়ে ভোটাররা বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছেন ভোটার তালিকায়। এনিয়ে শাসক-বিরোধী সংঘাত মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দেয়।
নির্বাচন কমিশনের ভোটার লিস্ট তৈরির প্রক্রিয়াতেই গলদ রয়েছে বলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, বুথ, ব্লক ও জেলার ভোটার তালিকা নিয়ে যাদের কাজ, তাদের কাজের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, "নিউটনের দাদাও বলছেন যে তিনি বাংলাদেশে থাকেন। তার বাংলাদেশে জন্ম, সেখানকার নাগরিক, সেখানেই ভোটার কার্ড, সেখানেই সব। বুথ থেকে ব্লক এবং জেলা স্তরে যারা নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটার লিস্টে নাম তোলেন এবং নাম বাদ দেন, তাদের অসততা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। বুথ, ব্লক ও জেলায় যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, তাহলে যদি এটা কমে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়