শিরোনাম
◈ স্যার পাঁচ বছর, স্যার পাঁচ বছর’ ◈ ট্রাম্পের সঙ্গে বাবার বিরোধ নিয়ে যা বললেন ইলন মাস্ক-কন্যা ◈ ঢাকায় কোরবানির মাংসের অস্থায়ী বাজার: ২০০-৭৫০ টাকায় মিলে ১ কেজি গরুর মাংস ◈ বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাজারে ভারতের গার্মেন্টস আগ্রাসন! ◈ ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ: টিপস, তাপমাত্রা ও সতর্কতা ◈ রাজধানীতে কোরবানির সময় গরুর লাথি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত শতাধিক ◈ শহরের ঈদ আনন্দে বর্জ্যের গন্ধ থাকবে না — স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ◈ কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করাই এবার বড় চ্যালেঞ্জ ◈ এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয়: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ কোরবানির মৌসুমে ঢাকামুখী দুই হাজার দিনাজপুরের কসাই, জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকার আয় লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত : ০৫ জুন, ২০২৫, ১০:২৭ দুপুর
আপডেট : ০৭ জুন, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বি‌বি‌সি বাংলার স‌রেজ‌মিন প্রতি‌বেদন

আসামে ‘বিদেশি চিহ্নিতকরণ’ অভিযান: বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গায়েব, বাংলাদেশে পুশব্যাক নিয়ে তোলপাড়

বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তের নো ম্যানস্ ল্যান্ডে ১৪ জনকে দেখা যায়, যারা দাবি করেন যে তারা আসামের বাসিন্দা - ফাইল ছবি

এল আর বাদল : শুরুটা হয়েছিল ২২শে এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই। ভারতের নানা রাজ্যে শুরু হয় এক বিশেষ অভিযান – 'অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিত' করার অভিযান। প্রথম অভিযানটা হয়েছিল গুজরাতে।

গুজরাত পুলিশের সূত্রগুলি বিবিসিকে জানিয়েছে যে ওই বিশেষ অভিযানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন অনেক ভারতীয় বাংলাভাষীও।

শেষমেশ অবশ্য মাত্র ৪৫০ জনকে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করতে পেরেছে সেখানকার পুলিশ।
প্রায় একই সময়ে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতেও খোঁজা শুরু হয়েছিল যে কারা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বসবাস করছেন। নথি যাচাইয়ের পরে যারা ভারতীয় বলে নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, আর অন্যদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। 

উত্তরপূর্ব ভারতের আসামে 'বিশেষ অভিযান' শুরু হয় অবশ্য গুজরাত বা রাজস্থান অথবা দিল্লি কিংবা উত্তরপ্রদেশের কিছুটা পরেই।

সরকারি ভাষ্যমতে এই বিশেষ অভিযান অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতোই চালানো হয়েছে এবং যাদের আটক করা হয়েছে, তারা অনেক আগেই 'বাংলাদেশি হিসাবে ঘোষিত' হয়েছেন সেরাজ্যের 'বিদেশি ট্রাইব্যুনাল'গুলোতে। সরকারি পরিভাষায় এরা 'ডিক্লেয়ার্ড ফরেন ন্যাশনাল'।

আসামের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা ব্যাখ্যা দেন যে এই 'ঘোষিত বিদেশি'রা প্রায় সকলেই ভারতেরই নাগরিক, কিন্তু নামের বানানের সামান্য ভুল অথবা সঠিক নথি না দেখাতে পারার ফলে 'বিদেশি' বলে ঘোষিত হয়ে গেছেন।

আসামের ওই বিশেষ অভিযানে কতজন আটক হয়েছেন, সেই সংখ্যা সরকার বা আসাম পুলিশ জানায়নি, তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন যে তাদের হিসাব মতো তিনশোরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছিল।
এদের মধ্যে ১৪৫ জন যে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, সেই অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে।

-- মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশ --

আসামে যেসব মানুষকে 'ঘোষিত বিদেশি' বলে আটক করা হয়েছে গত কয়েকদিনে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েছিল বিবিসি। ওইসব পরিবারগুলি এবং মানবাধিকার কর্মীদের বয়ান অনুযায়ী ২৩শে মে থেকে এই অভিযান শুরু হয়।

প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই গভীর রাতে বাড়িতে বিরাট সংখ্যক পুলিশ বাহিনী হাজির হয়। আবার মোরিগাঁও জেলার বাসিন্দা আব্দুল লতিফকে অনেক রাতে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল।

মি. লতিফের মেয়ে সনজিমা বেগম বলছিলেন, "২৩ তারিখ রাত প্রায় সাড়ে দশটার দিকে থানা থেকে বাবাকে ফোন করে যেতে বলা হয়। জানানো হয় যে পুলিশ সুপার আসবেন। বাবা যেন তাড়াতাড়ি থানায় পৌঁছন"।

প্রথমে বলা হয়েছিল যে আরও কিছু মানুষ আসবেন, তাই অপেক্ষা কর তোমরা। সেভাবেই সারা রাত গেল। পরের দিন সকাল ছটা নাগাদ বাবাকে লক আপ করে," বলছিলেন সনজিমা বেগম।

চিরাং জেলার ছাতিবর গাঁওয়ের বাসিন্দা প্রায় ৬০ বছর বয়সী আব্দুল শেখের বাড়িতে ২৫শে মে রাত প্রায় এগারোটার সময়ে পৌঁছিয়েছিল পুলিশ।

তার স্ত্রী আয়েশা বিবি বলছিলেন, "নারী আর পুরুষ পুলিশ এসেছিল। আমরা যখন জানতে চাই যে কিসের জন্য এসেছেন, তারা জানায় যে আধার কার্ডের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে হবে। এর আগে বেলা তিনটে নাগাদ ফোন করে বলেছিল যে পরের দিন সকাল দশটায় থানায় যেতে। আমরা জানতে চাই তাহলে রাত ১১টায় কেন এসেছেন!"

আধার কার্ড ভারতের বায়োমেট্রিক জাতীয় পরিচয় পত্র। এই কার্ডের জন্য চোখের মণির ছবি থেকে শুরু করে দশ আঙ্গুলের ছাপ দরকার হয়। এই কার্ড অবশ্য নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।

শেখের পরিবারের দাবি অনুযায়ী পুলিশ বলেছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আব্দুল শেখকে।পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরে যে মি. শেখকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারে নি তার স্ত্রী-পুত্ররা।

"সেই থেকেই নিখোঁজ আমার স্বামী," বলছিলেন আয়েশা বিবি।

মোরিগাঁও জেলার খন্দপুখুরি গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক খাইরুল ইসলাম অথবা চিরাং জেলার ছাতিপুর গ্রামের শাহা আলি – সম্প্রতি আটক হওয়া সবার ক্ষেত্রেই একই ভাবে থানায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।

-- যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল --

চিরাং জেলার শাহা আলিকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে ২৫শে মে। 'বিদেশী ট্রাইব্যুনাল' তাকে আগেই বিদেশি বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। তারপর তিনি বিদেশিদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্পেও ছিলেন কয়েক বছর।

করোনার সময়ে ওই সব ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো থেকে জামিন দেওয়া হয়, সেভাবেই তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। যেসব পরিবারের সদস্যদের আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকেই বলছেন যে জামিনের শর্ত অনুযায়ী নিয়মিত থানায় গিয়ে হাজিরা দিতে হত।

সেই নিয়ম পালনও করছিলেন তারা। তবুও ২৫ তারিখ রাত দুটো নাগাদ বাড়িতে বড় বাহিনী নিয়ে এসে আটক করা হয় শাহা আলিকে। তার মা খুদাজা খাতুন বলছিলেন, "নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সব নথিই আছে আমাদের কাছে। এই বাস্তু জমি হল আমার বাবার। আমাদের নামে কোনও কেস নেই। তাহলে আমরা যদি ভারতীয় হই, আমার ছেলেটা কীভাবে বাংলাদেশি হয়!"

তিনি আরও বলছিলেন যে তার ছেলেকে যখন আটক করে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ, তখন তার পুত্রবধূ বারবার অনুরোধ করেছিলেন মাকে যেন একবার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়, চোখের দেখা দেখতে দেওয়া হয়।

খুদাজা খাতুনের কথায়, "আমার সঙ্গে একটা বার কথাও বলতে দিল না। যেমন ভাবে কিডন্যাপ করে, সেইভাবে আমার ছেলেকে নিয়ে গেল। ঘাড়ে ধরে টেনে নিয়ে গেছে।"

একই ধরণের অভিযোগ পেয়েছি মুজিবর শেখের স্ত্রী রিজিয়া খাতুন বা মোরিগাঁওয়ের আতাপ উদ্দিনের স্ত্রী হাফিজা বেগমের কাছ থেকেও। এইসব পরিবারগুলি এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন আটক করার সময়ে যাতে মোবাইলে কেউ ভিডিও না করে, সে কথাও বলে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।

-- কোথায় গেল এদের স্বামী, পুত্ররা?--

পরিবারগুলির বয়ান থেকে এরপরের ঘটনাক্রম সম্বন্ধে যা জানা গেছে, তা অনেকটা এরকম:

থানা থেকে কোনও পরিবারকে বলা হয়েছে যে পুলিশ সুপারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে যখন তারা খোঁজ করতে গেছেন, তখন বলা হয়েছে ওখানে কেউ আটক নেই।

কোনও পরিবার আবার জানতে পেরেছে যে আটক করার পরের দিন ধৃতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়াতে 'বিদেশিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে'। সেখানে গেলে কোনও তথ্যই দেওয়া হয় নি পরিবারগুলোকে।

আমরাও যখন ওই ক্যাম্পে যাই সেখানে আমাদের ছবি তুলতেও দেওয়া হয় নি। চিরাং জেলার ছাতিবর গাঁওয়ের বাসিন্দা মুহাম্মদ মুজিবর শেখের স্ত্রী মুসাম্মত রিজিয়া খাতুন বলছিলেন যে ২৫শে মে রাতে তার স্বামীকে এই বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় যে পুলিশ সুপার ডাকছেন বলে।

পরের দিন সকালে আমরা গেলাম থানায়, আমার জামাই গেল এসপি অফিসে। কোথাও নাই সে। আরও অনেকে থানায় গিয়েছিল সেদিন, কারোই কোনও খোঁজ নেই," জানাচ্ছিলেন মিসেস খাতুন।

তিনি বলছিলেন, "সব জায়গাতেই পুলিশ বলছে যে তারা জানে না মানুষগুলোকে কোথায় রাখা হয়েছে। আমরা থানা ঘেরাও করেছিলাম, তাও কোনও জবাব পাই নি। ধরেছেন তো জেলে পাঠাবেন, তাহলে তো মানুষটার খোঁজ পেতাম। এখন কোন দেশে নিয়ে গেছে না কী মেরেই ফেলেছে... কোনও খোঁজ নেই।

-- ডাইরেক্ট বাংলাদেশে' --

বাড়ি থেকে আটক করা যখন শুরু হয়, তার দিন দুয়েক পরে হঠাৎই একটা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তে 'নো ম্যানস্ ল্যান্ডে' কয়েকজন নারী পুরুষকে দেখা যায়, যারা দাবি করেন যে আসামের বাসিন্দা তারা। পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখেছিল। সেখান থেকে বিএসএফের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস আবার তাদের ভারতের দিকে পাঠাতে চেষ্টা করে। ফলে, ওই ১৪জন নারী পুরুষকে রাত কাটাতে হয় নো ম্যানস্ ল্যান্ডেই। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায় যে তিনি আসামের মোরিগাঁও জেলার বাসিন্দা এবং তিনি একজন প্রাক্তন শিক্ষক।

কুড়িগ্রামের স্থানীয় সংবাদকর্মী সাখাওয়াত হোসেন নিজে যে ভিডিও করেছিলেন ওই ব্যক্তিদের, তা তিনি বিবিসিকে দিয়েছিলেন। 

ওই প্রাক্তন শিক্ষক ভিডিওতে নিজের নাম বলেছিলেন খাইরুল ইসলাম। আমরা আসামে গিয়ে তার বাড়ির খোঁজ পাই এবং স্ত্রী রীতা খানুমের সঙ্গে দেখা করি।

মি. ইসলামকে 'ঘোষিত বিদেশী' বলে রায় দিয়েছিল 'বিদেশি ট্রাইব্যুনাল'। তাকে আগেও গোয়ালপাড়ার বিদেশি ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকতে হয়েছে।

পরে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আপিল মামলাতেও তিনি হেরে যান। এর পরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সেই মামলা এখনও চলছে। মিসেস খানুম বলছিলেন, "২৩শে মে সকালেই জামিনের শর্ত অনুযায়ী থানায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে সই করে এসেছিলেন আমার স্বামী। তাই বাড়িতে পুলিশ তো আসার কথা না। কিন্তু অনেক রাতে বাড়িতে পুলিশ আসে। আমাদের জানায় যে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে আবার একটু পরেই ফেরত দিয়ে যাবে। যদি দেরি হয়ে যায়, তাহলে ভোরবেলায় ফেরত পাঠাবে।"

পরের দিনও স্বামী বাড়ি না আসায় তারা থানায় গিয়ে জানতে পারেন যে পুলিশ সুপারের অফিসে রাখা হয়েছে। সেখানে গেলে বলা হয় যে গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তারা আদালতের নথিপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন যাতে ডিটেনশন ক্যাম্পে গিয়ে সেসব দেখাতে পারেন।

"পরের দিনই একজন একটা ভিডিও দিল, বলে দেখ তো এটা কী ভিডিও। ওটা ততক্ষণে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে দেখি আমার স্বামী। আমি তো হতবাক! কী হল এটা – বাংলাদেশের ক্ষেত পাথারে পড়ে আছে," বলছিলেন মিসেস খানুম।

-- বাংলাদেশের নো ম্যানস্ ল্যান্ড থেকে বাড়িতে ফেরত --

বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের নো ম্যানস্ ল্যান্ড থেকে রেকর্ড করা ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার চারদিন পরে ওই শিক্ষক খাইরুল ইসলামকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

বাংলাদেশে যাদের দেখা গিয়েছিল, তাদের মধ্যে আরও কয়েকজন বাড়ি ফিরেছেন বলে মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস আমাদের কাছে নিশ্চিত করেছে।

গুয়াহাটি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হাফিজ রশিদ চৌধুরী ওই প্রাক্তন শিক্ষক খাইরুল ইসলামের হয়ে মামলা লড়েছেন। বর্তমান অভিযানের আটক হওয়া একাধিক ব্যক্তির খোঁজ চেয়েও তিনি মামলা করেছেন গুয়াহাটি হাইকোর্টে।

রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তিনি বলছিলেন, "মাস্টার তো বাড়িতে এসে পৌঁছিয়েছে, আমি নিশ্চিত খবর পেয়েছি। শুনছি আরও ৬৪ জনকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তোমরা এমন একটা কাজ করলে, কোর্ট নোটিশ ইস্যু করল, তোমরা তাদেরকে আবার নিয়ে এলে। এই হ্যারাসমেন্টটা কেন করলে?

মানবাধিকার সংগঠন সেন্টার ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিসের আসাম রাজ্যের ইনচার্জ পারিজাত নন্দ ঘোষ নিজে একাধিক এমন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন যাদের সম্প্রতি আটক করার পরে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে আবার তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তারা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে একটি অভিযোগও জানিয়েছেন।

মি. ঘোষ বলছেন, "আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে অভিযানের শুরু থেকে প্রায় ৩০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে আমরা জানতে পারছি যে প্রায় ১৫০ মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরেছেন। কিন্তু ১৪৫ জনের এখনও কোনও খোঁজ নেই।

-- কী বলছে সরকার? --

হঠাৎ করে বিশেষ অভিযান কেন শুরু হল, কেনই বা ভারতে আটক হওয়ার পরে কয়েকজনকে বাংলাদেশে দেখা গেল, তা নিয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেয় নি আসাম পুলিশ।

পুলিশের মহানির্দেশকের কাছে এই বিষয়ে তথ্য চেয়ে ইমেইল করা হয়েছে, তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার জবাব আসে নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক সংবাদ সম্মেলনে মেনে নেন যে 'পুশ ব্যাক' করা হচ্ছে। কিন্তু সেটাও করা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের একটা নির্দেশ মেনেই।

তার কথায়, "আপনারা জানেন যে সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা আছে এবং সুপ্রিম কোর্ট আমাদের নির্দেশ দিয়েছে যে যারা বিদেশি হিসাবে ঘোষিত, তাদের ফেরত পাঠাতে হবে – যে কোনও উপায়ে।

যারা বিদেশি হিসাবে ঘোষিত কিন্তু আদালতে আপিল করে নি, তাদের আমরা পুশ-ব্যাক করছি। এদের মধ্যে কেউ বলছেন যে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন, আমরা তাদের বিরক্ত করছি না," সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন মি. বিশ্বশর্মা।

তিনি এও জানান যে সব জেলার পুলিশ সুপারদের একটা সাম্প্রতিক বৈঠকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রাজ্যে থাকা বিদেশিদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়ায় গতি আনা হবে।

"এনআরসি চলাকালীন অঘোষিতভাবে বিদেশি চিহ্নিতকরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তাই আগামী দিনে পুশব্যাক যেমন করা হবে, চিহ্নিতকরণ চলবে আর কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কিছু মানুষকে সেদেশে ফেরত পাঠাবে। তিনটে কাজই একসঙ্গে চলবে, জানান মি. বিশ্বশর্মা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়