শিরোনাম
◈ সরকারের নতুন আয়কর প্রস্তাব: নতুনদের জন্য ছাড়, উচ্চ আয়ের জন্য কর হার বাড়ছে ◈ আমাদের সমুদ্র সোনার খনি:‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ◈ এ এক অন্য রকম আয়নাবাজী: ১২ বছর ধরে অন্যের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি, অবশেষে ফাঁস হলো প্রতারণা ◈ পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান অপসারণের আল্টিমেটাম ◈ অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা পেতে যাচ্ছেন সুখবর ◈ টেকনাফ স্থলবন্দরে অচলাবস্থা: কর না পেয়ে পণ্য আটকে দিচ্ছে আরাকান আর্মি ◈ পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার সতর্কতা, ১১ জেলায় বন্যার শঙ্কা ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ◈ জামাতের সঙ্গে ঐক্যে বিতৃষ্ণা: নতুন দল এনসিপি-কে বর্জনের ঘোষণা সংগীতশিল্পী সায়ানের, ভোট না দেওয়ার আহ্বান ◈ অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে পেইজ খুলে অভিনব প্রতারণা, ৮ প্রতারক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ২৭ মে, ২০২৫, ১০:৪৭ দুপুর
আপডেট : ২৮ মে, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

পশ্চিমা ও আরব গণমাধ্যম আমাদের মুছে দিচ্ছে- হয় বোমা দিয়ে, নয়তো শিরোনাম দিয়ে : ফি‌লি‌স্তি‌নি লে‌খিকা

এল আর বাদল : ফিলিস্তিনি লেখিকা ও অনুবাদক আলা রেজওয়ান গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে এক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন লিখেছেন। মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক পোর্টাল 'মিডলইস্ট আই'-এ প্রকাশিত তাঁর লেখায় উঠে এসেছে গাজার বাস্তবতা ও মিডিয়া কভারেজের চাঞ্চল্যকর দ্বিচারিতা।

তিনি লিখেছেন, “ইসরাইল আমার পরিবারকে হত্যা করেছে, আমার ঘর ধ্বংস করেছে, অথচ সারা পৃথিবী নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ইসরাইলি বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে গাজা ছেড়ে কায়রোতে আশ্রয় নেওয়া রিদওয়ান জানান, তিনি সন্তানদের নিয়ে গাজা ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন প্রাণ বাঁচানোর জন্য, কিন্তু এখনো প্রতিদিন অভিবাসন ও স্বজনহারা হওয়ার বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন। -- সূত্র, পার্সটু‌ডে

রিদওয়ান স্মৃতিচারণ করে লেখেন, আমাদের বাড়ি গাজার নাসের মহল্লায় ছিল। প্রতিটি কোণায় আমাদের হাসির স্মৃতি ছিল, আর প্রতিটি ঘর সাক্ষ্য ছিল আমাদের অশ্রুর। কল্পনা করুন, কেমন অনুভূতি হয় যখন সবকিছু এক নিমেষে হারিয়ে যায়—প্রাচীরগুলো, পরম যত্নে বাছাই করা পর্দাগুলো, রান্নাঘর যেখানে পরিবারের জন্য খাবার রাঁধতাম, সেই বারান্দা যেখানে আমার যমজ সন্তানরা প্রথম পা ফেলেছিল, আর সেই বুকশেলফ যা বইয়ে ভরপুর ছিল।

তিনি বলেন, আমরা যেন অদৃশ্য মানুষ। পশ্চিমা এবং আরব মিডিয়াগুলোতে আমাদের মতো মানুষদের মুছে ফেলা হয়, হয় বোমার আঘাতে, নয়তো শিরোনামের খেলায়।

রিদওয়ান লিখেছেন, “বিশ্ব আমাদের ফিলিস্তিনিদেরকে কেবল কিছু মৃতদেহের সংখ্যা বা আহত ও উদ্বাস্তু হিসেবে দেখে। আমাদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

তিনি আরো বলেন, “ইসরাইলি নাগরিকদের জন্য যুদ্ধের মানসিক ক্ষতি সংবাদমাধ্যমের গল্প হয়, কিন্তু গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা আমাদের জন্য কোনো সংবাদের যোগ্যতা পায় না। পশ্চিমা মিডিয়া দখলদার আর দখলকৃতের মধ্যে পার্থক্য, বিমান হামলা আর হাতে তৈরি রকেট, অবরোধ আর প্রতিরোধের ফারাক মুছে দেয়।

এই ফিলিস্তিনি লেখক পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর শব্দচয়নের রাজনীতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।U তিনি লিখেছেন, “নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে এরা ইসরাইলের অপরাধগুলোকে আড়াল করে, যেমন—কেবল ‘সেনা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা’, বা হত্যাকাণ্ডের ভিডিওগুলোকে ‘অভিযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করা।

রাফাহতে চিকিৎসা-কর্মীদের হত্যার ঘটনায় তিনি বলেন, “যখন এই হত্যাকাণ্ডের লাইভ ভিডিও ফুটেজ সারা বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হয়েছে, তখনো পশ্চিমা মিডিয়া সন্দেহ প্রকাশকারী ভাষা ও অস্পষ্ট বাক্য ব্যবহার করে এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়।

রিদওয়ান লিখেছেন, “এই নীরবতা বা ইসরাইলের পক্ষে খবর প্রকাশ শুধু নৈতিক ইস্যু নয়; এটি ইতিহাসের নথিভুক্তির প্রশ্নও। কার কষ্ট ইতিহাসের পাতায় লেখা হবে, আর কার কষ্ট মুছে যাবে? কার কণ্ঠস্বর পাবলিক অভিমত, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইতিহাস তৈরি করবে”?

তিনি শেষ পর্যন্ত লিখেছেন, “আমরা শুধুমাত্র সংখ্যা নই, শুধুমাত্র ভুক্তভোগী নই। আমরা মানুষ, আমাদের নাম আছে, স্মৃতি আছে, স্বপ্ন ছিল। আমরা দেখা এবং শোনা যাওয়ার যোগ্য। আমি একা নই, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফিলিস্তিনিরা তাদের গল্পগুলো বলছে। কিন্তু আজ, এই প্রায় ২০ মাসের গণহত্যার পরও, আমাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না। নীরবতা এখনো বিস্ফোরণের আওয়াজের চেয়ে জোরালো, আর ধ্বংসস্তূপের চেয়ে ভারী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়