শিরোনাম
◈ সৌদি আরবকে হজের কোটা নিয়ে যে অনুরোধ করলেন ধর্ম উপদেষ্টার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের রেকর্ড: কারা পাচার করল, কীভাবে করল? ◈ যুদ্ধের মুখে ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা রাখে ‘মামাদ’ কৌশল ◈ গাজায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’তে শিশুরা তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশের এক বিভাগের চেয়েও ছোট আয়তনের ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? ◈ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ডিবি হেফাজতে, বেইলি রোড থেকে আটক ◈ এই ইসরায়েল হাসপাতালে ক্ষতির অভিযোগ করেছে, অথচ তারা গাজায় ৭০০ হাসপাতালে হামলা করেছে: এরদোয়ান ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই ফিরবেন: আমীর খসরু ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন আগুন জ্বলবে, যা কেউ থামাতে পারবে না ◈ আইআরজিসির কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি

প্রকাশিত : ১৭ মে, ২০২৫, ০৩:৩৫ রাত
আপডেট : ২১ জুন, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার জান্তাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক কিসের ইঙ্গিত?

বেইজিং সতর্কভাবে এসব অনুরোধ এড়িয়ে গেছে। এমনকি ২০২৪ সালের শেষদিকে চীন সফরও করেছিলেন জান্তাপ্রধান। সফরে চীন তাকে প্রটোকল দিলেও শি জিনপিং সাক্ষাৎ করেননি। অবশেষে গত ৯ মে মস্কোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজের ফাঁকে দুজনের মধ্যে আলোচিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাশিয়ার মধ্যস্থতায়। বৈঠকটি এমন সময়ে হলো যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের দেশের মাত্র ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বাকি ৮০ শতাংশ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।

এ পরিস্থিতিতে শি-মিন বৈঠক নিছক আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীনের তরফ থেকে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থনের বার্তা, যা তাদের গৃহযুদ্ধে ধসে পড়া অবস্থানকে কৌশলগতভাবে পুনর্গঠনের সুযোগ দেবে। বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মিয়ানমার সরকারের প্রতি সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে বলেন। জান্তা সরকারের আসন্ন নির্বাচনী পরিকল্পনাকেও সমর্থন দেন। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে, শি জিনপিং বৈঠকে জান্তার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধাপরাধ, বেসামরিক জনগণের ওপর প্রতিদিনের বিমান হামলা, কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো বিষয়ই তোলেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেট হতার মাউংয়ের মতে, ক্রেমলিনে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মিন অং হ্লাইংয়ের এ একান্ত বৈঠক মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয়। তিনি বলেন, ‘শি জিনপিং জান্তা নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন। তাকে সমর্থন দিলেন কিন্তু মিয়ানমারে প্রতিদিনের বিমান হামলা ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে একটি কথাও বললেন না। এ নীরবতাই জান্তা সরকারকে আরো বেপরোয়া করে তুলবে।’

বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মস্কোর মধ্যস্থতা। এ বৈঠক রাশিয়া ও চীনের মধ্যে মিয়ানমার নিয়ে সমন্বিত সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। মস্কো ও বেইজিং মিয়ানমার জান্তার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। চীনের কাছ থেকে ড্রোন, নজরদারি প্রযুক্তি ও লজিস্টিক সহায়তা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান, গোলাবারুদ ও সামরিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছে জান্তা। এ দুই দেশের ওপর নির্ভর করেই জান্তা সরকার প্রতিদিনের বিমান হামলা চালিয়ে আসছে, যার লক্ষ্য প্রায়ই বেসামরিক জনগোষ্ঠী।

শুধু সামরিক সহায়তাই নয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নীতিতেও চীনের প্রভাব দৃশ্যমান। মিন অং হ্লাইংয়ের সরকার চীনা নববর্ষকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে, চীনা বিনিয়োগ সুরক্ষায় আইন পাস করেছে এবং চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার জানিয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেসন টাওয়ার বলেন, ‘শি জিনপিং দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলার পর অবশেষে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন—এটি স্পষ্টভাবে চীনের জান্তা সরকারের প্রতি বাড়তে থাকা সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। একদিকে জান্তা সরকার দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে ব্যর্থতার মুখে, অন্যদিকে চীনের এ কূটনৈতিক উষ্ণতা তাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টার ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাশিয়ায় এ বৈঠক আয়োজন কেবল দ্বিপক্ষীয় নয়, বরং মিয়ানমার ইস্যুতে বেইজিং ও মস্কোর সমন্বয় ক্রমেই গভীর হচ্ছে। যদিও কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, মিয়ানমার-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা বেইজিংকে বিব্রত করতে পারে, তবে বাস্তবে রাশিয়া যদি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্লাটফর্ম সরবরাহ করে, তাহলে তা বোঝায়—দুই দেশই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পেছনে একক কণ্ঠে দাঁড়িয়ে আছে।’

তবে এ বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশের মাত্র ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ৮০ শতাংশ এলাকায় আরাকান আর্মি, চিনল্যান্ড ফোর্সেসসহ অন্যান্য জাতিগত প্রতিরোধ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। জান্তা সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে পড়ার দশা। এ প্রেক্ষাপটে শি-মিন বৈঠক জান্তাপ্রধানের জন্য এক মনস্তাত্ত্বিক বিজয়।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সরাসরি হস্তক্ষেপ জান্তা সরকারকে সাময়িকভাবে সুবিধা দিলেও এটি একটি বিপজ্জনক নির্ভরতার শুরু। জেসন টাওয়ার বলেন, ‘বেইজিংয়ের সহায়তায় কিছুটা সামরিক পুনর্গঠন সম্ভব হলেও জান্তা ক্রমেই চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতে তাদের স্বাধীনতা হরণ করবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমার এখন আর শুধু একটি জাতিগত বিদ্রোহপূর্ণ অঞ্চল নয়—এটি হয়ে উঠেছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রভাবশালী শক্তি ভারত ও চীনের কূটনৈতিক সংঘাতের নতুন ফ্রন্টলাইন। সীমান্তের ওপারে সেনা উপস্থিতি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কূটনৈতিক অবস্থান, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের প্রতিযোগিতা এবং স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোট গড়ার সক্ষমতা। চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে কিয়াউকফিউ বন্দর থেকে ইউনান পর্যন্ত করিডোর নির্মাণে জোর দিচ্ছে, আর ভারত চেষ্টা করছে কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকল্প সংযোগ নিশ্চিত করতে।

তবে শি-মিন বৈঠক মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জন্য বড় কোনো সুখবর বয়ে আনবে না বলেও মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক জাকারি আবুজা বলেন, ‘ছবিতে হয়তো হাসিমুখ দেখা গেছে কিন্তু পেছনের গল্পটা এমন নাও হতে পারে। চীন সম্ভবত জান্তা সরকারের ওপর যুদ্ধক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য চাপও দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘চীন দুটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়—এক. সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। দুই. তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের সুরক্ষা। কিন্তু মিন অং হ্লাইং এ দুটির কোনোটিই নিশ্চিত করতে পারছেন না। ফলে এ হাসিমুখ কতদিন থাকবে সেটাই দেখার বিষয়।’

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়