পার্সটুডে- গত ডিসেম্বরে জোলানির নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আশ-শাম সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বহু তরুণীকে অপহরণ করেছে। এসব তরুণীদের অধিকাংশই আলাভি সম্প্রদায়ের।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বর থেকে আল-কায়েদার একটি শাখা অর্থাৎ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আশ-শামের নেতা আল-জোলানি সিরিয়ায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে মূলত আলাভি সম্প্রদায়ের তরুণীরা অপহরণের শিকার হচ্ছে।
দ্য ক্র্যাডলের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, স্থানীয়দের তথ্য মতে হায়াত তাহরির আশ-শামের ঐতিহ্যবাহী শক্ত ঘাঁটি ইদলিব প্রদেশে আলাভি তরুণীদেরকে যৌন দাসত্বে বাধ্য করা হচ্ছে। সাজানো বিয়ের মাধ্যমে এসব ঘটনাকে বৈধতা দেওয়া চেষ্টাও করা হচ্ছে।
ইদলিবে সিনজারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি
ইদলিবের ঘটনা ২০১৪ সালে ইরাকের সিনজারে ইয়াজিদি নারীদের উপর আইএস বা দায়েশের অপরাধের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। সে সময় তারা যৌন জিহাদ নাম দিয়ে জোর করে বিয়ে করতো এবং এর আড়ালে যৌন দাসত্ব চালু করেছিল। এখন মনে হচ্ছে সিরিয়ায় হায়াত তাহরির আশ-শাম একই আদর্শিক মডেল ব্যবহার করে আলাভি নারীদের টার্গেট করেছে।
ইদলিব থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
ইদলিবে বসবাসকারী সিরিয় একটিভিস্ট হিবা ইজ্জাদ্দিন তার ফেসবুক পোস্টে একজন আলাভি নারী প্রসঙ্গে লিখেছিলেন। অবশ্য তার সেই লেখা পরে মুছে ফেলা হয়েছে। তিনি ঐ পোস্টে একজন মহিলার সাথে তার সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৭ মার্চ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আলাভিদের বিরুদ্ধে জোলানি সরকারের ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলো গণহত্যা চালায় এবং অনেক নারীকে যৌনদাসী হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
হিবা এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমি যে মহিলার কথা বলছি তাকে আমি এমন একজন পুরুষের সাথে দেখেছি যিনি আগেও বেশ কয়েকবার বিয়ে করেছেন এবং সম্ভবত এখন তার তিন স্ত্রী রয়েছে। ঐ নারীর বেশভূষা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বিশেষ করে তার বেশভূষা ও চলাফেরায় এটা স্পষ্ট ছিল যে, তিনি হিজাব সঠিকভাবে পরতে জানেন না এবং কোনো মতে তার মাথা স্কার্ফ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।
হিবা ইজ্জাদ্দিন আরও লিখেছেন, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি নিশ্চিত হন মহিলাটি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। ৭ মার্চের গণহত্যার সময় সেখানে ১,৬০০ জনেরও বেশি বেসামরিক আলাভিকে নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং মারাত্মক নীরবতা
সিরিয়ায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নারী অপহরণের বিষয়ে নানা তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও এই বিষয়ে কোনও বাস্তব প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। জাতিসংঘ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছে, কিন্তু হায়াত তাহরির আশ-শামের নাম উল্লেখ করেনি।
গণমাধ্যমেও আলাভি নারী অপহরণের নানা ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-দারাজে প্রকাশিত একটি খবর এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আলাভি নারীদের অপহরণের ১০টি ঘটনার বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পেরেছে বলে আল দারাজ জানিয়েছে। আল-দারাজ সিরিয়ার একটি উপকূলীয় শহরের উপকণ্ঠ থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে অপহৃত ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরীর ঘটনাও রেকর্ড করেছে।
পরে মেয়েটি পরিবার একটি টেক্সট মেসেজ পায় যেখানে তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, অপহরণের বিষয়ে চুপ থাকো, অন্যথায় মেয়ের লাশ দেখতে পাবে। পরে মেয়েটি আইভরি কোস্টে নিবন্ধিত একটি ফোন নম্বর থেকে তার পরিবারকে একটি অডিও বার্তা পাঠায়, যেখানে সে বলে- আমি ভালো আছি এবং আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত নই।
লেবাননের সংবাদমাধ্যমটি এই ঘটনাগুলোকে ইরাকের সিনজারে আইএস'র মাধ্যমে ইয়াজিদিদের গণহত্যার সাথে তুলনা করেছে। ২০১৪ সালে ৬,৪০০ জনেরও বেশি ইয়াজিদিকে আইএস দাস বানায়। তারা হাজার হাজার ইয়াজিদিকে সিরিয়া ও তুরস্কে পাচার করে। অনেক নারীকে গৃহকর্মী অথবা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে। ওদের অনেককেই এখন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সবশেষে বলা যায়, এসব ঘটনা সিরিয়ায় মানবাধিকার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব তা দেখেও, না দেখার ভান করছে। আর কত দিন এভাবে চলবে?