পাকিস্তানে ভারতীয় হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ভারতীয় হামলায় ছয়টি এলাকায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
ভারত কর্তৃক পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলার পর থেকে গত কয়েক ঘণ্টায় পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। এ পর্যন্ত যা যা ঘটল তার একটি সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো:
দিল্লি বলছে, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ‘সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি না করে’ হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে, তিনটি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে, যাকে তারা ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ বলে বর্ণনা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দার বলেছেন, আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। ভারত হতাহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
পাকিস্তান বলেছে, ইসলামাবাদ ‘তাদের পছন্দসই সময়ে এবং স্থানে’ এর জবাব দেবে।
রয়টার্স এবং এএফপি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক অভিযানে তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাঁরা বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
এদিকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। বিমানগুলোর মধ্যে তিনটি রাফাল, একটি সুখোই-৩০ এবং একটি মিগ-২৯ রয়েছে। এছাড়া, বেশ কয়েকটি মনুষ্যবিহীন আকাশযানও (ড্রোন) ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান।
তবে, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদি এই তথ্য সত্যি হয়, তবে এটি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানের পাঞ্জাবেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
গত মাসে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর একটি মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যেখানে উভয়ই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ।
পাকিস্তান হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। তবে ভারতীয় পুলিশ দাবি করছে, তারা হামলার জন্য সন্দেহভাজন চার জঙ্গির মধ্যে দু'জন পাকিস্তানি নাগরিক। নিরাপত্তা বাহিনী এখনও তাদের সন্ধান করছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমান্ত বন্ধ করা এবং সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। ২২ এপ্রিলের পর থেকে উভয় পক্ষের সৈন্যরা সীমান্তে টানা কয়েকদিন ছোট অস্ত্র থেকে গুলি বিনিময় করেছে।