শিরোনাম
◈ জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ ◈ বিল পরিশোধ, দীর্ঘদিন পর দায় মুক্ত পেট্রোবাংলা! ◈ নসরুল হামিদের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি জব্দের আদেশ ◈ ‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’- বক্তব্যটি হাসিনার: প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনাল ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে হামলা গ্রেপ্তার ৫ ◈ জামিন স্থগিত সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ◈ চট্টগ্রা‌মে মিরাজ তাণ্ডব, জিম্বাবু‌য়ের বিরু‌দ্ধে দ্বিতীয় টে‌স্টে ইনিংস ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ ◈ উত্তরায় চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনায় প্রাইভেট কারসহ দুই অপহরণকারী গ্রেফতার ◈ সম্ভাব্য তারিখ জানা গেল ঈদুল আজহার ◈ নির্বাচনী কোন ধরনের ঐক্য বা জোটে আগ্রহী নয় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

চীন-পাকিস্তানকে মাথায় রেখেই কী রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত?

এল আর বাদল: ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৬টা রাফাল-মেরিন যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই চুক্তির বিষয়ে সে দেশের সঙ্গে কথা বার্তা আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে এমন একটা সময়ে যখন পহেলগামে পর্যটকদের উপর হামলাকে কেন্দ্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা তুঙ্গে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ৭৪০কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত।

এই যুদ্ধবিমান আইএনএস বিক্রান্ত থেকে পরিচালিত হবে। পুরানো যুদ্ধবিমানগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়ে এই আধুনিক যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছে। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলো সরবরাহের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ক্রুদের ফ্রান্স এবং ভারতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা 'ডাসোঁ এভিয়েশন'-এর কাছ থেকে এই বিমান কিনছে ভারত। এখন প্রশ্ন হলো ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও 'আঁটসাঁটো' করার নেপথ্যে কারণ কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক রাফাল চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার দিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র সাংবাদিক কমার আঘা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও মজবুত করে তুলবে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে ইতিমধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে। এখন নৌবাহিনীর কাছেও তা থাকবে।

যুদ্ধবিমান ভারতে আসতে এবং ব্যবহার শুরু হতে আরো কয়েক বছর লাগলেও, এই চুক্তি স্বাক্ষর করা একাধিক কারণে বিশেষ ইঙ্গিতবহ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে রাফাল চুক্তির পিছনে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী ভাবনা রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট পাইলট এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বক্সী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছে একটা বার্তা তো যাবেই পাশাপাশি, চীনের কাছেও একটা বার্তা পৌঁছাবে।

চীনের তরফে ভারতের জন্য তৈরি হওয়া ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেও এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 -- রাফাল-এম চুক্তি স্বাক্ষর --

ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত থিয়েরি ম্যাথোয়ের সভাপতিত্বে সোমবার দিল্লিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রসঙ্গত, এই চুক্তির আওতায় থাকা ২৬টা যুদ্ধবিমানের মধ্যে ২২টা সিঙ্গেল সিটার এবং চারটে ডবল সিটার হবে বলে জানা গিয়েছে।

ভারতে রাফাল বিমানের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ও এই চুক্তির অন্তর্গত। এর ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে ইতিমধ্যেই ৩৬টা রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে। সাম্প্রতিক চুক্তি হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর কথা মাথায় রেখে রাফাল-এম বা রাফাল মেরিনের জন্য। এই যুদ্ধবিমান সমুদ্রে এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ারের সাহায্যে অপারেট করা হয়।

ভারতের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি-র সাবেক ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারল মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গগনজিত সিং বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ভারতের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষা খাতের আধুনিকীকরণ একটা উল্লখযোগ্য পদক্ষেপ। এর আগে বিমান বাহিনীর প্রধান ভারতে যুদ্ধবিমানের ঘাটতির বিষয়ে জানিয়েছিলেন। আমি মনে করি সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ (রাফাল) দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডর প্রফুল্ল বক্সীও এই চুক্তির গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ২৬টা রাফাল যুদ্ধবিমানের চুক্তি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য। এখন প্রশ্ন হলো বিমানবাহিনী থাকা সত্ত্বেও নৌবাহিনীর কেন এয়ার আর্ম দরকার?"

আসলে, নৌবাহিনীর জন্য এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার থাকার একাধিক কৌশলগত সুবিধা রয়েছে। নৌবাহিনী যতই মজবুত হোক না কেন, সমুদ্রে মোতায়েন বাহিনীর প্রতিরক্ষা তখনই আরও মজবুত হয় যখন এই জাতীয় ক্যারিয়ার জাহাজে উপস্থিত থাকে।

এক্ষেত্রে একাধিক কৌশলগত সুবিধাকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তার কথায়, এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার বা ফাইটার এয়ার ক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার জাহাজকে সুরক্ষিত রাখতে, বিপক্ষের জাহাজকে প্রতিহত করতে এবং প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের জাহাজ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

মিসাইল নিক্ষেপ করেও এমনটা সম্ভব কিন্তু জাহাজে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার উপস্থিত থাকলে রেঞ্জ বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করাটা সহজ হয়ে যায়।

-- কেন গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি? --
 
ভারত গত কয়েক দশক ধরে নিজেদের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে চারদিক থেকে মজবুত করার চেষ্টা করে এসেছে। বিশ্বের সামরিক শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে একাধিক দেশের সঙ্গে এই খাতে বিভিন্ন চুক্তিও হয়েছে।

মি. বক্সী ব্যাখ্যা করেছেন, প্রতিরক্ষার কথা ভেবেই কিন্তু '৬০ দশকে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার আনা হয়। তারপর হ্যারিয়ার জাম্পজেট, মিরাজ, এমআইজি ২৯কে থেকে শুরু করে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একদিক নয় সমস্তদিক থেকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিমানবাহিনীর কাছে ইতিমধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান ছিল এখন তা নৌবাহিনীর কাছেও থাকবে।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মনোজ যোশীর কথায়, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর কাছে একই ধরনের যুদ্ধবিমান থাকার ফলে তাদের মধ্যে সমন্বয় বাড়বে। এই যুদ্ধবিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে।

বক্সী আবার বলেছেন ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুরানো। সে দেশের সঙ্গে এর আগেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চুক্তি হয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকে দুই দেশের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেও এই চুক্তির গুরুত্ব আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়