পুরো ভারতজুড়ে মণিপুরের সহিংসতা আলোড়ন তৈরি করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিষয়টি নিয়ে একেবারে নিশ্চুপ। শুধু তাই নয়, বিজেপির শাসনামলে দেশটিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ ভুরিভুরি রয়েছে। সংখ্যালঘু হত্যা, গ্রেপ্তার ও শ্লীলতাহানীর ঘটনা বহুবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে। যা ভারতের জন্য খুবই লজ্জার। এ নিয়ে বারবার উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও।
ভারত তার নিজের দেশের যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে এতা মাথা ব্যথা কেন ভারতের? বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে অনবরত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। অপপ্রচারে মেতেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার সহযোগীরাও।
ইসকন বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় দাশের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে বুলি আওড়াচ্ছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। অথচ দলটি ক্ষমতা নেওয়ার পর গত ১০ বছরে দেশটিতে কমেছে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
বিজেপির শাসনামলেই দেশটিতে বেড়েছে মুসলমান কয়েদির সংখ্যা। ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মুসলমান হলেও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ভারতের কারাগারে বন্দি ১৯ দশমিক ১ শতাংশই মুসলিম। যার মধ্যে অন্যতম ইসলামিক স্কলার মাওলানা কালিম সিদ্দিকী। ২০২৩ সালের উত্তরপ্রদেশে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে আনা হয় জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ।
এ তালিকায় রয়েছে মুফতি জাহাঙ্গীর আলম কাসমী ও শিক্ষক মোহাম্মদ উমারের নাম। যারা পরিচালনা করতেন বোকা ও বধিরদের একটি স্কুল। গত বছর আইএসের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ দিয়ে দিল্লিতে গ্রেপ্তার করা হয় এই দুই নেতাকে। এছাড়া ২০১৬ সালে বিখ্যাত মুসলিম বিদ্বান ড. জাকির নায়েককে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে তাকে ভারত ছাড়া করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার পরিচালিত পিস টিভি।
বারানসির জ্ঞানবাপি, উত্তরপ্রদেশের জামে মসজিদ, বর্তমানে আজমেরি শরিফসহ বিভিন্ন মসজিদ নিয়ে টানা হেচড়া করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিজেপি। এসব মসজিদের স্থলে আগে মন্দির ছিল বলে দাবি তুলে চলছে জরিপ, যার প্রতিবাদ করতে গেলে মুসলমানদের উপর চড়াও হয় ভারতীয় পুলিশ। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে তিন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যাও করে তারা।
মুঘল স্থাপত্য তাজমহল, লালকেল্লার বিরুদ্ধেও চলছে এমন ষড়যন্ত্র। এছাড়া অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়ে গড়ে তোলা হয় রাম মন্দির।
শুধু মুসলিমই নয়, ভারতের মণিপুরেও চলছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। গত বছরেই দুই কুকি নারীকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী করা হয় রাজ্যটিতে। দাঙ্গায় প্রাণ যায় প্রায় ৩০০ মানুষের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মণিপুর ইস্যুতে উদাসীনতার অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। সিএএ এবং এনআরসির মতো আইনের নিন্দা জানানো হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে। সমালোচনা করা হয়েছে বুলডোজার দিয়ে মুসলিম স্থাপত্য গুড়িয়া দেওয়ারও।
তবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু নিমূর্লের ঘটনা ঘটানো হয় গুজরাটে। ২০০২ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় হত্যা করা হয় এক হাজারের বেশি মানুষকে। যাদের সিংহভাগই ছিল মুসলিম। গত বছর বিবিসির এক তথ্যচিত্রে বলা হয়, ওই দাঙ্গায় প্রত্যক্ষ মদদ ছিল তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
হিসাব করলে দেখা যাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতে। তারাই আবার বড় গলায় বলছে বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত সংগ্রামের ফলে ক্ষমতার আলিন্দ থেকে শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার পরে যেমন দেশের চতুর্দিকে জন উচ্ছাস দেখা গেল, তেমনি পড়শি ভারতের হিন্দি ও ইংরাজি মিডিয়া তুলে ধরলো যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নাকি তীব্র দমন পীড়ন শুরু করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমেরা।
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার বাংলা সংবাদ মাধ্যমও দিল্লীর সুরে সুর মেলালো। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন, নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন, নিয়ে মেতে উঠলো ভারতের মিডিয়া ও রাজনীতি। ভারতের লজ্জা থাকলে এসব মিথ্যাচার করার সাহস পেতো না। সূত্র : চ্যানেল২৪, গ্রামের কাগজ
আপনার মতামত লিখুন :