আজকের দিনে কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন—সবকিছুতেই আমরা স্ক্রিনের ওপর নির্ভরশীল। সকাল ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, চোখের সামনে থাকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের উজ্জ্বল আলো। এই ধারাবাহিক ব্যবহারে চোখ শুকিয়ে যাওয়া বা মাথাব্যথা হওয়া আমরা সবাই চিনি। কিন্তু জানেন কি? এই স্ক্রিনই নীরবে আপনার ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে আপনাকে আপনার বয়সের আগেই বয়স্ক দেখাতে পারে!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের মুখোমুখি থাকা শুধু ত্বক নয়, বরং আপনার ঘুম, চোখ, এমনকি শরীরের সামগ্রিক বার্ধক্য প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করছে। এই পুরো ঘটনাকে বলা হয় ‘ডিজিটাল এজিং’।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, স্ক্রিন কীভাবে আপনার বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে।
১. মূল কারণ নীল আলো
ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নির্গত দৃশ্যমান আলোর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো উচ্চশক্তির নীল আলো। সূর্যের আলোতেও নীল আলো থাকে, তবে স্ক্রিনের সামনে মুখোমুখি, কাছ থেকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফলে এই নীল আলো সরাসরি ত্বকের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
২. স্ক্রিন কীভাবে বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে?
ক. ত্বকের অকাল বার্ধক্য
ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি : নীল আলো ত্বকের গভীর স্তর পর্যন্ত পৌঁছে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি করে, যা কোষ ও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কোলাজেন ভাঙন : ফ্রি র্যাডিক্যালস ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখা কোলাজেন ও ইলাস্টিনকে নষ্ট করে। এর ফলে ত্বক ঢিলে হয়ে যায়, কুঁচকে ওঠে এবং বলিরেখা দ্রুত দেখা দেয়।
হাইপারপিগমেন্টেশন : নীল আলো ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে কালো দাগ বা ছোপ ফেলতে পারে।
খ. ঘুমের চক্রে বাধা ও অভ্যন্তরীণ ক্ষতি
মেলাটোনিন দমন : ঘুমানোর আগে স্ক্রিন দেখলে নীল আলো মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ দমন করে, যা স্বাভাবিক ঘুমের রুটিন নষ্ট করে।
কোষ মেরামত ব্যাহত : আমরা ঘুমের সময়ই শরীরের কোষগুলোর মেরামত ও পুনর্গঠন হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে শরীর অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায়।
গ. চোখের বার্ধক্য ও ক্লান্তি
শুষ্ক চোখ : স্ক্রিন দেখার সময় পলক ফেলা কমে যায়, ফলে চোখের আর্দ্রতা হ্রাস পায়।
ডিজিটাল আই স্ট্রেন : দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার চাপ চোখ ক্লান্ত করে, ঝাপসা দেখা বা মাথাব্যথার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘ. ভঙ্গিজনিত বার্ধক্য - ‘টেক নেক’
দীর্ঘ সময় মাথা নিচু করে ল্যাপটপ বা ফোন দেখার অভ্যাস ঘাড়ে স্থায়ী বলিরেখা তৈরি করে। থুতনির নিচের ত্বক ঢিলে হয়ে যেতেও পারে। এই সমস্যাই পরিচিত টেক নেক নামে, এটি এখনকার যুগের একটি নতুন বয়স-দেখানো সমস্যা।
৩. প্রতিরোধ ও সুরক্ষার উপায়
দৈনন্দিন অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলেই ডিজিটাল এজিং থেকে নিজেকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
নীল আলো ফিল্টার : কম্পিউটার বা মোবাইলের ‘নাইট মোড’ বা ব্লু-লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন।
২০-২০-২০ নিয়ম : প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকান।
স্ক্রিন বিরতি : ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে সব স্ক্রিন বন্ধ রাখুন।
সঠিক ভঙ্গি : স্ক্রিনকে চোখের সমান্তরালে রাখুন; মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বসা এড়িয়ে চলুন।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্কিনকেয়ার : ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ফ্রি র্যাডিক্যালসের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস