শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

আওয়মী লীগ বিহীন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে এখন যে সব চিন্তাভাবনা 

দিল্লিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আইআইসির আলোচনাসভায় মূল বক্তারা

এল আর বাদল : সব ঠিকঠাক থাকলে ও পরিকল্পনা মাফিক এগোলে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর মাত্র মাস পাঁচেকের মধ্যেই।

দেশটিতে এর আগেকার পর পর তিনটি নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, এমনকি ভারতের সমর্থনেই শেখ হাসিনা সরকার তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে উতরে যেতে পেরেছে – এমন অভিযোগও আছে।

কিন্তু এবারে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাব এখন কী হতে পারে? বা আরও স্পষ্ট করে বললে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে ঠিক কী হওয়া উচিত? ------- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

বস্তুত গত এক বছরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে, তারা চায় বাংলাদেশে 'যত দ্রুত সম্ভব' একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক – এবং সেই নির্বাচন হোক 'গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।

তবে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে – এবং পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে তাদের 'নৌকা' প্রতীকে লড়তে পারবে, এমন কোনো সম্ভাবনাই এ মুহুর্তে দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিহীন কোনও নির্বাচনকে ভারত অন্তর্ভুক্তিমূলক মনে করবে কি না সে বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে।

এর পাশাপাশি ভারতের অ্যাকাডেমিক মহলে, থিংকট্যাংক সার্কিটে বা বৃহত্তর সিভিল সোসাইটিতেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত – আর সেখানেও উঠে আসছে নানা ধরনের মতামত।

এ সবকিছুই এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশ ভারতে অবস্থান করছেন।

এই পটভূমিতেই দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (আইআইসি), যেটি ভারতের বৈদেশিক নানা ইস্যুতে চর্চার একটি প্রধান কেন্দ্র, সম্প্রতি বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আয়োজন করেছিল একটি আলোচনা সভার।

ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের দিক থেকে কী ধরনের 'প্রস্তুতি' কাঙ্ক্ষিত, সেই প্রশ্নকে ঘিরেই বিশ্লেষকরা সেখানে নানা সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা করেছেন যা থেকে ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের মনোভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় – এই প্রতিবেদনে থাকছে তারই সারসংক্ষেপ।

'ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ'

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় আমলা ও প্রসার ভারতী বোর্ডের প্রাক্তন সিইও জহর সরকার বিশ্বাস মনে করেন, এই মুহুর্তে কোনও 'প্ররোচনায়' পা না দিয়ে ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের নির্বাচনে কী ফলাফল হয়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করা।

আইআইসি-র আলোচনাসভার সঞ্চালকও ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এই সাবেক পার্লামেন্টারিয়ান।

মি. সরকার বিবিসিকে বলছিলেন, "বাংলাদেশে এখনকার প্রেজেন্ট পরিস্থিতি আমাদের মানতে হবে, বুঝতে হবে। বোঝার থেকেও বেশি কথা হলো মানতে হবে।"

আসলে হঠাৎ (পালাবদল) হয়ে যাওয়াতে (দিল্লির) একটা শকের মতো হয়ে গিয়েছিল … এখন মেনে নিতে হবে যে, বাংলাদেশের ভোটাররা যাকেই তাদের শাসক হিসেবে চিহ্নিত করবে তাদেরকে আমাদের মানতে হবে।

কিন্তু বাংলাদেশের নতুন সরকার যদি ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন না হয়, সেই ঝুঁকির দিকটা কি ভারত মাথায় রাখবে না?

এমন প্রশ্নে জহর সরকার জবাব দেন, "এটা ঠিকই, এর মধ্যে একটা পয়েন্ট অব ভিউ এসে যায়, সেই সরকার যদি আমাদের বিরুদ্ধে হয় তখন কী হবে? আরে এসব কথা পরের কথা … এগুলো পরের কথা … কে আসবে কে যাবে - কেউ জানে না।

আসলে হচ্ছে কী, (বাংলাদেশে) কিছু ক্ষ্যাপা লোক টুকটাক করে কিছু বলে ফেলছে – যার বেসিসে সঙ্গে সঙ্গে একটা রিঅ্যাকশন হচ্ছে, তাতে মানুষ ক্ষেপে যাচ্ছে।

আসলে মনে রাখতে হবে (বাংলাদেশে) এখনকার যে সরকার সেটা একটা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট – তাদের এত বেশি বলার বা খোঁচানোরও প্রয়োজনীয়তা নেই, তারা তো ইলেকশনটা করে নিলেই পারে।

ফলে এখন আর কয়েকটা মাস ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে ভারতের উচিত কে ক্ষমতায় আসে সেটা দেখা – এবং তাদের বিষয়ে নীতি স্থির করা, এটাই তার অভিমত।

কেন না এটা তো একটা স্টপগ্যাপ সরকার, আসল সরকার আসুক – তারপরে তাদের সাথে কী বোঝাপড়া করা হবে, আমাদের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে – সে সম্পর্কটা কতখানি বজায় রাখা যায় সেটা তখন না হয় আমরা দেখব?", বলছিলেন জহর সরকার।

বসে দেখার বিপক্ষেও কেউ কেউ

দিল্লির পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন, এমন অনেকের আবার মত হলো 'ভারতের স্বার্থবিরোধী' কোনো সরকারের যদি ঢাকার ক্ষমতায় আসার সত্যিই আসার সম্ভাবনা থাকে – সেটা চুপচাপ বসে দেখে যাওয়ার কোনও অবকাশ নেই!

এরকমই একজন হলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, যিনি সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে রাজ্যসভার এমপি হয়েছেন।

ঢাকায় ভারতের এই সাবেক হাই কমিশনার আইআইসি-র আলোচনায় বলেন, "বাংলাদেশে যদি 'ভুল' একটা সরকার সত্যিই ক্ষমতায় এসে যায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থর জন্য তার পরিণতি কী হতে পারে সেটা ভেবেও আমি কিন্তু সত্যিই দ্বিধান্বিত।

আসলে এটার একটা বাস্তবতার দিক আছে, নিরাপত্তার দিক আছে, যেটা ভারতের সব নাগরিকের জন্যই দুশ্চিন্তার বিষয়।"

তিনি আরও যুক্তি দিচ্ছেন, "এটা খুব সহজে বলাই যায়, 'যে কেউ'ই জিতে ক্ষমতায় আসুক আমরা তাদের সঙ্গেই কাজ করবো – কিন্তু সেই 'যে কেউ'-টা যদি আপনার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে তাহলে তো সেটা নিয়ে আপনাকে অবহিত থাকতে হবে।"

"তখন তো আপনি বলতে পারেন না, ও আপনারা ওখানে ক্ষমতায় আছেন, বেশ বেশ!"

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আরও মনে করেন – দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশী যারা, তাদের দেশের পরিস্থিতিকে তাদের 'অভ্যন্তরীণ ব্যাপার' বলে ভারত কখনোই এড়িয়ে যেতে পারে না। মানে 'যেখানে ভারতের স্বার্থ জড়িত, সেটা অবশ্যই ভারতেরও ব্যাপার।

আওয়ামী লীগ-বিহীন নির্বাচনই বাস্তবতা?

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত অবস্থান হলো, তারা বাংলাদেশে একটি 'ইনক্লুসিভ' বা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং 'পার্টিসিপেটরি' বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।

অনেক পর্যবেক্ষকই যে কথার অর্থ করছেন এভাবে – ভারতের অভিপ্রায় আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো আকারে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনেও থাকুক, সে দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক শক্তিটি ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাক।

তবে আজকের বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ভাল যোগাযোগ আছে, দিল্লিতে এমন কেউ কেউ আবার মনে করছেন বাস্তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে!

ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও দীর্ঘদিনের বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত সদ্যই ঢাকা ঘুরে এসেছেন, সেই সফরে তিনি দেখা করেছেন জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি-সহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে।

সেই সব আলোচনার প্রেক্ষাপটে তিনি কিন্তু মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে অন্তত আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না – আর ভারতেরও সেই বাস্তবতাটা স্বীকার করে নেওয়া উচিত।

ড.দত্ত বিবিসিকে বলছিলেন, "ওরা বলছে আমরা আওয়ামী লীগকে কী করে আসতে দেব? যাদের জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রাণ দিয়েছে ... এখনো তো কত হাজার ছেলেমেয়ে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে ... তাদেরকে আমরা কী জবাব দেব?"

"এগুলো তো আওয়ামী লীগের শাসনামলেই হয়েছে, শেখ হাসিনা এগুলো করেছে। তার পলিটিক্যাল পার্টিকে আমরা আবার এক্ষুনি ডেকে নেব? এটা কোনো কথা?"

এই চরম আবেগের ইস্যুটার নিষ্পত্তি বা 'ক্লোজার' হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।

"মানে ওদের জন্য ওটা এখনো ভীষণ ইমোটিভ ইস্যু ... কী বলবো ... মানে এখনো ওদের চোখে জল আমি দেখতে পাচ্ছি। ওরা বলছে, আমাদের ভাই-বোনের কথা আমরা ভাববো না?"

"তা ছাড়া আমার নিজস্ব যেটা ধারণা ... ২০১৪, ২০১৮তে বা ২০২৪-এ কেন আমরা ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলিনি? এখন কেন বলছি আমরা?", বলছিলেন শ্রীরাধা দত্ত।

বস্তুত গত তিনটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি অথবা বিএনপি-র বাইরে থাকাকে ভারত যেভাবে চোখ বন্ধ করে 'অনুমোদন' দিয়েছিল, সেটাই তাদের নৈতিক অবস্থানকে এখন দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

"সুতরাং আমার মনে হয় বাংলাদেশকে এখন আমাদের বলা উচিত ওরা যেটা নিজেরা ঠিক করবে, আমরা সেটাই অ্যাকসেপ্ট করবো। তা আমাদের পছন্দ হয়তো নাও হতে পারে, হয়তো হবে না – কিন্তু ওদের যেটা পয়েন্ট অব ভিউ, মানে ওরা যেটা চায়, মেজরিটি যেটা চায় তার একটা মর্যাদা দিতে হবে।

আর এতদিন ধরে অন্তর্বর্তী সরকার যে আলোচনাগুলো করছে, ওটাও পর্যালোচনা করা দরকার – যে সে দেশের পলিটিক্যাল পার্টিগুলো কী চাইছে? তো মোটামুটি এখন একটা জায়গা দাঁড়িয়েছে যে আওয়ামী লীগ ছাড়াই ইলেকশন হয়তো হবে", বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়