শিরোনাম
◈ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেশজুড়ে জন্মাষ্টমী পালন, সম্প্রীতি রক্ষায় সজাগ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক, ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী ◈ কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ, চালুতে অনিশ্চয়তা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কা ◈ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব ◈ কবিরহাটে শেখ মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়ায় ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ৩ জন আটক ◈ ভারতে চ‌্যা‌ম্পিয়ন্স লিগ খেলতে আস‌ছেন ক্রিশ্চিয়া‌নো রোনাল‌দো ◈ ছাত্রশিবির, গোপন রাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ◈ আটালান্টা ফায়া‌রে যুক্তরা‌ষ্ট্রের মাইনর ক্রিকেট লিগ খেলবেন সাকিব আল হাসান ◈ আলাস্কায় ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক শুরু, তিন বছরের রক্তক্ষয়ী ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান কি আসন্ন?

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ১১:১৮ দুপুর
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ছাত্রশিবির, গোপন রাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এল আর বাদল : ওই বড় ভাই প্রথমে আমাকে আলাদা রুমে নেয়। ...তারপর সেখানে আমার বাম হাতটা ধরে একটু মোচড় দিয়ে রাখলো। এরপর ক্রমাগত আমার কান আর গাল বরাবর থাপ্পর দিতে থাকে সর্বশক্তি দিয়ে। এতো জোরে চড় মারছিলো যে আমার কান থেকে রক্ত বের হয়ে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম কেন্দ্রিক নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সূর্যসেন হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান। তার ভাষায়, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অনিয়মিত হওয়ায় ২০২৪ সালের শুরুতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ---- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

প্রতিদিন গেস্টরুম করা লাগবে। হলে থাকার জন্য এটাই নিয়ম। আপনার যদি ফাইনাল পরীক্ষাও থাকে তারপরও আপনাকে এসে অপেক্ষা করতে হবে। ভাইয়েরা আসলে তাদেরকে বলে অনুমতি নিয়ে তারপর পড়তে যাবেন। নাহলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যাবে," বলেন মি. আরিফ।

তবে গত বছরের পাঁচই অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখন আর গেস্টরুম নেই বলে জানাচ্ছেন আরিফুর রহমান। কিন্তু আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি ফিরলে আবারও 'গণরুম-গেস্টরুম কালচার' ফিরে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

আরিফুর রহমান বলেন, "দেখেন এখন আমরা স্বাধীন। দিনে পাঁচ/ছয় ঘণ্টা রাজনীতিতে নষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু হলে রাজনীতি ফিরলে এর প্রভাব পড়বেই। হলে রাজনীতি না থাকলে ছাত্রদল, শিবির কিংবা বাম সংগঠন তাদের কী সমস্যা আমি বুঝি না আসলে। তারা কমিটি দিলেই গেস্টরুম, গণরুম এগুলো ফিরবে।

পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে আরিফুর রহমান যেমন হলে ছাত্ররাজনীতি চান না। তেমনই সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও অনেকে রাজনীতির বিপক্ষে। ফলে এক সপ্তাহ আগে যখন ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কমিটি ঘোষণা করে তখন ছাত্রদের একটা অংশ এর বিপক্ষে বিক্ষোভ দেখায়। হলে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষোভের মুখে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মৌখিক ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কিন্তু এরমধ্যেই ছাত্রদল, ছাত্রইউনিয়নসহ বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন হলে ছাত্ররাজনীতি শুরু করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ কোনও কোনও দল আবার হলে রাজনীতি চায় না।

ফলে ডাকসু নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি কেমন অবস্থায় থাকবে, তা নিয়ে নানা বিতর্ক, আলোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। প্রকাশ্য রাজনীতি বনাম গোপন রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে এসেছে আলোচনায়।

যদিও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় লেজুড়বৃত্তিক বা দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয় এবং নয় দফার মধ্যে সেই দাবি অন্তর্ভূক্ত করা হলেও এখন রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে ছাত্র সংগঠনগুলো।

ক্যাম্পাস এবং হলে রাজনীতি কেন দরকার?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে মূলত: গত বছরের ১৫ই জুলাই ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার পর।

পরবর্তীকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নয় দফা দাবির মধ্যেও বলা হয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা।

কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব দ্রুতই রাজনীতি ফিরে আসে। সক্রিয় হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সবগুলো ছাত্রসংগঠন। এমনকি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে।

এসব সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠকে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আর সামনে আসেনি।

এরমধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে খোদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একটা অংশ নিজেরাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নামে একটি ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেন। যেটা এনসিপির হয় কাজ করছে এমন অভিযোগ আছে। যদিও দলটির নেতারা কারও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার কথা অস্বীকার করেছেন।

এটা আসলে অপপ্রচার। আমরা এনসিপির লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন না। আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি। এনসিপির সঙ্গে আমাদের সাংগঠনিক কোনও সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের কোনও অভিভাবক সংগঠন নেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের অভিভাবক।" বলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ -বাগছাসের মুখপাত্র হাসিব আল ইসলাম।

অভ্যুত্থানের নেতাদের এই দল বাগছাস ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে হলগুলোতে আবার তারা রাজনীতি চান না। যদিও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন হলে রাজনীতির পক্ষে।

কারণ হিসেবে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মল্লিক ওয়াসি উদ্দিন তামী বিবিসি বাংলাকে বলেন, হলগুলোতে রাজনীতি করতে না দিলে ডাকসু নির্বাচনে তারা কীভাবে কাজ করবেন?

তিনি বলেন, "হলগুলোতে যদি আমাদের সাংগঠনিক কোনও রূপ না থাকে তাহলে আমরা প্রচারণা কীভাবে করবো। আমরা তো কোনও গুপ্ত সংগঠন না যে গোপনে কাজ করবো। আমাদের প্রকাশ্য সাংগঠনিক কাঠামো দরকার। সেটার জন্যই আমরা হল কমিটি দিয়েছি।"

তবে হলে সবার আগে কমিটি দিয়েছিলো ছাত্রইউনিয়ন। জগন্নাথ হলে তারা সর্বপ্রথম কমিটি ঘোষণা করে। ছাত্রইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বিবিসিকে বলেন, হলের যে কোনও সংকট মোকাবেলায় হল কমিটির মাধ্যমেই কাজ করতে হয়।

"হলে রাজনীতি নিয়ে একটা ট্রমা বা ভীতি আছে। সেটাকে আমরা সম্মান করি। তবে তাদের অনুভূতি নিয়ে কারা খেলছে, সেটা স্পষ্ট। 

এখানে হলভিত্তিক অনেক সংকট আছে। সেগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির লোকেরা তো সেখানে যাবে না। সেখানে হল কমিটির নেতারাই ভূমিকা রাখবেন" বলেন ছাত্রইউনিয়নের নেতা।

গোপন রাজনীতি কীভাবে বন্ধ হবে?

ছাত্রসংগঠনগুলোর অনেকে বলছেন, আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে সেখানে গোপন রাজনীতি বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকলে হলগুলোকে এর বাইরে কীভাবে রাখা যাবে, সেটাও স্পষ্ট নয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, গোপন রাজনীতি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, "এখানে গোপন রাজনীতি যারা করছে, মূলত ছাত্রশিবিরের কথাই বলা হচ্ছে যে তারা গোপন রাজনীতি চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিষয়ে কি প্রশাসনের কোনও অবস্থান আছে? প্রশাসন যদি এখানে কঠোর না হয় বা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে এই গোপন রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না। কিন্তু হলে রাজনীতি ফেরানোর পক্ষপাতি নন উমামা ফাতেমা।

ছাত্রশিবির কী বলছে?

তবে হলগুলোতে রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে যখন নানা যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে তখন শিবিরের অবস্থান অনেকটা মাঝামাঝি।দলটি এখনই কোনও সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না।

যদিও বিভিন্ন দল প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছে যে, হলগুলোতে ছাত্রশিবিরের 'গোপন কার্যক্রম এবং কমিটি' আছে। ফলে হলে প্রকাশ্য রাজনীতি না থাকলে শিবিরের লাভ। তবে শিবির নেতারা সেটা অস্বীকার করেন।

কিন্তু তাহলে হলপর্যায়ে শিবির কেন নেতাদের পরিচয় প্রকাশ্য করছে না- এমন প্রশ্নে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বিবিসি বাংলাকে বলেন, তাদের নেতাদের পরিচয় অন্যদের অজানা নয়।

আমরা অসংখ্য প্রোগ্রাম করেছি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এগুলোতে হল থেকেই তো শিক্ষার্থীরা আসছে। হলগুলোতে আমাদের ছোট ছোট টিম তাদের কাছে গিয়েছে। এখন সবাই তো সবাইকে চেনে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়