শিরোনাম
◈ ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু’—ইসরায়েলি হামলায় রুশ জেনারেলের সতর্কবার্তা ◈ টিউলিপ সিদ্দিকের আদালতে হাজির হওয়া উচিত: আইটিভিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ ‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ◈ ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর: রাজপরিবার থেকে রাজনীতি পর্যন্ত ৫ সাফল্য ◈ শোকাহত ভারতের ক্রীড়াঙ্গন ◈ একক দলকেই প্রাধান্য, জাতীয় ঐকমত্য উপেক্ষিত—মুহাম্মদ ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠকের সমালোচনায় এনসিপি ◈ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও শিক্ষা-অর্থনীতির চ্যালেঞ্জে একমত ড. ইউনূস ও গর্ডন ব্রাউন ◈ টেস্ট চ‌্যা‌ম্পিয়ন‌শিপ ফাইনাল জিত‌তে আফ্রিকাকে ২৮২ রানের লক্ষ্য দিলো অস্ট্রেলিয়া ◈ অ‌ধিনায়ক মেহে‌দী মিরাজ বললেন, আমা‌দের দলে প্রতিভার অভাব নেই ◈ ‌ডি ব্রুইনা আর ম‍্যানসিটিতে খেল‌বেন না, যোগ দি‌লেন নাপোলিতে 

প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০২৫, ১২:১৬ দুপুর
আপডেট : ১৪ জুন, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ে আক্ষেপ আবদুল হামিদের, শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন

আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিণতি দেখে ‘খুব মন খারাপ’ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। তিনি কাছের মানুষদের প্রায়ই বলেন, গত ১৬ বছরে ‘আমাদের অনেক ভুল ছিল। তা না হলে এমনটা কেন হলো? ভুল ছিল বলেই আজকের এই পরিণতি। আজকের অবস্থা হয়তো আমাদের ভুলেরই শাস্তি।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ২০১২ সালে যখন স্পিকার ছিলাম তখনই বলেছি, ‘সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বেশিদিন সায় দেবে না।’ বর্তমানে কার্যত নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগকে আগামী দিনে রাজনীতি করতে হলে তাদের অতীতের ভুল শোধরাতে হবে বলেও মনে করেন দলটির শাসনামলে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ। সূত্র: যুগান্তর

বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানান আবদুল হামিদের শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান। গত ৭ মে রাতে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। প্রায় এক মাস পর রোববার গভীর রাতে (রাত ১টা ২৫ মিনিটে) থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৯৯ ফ্লাইটে তারা ফিরেছেনও একই সঙ্গে। ৮২ বছর বয়সি অসুস্থ ভগ্নীপতিকে কাছে থেকে দেখাশোনা করছেন নওশাদ খান। তার সঙ্গে আবদুল হামিদের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি কথা হয় আওয়ামী লীগের বিগত দিনের রাজনীতি এবং সামনের দিনের রাজনীতির সুযোগ সম্পর্কে আবদুল হামিদের ভাবনার বিষয়ে। নওশাদ খান জানান, তিনি (আবদুল হামিদ) পুরোপুরি পারিবারিক আবহেই আছেন। রাজনৈতিক কোনো যোগাযোগ এখন নেই। সেই ধরনের শারীরিক অবস্থাও তার নেই বলে জানান তার শ্যালক নওশাদ খান।

৫ আগস্টের পর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। তার নিজের বা শেখ হাসিনা-কোনো পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ও কথাবার্তা হয় না। তবে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন দেশ ও রাজনীতি সম্পর্কে। নিয়মিত পড়েন খবরের কাগজ। সুযোগ পেলে খবর দেখেন টেলিভিশনেও। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই হয় পলাতক, নয়তো জেলে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলছে। বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনও স্থগিত করেছে।

আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও কথা বলার চেষ্টা করতেন আবদুল হামিদ। যেসব বিষয় তার পছন্দ হতো না সেসব বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও মাঝে মধ্যে বলতেন। এ বিষয়ে তার শ্যালক নওশাদ খান বলেন, তিনি প্রায়ই বলেন, আমিই একমাত্র অনেক কথা বলতাম। এজন্য অনেকে আমাকে পছন্দও করত না। 

আবদুল হামিদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে ধরে ধরে বাথরুমে নিতে হয়। তিনি নামাজও পড়তে পারেন না। এ বিষয়ে নওশাদ খান জানান, উনি বলেছেন, ‘নামাজ-কালাম তো পড়ি নাই। আল্লাহই জানেন কী হয়।’ তবে আমি বলেছি, আপনি তো অনেক মানুষের উপকার করেছেন, কারও ক্ষতি করেননি। আল্লাহ নিশ্চয় মাফ করবেন।

আবদুল হামিদের ল্যাং ক্যানসার ‘থ্রি টু ফোর স্টেজ’-এর মাঝামাঝিতে রয়েছে। যেটাকে লাস্ট স্টেজ বলা হয়। যা কিছুটা ছড়িয়েও গেছে। তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। ওজন অনেক কমে গেছে। নিজে নিজে চলাফেরাও করতে পারেন না। অন্যের সাপোর্ট নিয়ে চলাফেরা করেন। ডা. আনম নওশাদ খান বলেন, ডাক্তার তিন মাস অপেক্ষা করতে বলেছেন। এরপর আবার তাকে যেতে হবে। তার বিদেশ যাত্রা নিয়ে দেশে নানা ধরনের আলোচনা চললেও তিনি নিজে দেশে ফেরার বিষয়ে অনড় ছিলেন। নওশাদ খান জানান, অনেকেই তাকে বলেছেন, আপনি দেশে ফিরবেন না। কিন্তু তিনি বলেছেন, না, আমি দেশে ফিরবই। যা হওয়ার হবে। দেশে ফিরে দেশের মাটিতেই না হয় মারা গেলাম। দেশেই তো আমার আত্মীয়স্বজন সবাই আছে।

তবে চলাফেরা করতে না পারলেও এখনো দেশ ও রাজনীতির খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেন সব সময়। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন এবং মাঝে মধ্যে টেলিভিশন দেখেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। নওশাদ খান বলেন, তিনি প্রায়ই বলেন, দেশে আসার পর তিনি মানসিকভাবে খুব ভালো আছেন।

হাওড় এলাকায় জন্ম আবদুল হামিদের। ছাত্রজীবন থেকেই জড়িত ছিলেন রাজনীতিতে। ছিলেন সাতবারের এমপি। ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার। এরপর রাষ্ট্রপতি হিসাবে টানা ১০ বছর ৪১ দিন কাটিয়েছেন রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনে। কিন্তু হাওড়ের মাটি-মানুষ তাকে সব সময়ই টানত। রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গভবনের চার দেওয়ালের ভেতর অবস্থানের সময়কে বন্দিজীবন হিসাবে অভিহিত করেছেন। সময় পেলেই ছুটে যেতেন হাওড়ে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও এখনো এলাকার খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেন আবদুল হামিদ। নওশাদ খান জানান, হাওড়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা তিনি সব সময়ই বলেন। কিন্তু তার শরীরের যে অবস্থা তাতে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে তিনি সুযোগ পেলেই এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। তাদের বিষয়ে জানতে চান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়