মহসিন কবির: জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে রাজনীতিতে বিতর্ক যেন থামছেই না। বিশেষ করে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে চাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তবে এ দাবির পবিপক্ষ শক্তি বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, ১৭ বছর আন্দোলন করেছি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, এখন নির্বাচন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কশিনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ রোববার বলেছেন, আগামী ১৫ মে'র মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক আলোচনা শেষ হবে, এরপরে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। আর যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি হবে।
এবি পার্টির অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা খেয়াল করছি, গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমন একটি আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন একটা অপরাধ।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, অতীতেও অনেক মহামানব তৈরি করা হয়েছে, যার ফলাফল কী হয়েছে, সেটা দেশের মানুষ দেখতে পেয়েছে। এখানে ব্যক্তিবিশেষের বিষয় নয়, কোনো ‘মহামানব' তৈরির জন্য মানুষ জীবন দেয়নি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, তারেক রহমান যা বলেছেন, তার তো কারণ আছে। একটি অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চলছে। এতে কারো কারো লাভ আছে। এখন দরকার নির্বাচন। আমরা তো যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য বলছি। কিন্তু নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা দেখছি। আমরা নির্বাচনের কথা বললেই অমাদের সংস্কারবিরোধী বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, কেউ কেউ বলছেন বিএনপিকে ক্ষমতায় পাঠানোর জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। নির্বাচন করা নাকি এই সরকারের প্রধান কাজ নয়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, একটি দল এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সরকারের কিছু উপদেষ্টা ছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠী ও কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, প্রফেসর ইউনূসের ওপর আমাদের এখনো আস্থা আছে। আমি মনে করি, তার পক্ষে একটি সর্বোত্তম নির্বাচন দেয়া সম্ভব। কিন্তু তার উপদেষ্টা পরিষদের অনেকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে, সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা দরকার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের মতে, এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে যে, নির্বাচনের কথা বললেই নানা ধরনের অপবাদ দেয়া হয়।'' তার কথা, "আসলে নির্বাচন চাওয়ার কারণে আমাদের সংস্কারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচন চায়, ভারতও নির্বাচন চায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, যতটা না সরকার তার চেয়ে বেশি নতুন দল এনসিপি নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কার ছাড়াও কতগুলো শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সারও এই কাজ করছেন। জামায়াতও কখনো কখনো বলছে। তারা আরো এগিয়ে গিয়ে বলছে ভারতও নির্বাচন চায়, বিএনপিও নির্বাচন চায়। কেউ যখন নির্বাচনের কথা বলছে, তখন ‘ভারতের দালাল' ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিএনপির জন্য এই ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে