শিরোনাম
◈ পুলিশের শীর্ষস্থানীয় ১৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ ভারত থেকে এভাবে 'পুশ–ইন' সঠিক নয়: নিরাপত্তা উপদেষ্টা ◈ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মার্কিন কৌশলগত স্বার্থের ক্ষতি করবে ◈ সোহান ও অঙ্কনের সেঞ্চুরি, নিউ‌জিল‌্যা‌ন্ডের বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ এ’ দল ◈ ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত’ ◈ যে কারণে ভারত বনাম পাকিস্তান যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন যুদ্ধও! ◈ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলনের ◈ ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ◈ ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: সীমান্ত জেলার পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ আইজিপির ◈ ভারতের হামলায় মাসুদ আজহার পরিবারের ১০ সদস্য নিহত: বিবিসি

প্রকাশিত : ০৭ মে, ২০২৫, ১০:৪০ দুপুর
আপডেট : ০৮ মে, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেখ হাসিনার 'উস্কানি': ঝটিকা মিছিলে বিপাকে আওয়ামী লীগ, ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার নতুন ভুলে খাদের কিনারে থাকা আওয়ামী লীগ এখন একেবারে খাদের মধ্যে পড়ে গেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে ঝটিকা মিছিলের নামে মাঠে নামতে গিয়ে এখন নতুন করে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। এতদিন যারা নানা কৌশল অবলম্বন করে এলাকায় কোনোমতে টিকে ছিলেন তারাও এখন দৌড়ের মধ্যে আছেন। ইতোমধ্যে সারা দেশে অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। 

এসব কারণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার প্রতি এখন চরম ক্ষুব্ধ। যারা মনে করেছিলেন, সত্যিই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসতে পারবেন। আওয়ামী লীগ এভাবে ঝটিকা মিছিলের মধ্য দিয়ে দ্রুত রাজনীতিতে ফিরতে পারবে, তাদের সে আশা পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। তাই শেখ হাসিনা এবং পরিবারের সদস্যদের সুবিধার জন্য কেউ আর রাজপথে নামবে না। এছাড়া বিদেশে পলাতক থেকে দলের যেসব গডফাদার উসকানি দিচ্ছেন তাদেরও তারা ফাইন্যালি লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, শেখ হাসিনা বা তার দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচির আহ্বান আসছে, তা ভালো কী মন্দ, ঠিক না ভুল; সেটা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তারা তাদের মতো রাজনীতি করবে এবং তারা সেটা করতে পারে। আমি সাধারণ নাগরিক হিসাবে মনে করি আওয়ামী লীগের যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা নিজেরাও জানে তারা প্রচুর অপরাধ করেছে। এর বিচার হলে তাদের সাজা ভোগ করতে হবে এটাও তারা জানে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া এই লোকের সংখ্যা খুব বেশি হলে ১০ হাজার। কিন্তু সারা দেশে তাদের নেতাকর্মী তো আরও অনেক বেশি। বাকিরা দেশেই আছে। কেউ জেলে আছে। কেউ পালিয়ে আছে। কেউ আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। যারা পালিয়েছে তারা মূলত দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধী। তারা আবার রাজনীতিতে নিজেদের পুনর্বাসিত করার জন্য অনেক কিছুই করবে। তারা কর্মসূচি দেবে, কর্মসূচির পেছনে টাকা ঢালবে। প্রয়োজনে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করবে। প্রতিটা বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের পর পরাজিত শক্তিরা এগুলো করে। এটা নতুন নয়। এটা তাদের রাজনীতি। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এই ধরনের করাপট লিডারশিপের পেছনে থাকবে, নাকি নিজেরাই বিকল্প লিডারশিপ গড়ে তুলবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ও মাঠে নামা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, আমি ঠিক জানি না এখানে আওয়ামী লীগের লোকজন কতটা ছিল। কারণ তাদের দলের জেলা ও থানা পর্যায়ের পদে থাকা বেশিরভাগই দেশে নেই। ফলে আমার ধারণা, এরা দল করা লোক নয়, টাকা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। এটা তারা করতে চাইছে এজন্য যে, কোনো রাজনৈতিক দল তাদের থামাবে বা সরকার তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেবে। এরপর আওয়ামী লীগ গ্লোবালি পেজেন্ট করবে যে তারা তো নিষিদ্ধ দল না। ফলে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সাংবিধানিক অধিকার তাদের রয়েছে-এটা দেখানোর জন্যই নেতারা বাইরে নিরাপদে বসে থেকে এগুলো করাচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির হিসাবে এটা তো ঠিকই আছে।

এর মধ্য দিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে ফেলা হচ্ছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো বটেই। যে কয়জন পালাতে পারেনি, তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যারা খুব বেশি ক্রাইম করেনি তাদের সঙ্গে এক ধরনের রিকন্সিলেশন হয়েছিল। এটার কারণে দেখা যাবে তারাও পালটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। শেখ হাসিনা তো নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাকেও তো আমরা ভারতের মিডিয়ায় বলতে শুনেছি- ‘আরেকটু আগে বললেও তো আমরা পালাতে পারতাম।’ ফলে শেখ হাসিনা তার বেনিফিটের জন্য এটা করছেন। কারণ তিনি ও তার পরিবার তো নিরাপদ আছে। এখন আমি আশা করি তার দলের নেতারা এটা বুঝবেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। দলটির বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাবেক এমপি-মন্ত্রীও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। যারা দেশে আছেন তাদের অনেকেই জেলে। অনেকেই দিয়েছেন গা-ঢাকা। এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগেই শেখ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা দেশ ছাড়ে। যা রহস্যজনক। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনা এমন পরিস্থিতি আগেই জানতে পেরেছিলেন। এজন্য শেখ পরিবারের সবাইকে তিনি আগেই বিদেশে পার করে দেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। সেখানে তানভীর নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন হাসিনা। এছাড়া খুব দ্রুত দেশের ফিরবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। অতদূরে নাই। আমি খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’

গত এপ্রিলে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই আলোচনাপর্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমস্যার কথা শোনেন শেখ হাসিনা। সেদিন নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ‘এক গালে চড় মারলে আরেক গাল পেতে দেওয়ার সময় শেষ। যারা আমাদের ওপর আঘাত করেছে, তাদের জবাব দিতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে। কবে সময় আসবে সেটার জন্য অপেক্ষা করলে হবে না, এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।’

এ মাসেই আরেকটি বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘যে যেখানে আছো, তুমিই সেখানকার নেতা। কারও নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার দরকার নাই।’ এর আগে তার বক্তব্যের জের ধরে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ভাঙচুর শুরু হয়। ওই সময় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের পাশাপাশি সুধাসদনসহ ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, শেখ হাসিনার বক্তব্যে সাধারণ নেতাকর্মীরা অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে মাঠে নামেন। মিছিল করে তার ছবি এবং ভিডিও পাঠায় হাইকমান্ডের কাছে। সেগুলো আওয়ামী লীগ তাদের দলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আপলোড দেওয়া হয়। এভাবে তারা দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বাইরেও বেশ কিছু ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। এপ্রিল মাসেও চট্টগ্রামে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া খুলনা, রাজশাহী, সিলেটসহ আরও বিভিন্ন স্থানে রাতে ও ভোরবেলা ঝটিকা মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সারাদেশে গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পর ঝটিকা মিছিল তো দূরের কথা তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়