শিরোনাম
◈ ‘নারীর দিকে তাকানোর ঘটনা নিয়ে’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ২০ ◈ এআই দক্ষতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ, সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছে না ◈ পুঁজিবাজারে এক মাসে ১৭ হাজার কোটি টাকা ‘হাওয়া’, বিএসইসির নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ ◈ আবেগঘন মুহূর্ত: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের শিশুপুত্রের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারকে সাবধান করে কড়া বার্তা দিলেন হাসনাত ◈ রেকর্ড দামের পর স্বর্ণের বড় দরপতন ◈ আ. লীগের এমপি-মন্ত্রীদের জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ কারাগার! (ভিডিও) ◈ দেড় হাজার স্কুলকে বিশাল সুখবর দিল সরকার ◈ ২০২৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ, ১২ জুন প্রথম ম্যাচ ◈ এবার ভারতে ব্লক করা হলো পা‌কিস্তানী ক্রীড়া‌বিদ আরশাদ নাদিমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০২৫, ০২:১৫ দুপুর
আপডেট : ০১ মে, ২০২৫, ০৮:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাতিল হচ্ছে দেড়শ বছরের আইন: জুয়ার শাস্তি বাড়ছে ২ হাজার গুণ

দেড়শ বছর পুরোনো ‘দ্য গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭’ বাতিল করে হালনাগাদ তথ্যপ্রযুক্তির চিন্তা মাথায় রেখে ‘জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন অধ্যাদেশে শাস্তির পরিমাণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। অনলাইন অ্যাপ ও সাইটে পরিচালিত জুয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পুরোনো আইনে অনলাইন জুয়ার প্রসঙ্গ ছিল না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে শাস্তি একেবারেই কম। অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাস কারাদণ্ড। আর সর্বোচ্চ জরিমানা ৬০০ টাকা। ফলে আইনটি বাতিল করে অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করার জন্য পুরোপুরি নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করে ভেটিংয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষে অনুমোদনের জন্য শিগগির উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।

অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন চক্রে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনলাইন জুয়ার প্রকোপ থামাতে পারছে না। আইনে জেল-জরিমানা যৎসামান্য হওয়ায় জুয়াড়িরা গ্রেপ্তার হলেও সহজেই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। নতুন অধ্যাদেশে ম্যাচ ফিক্সিং (পাতানো খেলা) ও স্পট ফিক্সিংয়ের অপরাধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লটারির মাধ্যমে জুয়াকেও অধ্যাদেশে প্রাধান্য দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া হাউজি খেলা ও বেটিং বা বাজি ধরার মাধ্যমে জুয়া খেলাও অধ্যাদেশে গুরুত্ব পেয়েছে। এসব জুয়া নিয়ে বিদ্যমান আইনে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই। অধ্যাদেশ কার্যকর হলে জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার। গ্রেপ্তারের পর তারা সহজে ছাড় পাবে না।

অধ্যাদেশে বলা আছে, এ আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ‘নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ’ অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুয়া, অনলাইন জুয়া বা পাতানো খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরের বা বাইরের যে কোনো ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা অন্য কোনো অনলাইন প্ল্যাটফরম অথবা কোনো বিজ্ঞাপন বা প্রচারমূলক বিষয়ের প্রচার বন্ধ বা নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিতে পারবে।

অধ্যাদেশে বলা আছে, কেউ ‘আর্থিক ঝুঁকিপূর্ণ খেলার’ অপরাধ করলে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে কেউ ঘোড়দৌড় বা ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই জাতীয় লড়াই আয়োজন করলে প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী তাকে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। ‘দূরবর্তী জুয়া’ ও ‘অনলাইন জুয়ার’ অপরাধে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বাজি ধরার অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান করেছে সরকার। পাতানো খেলা বা ম্যাচ ফিক্সিং এবং ‘স্পট ফিক্সিংয়ের’ অপরাধ করলে অনধিক ৩ তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

কোনো ব্যক্তি লটারির অপরাধ করলে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। লটারির শর্তভঙ্গ করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকছে অধ্যাদেশে। হাউজি খেলা কিংবা আয়োজন করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ। আর হাউজির শর্তভঙ্গে অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড গুনতে হবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যে স্থানে জুয়ার আয়োজন করা হবে, সেই জায়গার মালিক কিংবা নিয়ন্ত্রককে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। বাজিকর হিসেবে কোনো ব্যক্তি কাজ করলে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। জুয়ার আসরে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসারের কাছে ধরা পড়ার পর নাম-ঠিকানা জানাতে অস্বীকার করলে অথবা মিথ্যা তথ্য দিলে অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে, অনলাইনে কিংবা যে কোনো মাধ্যমে জুয়ার তথ্য প্রচার করলে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডের মুখে পড়বেন। অধ্যাদেশের নির্দেশ বা বিধি লঙ্ঘন করে অপরাধের চেষ্টা করলে তার শাস্তি হবে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। একবার দণ্ডভোগের পর কেউ ফের সেই অপরাধ করলে তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ড দেওয়া যাবে।

অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত জরিমানা ও কারাদণ্ড প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব কালবেলাকে বলেন, নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণ ঠিকই আছে। তবে এ শাস্তি কার্যকর করার ওপরই আইনের সফলতা নির্ভর করবে। অর্থাৎ আইনের প্রায়োগিক দিকটি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে জুয়া কিংবা অন্যান্য অপরাধ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এসব অপরাধ ও অনলাইন জুয়া মনিটরিংয়ের জন্য সরকারকে একটা বিশেষ সেল তৈরি করতে হবে। এ সেল থেকে অপরাধ মনিটরিং করে সেগুলো সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। তাহলে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। উৎস: কালবেলা

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়